সাকিবকে নিয়ে এ জোরাজুরি কেন?
৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮সবশেষ ওয়েষ্ট ইন্ডিজ সফরে যেতে চাননি সাকিব৷ সেখানেও অনেকটা জোর করে তাঁকে পাঠানো হয়৷ হাতের আঙুলে যে ইনজুরি আছে, সেটাতে ব্যাথানাশক ইনজেকশন দিয়ে তাঁকে খেলতে হয়েছিল৷ এবারও একইভাবে তাঁকে খেলতে হবে৷ এশিয়া কাপের পরই তিনি অপারেশন করাবেন৷ সেভাবেই বিসিবি থেকে নির্দেশনা এসেছে৷ এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক– সাকিবকে নিয়ে এত জোরাজুরি কেন? তাঁর কাছ থেকে সাময়িক সার্ভিসের চেয়ে তো দীর্ঘমেয়াদি সার্ভিস পাওয়াটাই জরুরি৷
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি)'র মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস সাকিবের ফিটনেস সম্পর্কে ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘আমরা যতদূর জানি, সাকিব ওর ইনজুরি নিয়ে কোনো কথা বলেনি৷ ও যেটা বলেছে সেটা হচ্ছে, তার ফিটনেস, মানে ও যেহেতু অনেকদিন খেলার মধ্যে নেই, তাই ওর শারীরিক ফিটনেসের কথা বলছে৷ সুতরাং সে দুবাই যাবে৷ ৯ সেপ্টেম্বর মাশরাফিদের পৌঁছানোর আগেই সাকিবের দুবাই পৌঁছানোর কথা রয়েছে৷ আর তার বিকল্প হিসেবে তো মোমিনুলও যাচ্ছে৷ দলটা এখন ১৬ সদস্যের হচ্ছে৷’’
জানা গেছে, এই বিতর্কের মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিসিবিকে ই- মেল পাঠিয়ে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন সাকিব৷ সেখানে তিনি দাবি করেছেন, নিজের ফিটনেস নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলেও ব্যাটিং-বোলিং করতে পারবেন না, এমন কথা তিনি বলেননি৷ এমনকি সাক্ষাৎকারটিকেও বলেছেন ‘হালকা কথোপকথন’৷
গত জানুয়ারিতে পাওয়া আঙুলের ব্যথা বয়ে বেড়াচ্ছেন সাকিব৷ আঙুলে ব্যথানাশক ইনজেকশন নিয়ে আফগান সিরিজ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে খেলেছেন তিনি৷ তারপর দেশে ফিরে এশিয়া কাপের আগেই অস্ত্রোপচার করানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন, যদিও শেষ পর্যন্ত বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের চাওয়া অনুযায়ী এশিয়া কাপ খেলেই অস্ত্রোপচারে সম্মত হয়েছেন বাংলাদেশের টেষ্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক৷ অস্ত্রোপচার ইস্যু সেখানেই সমাধান হয়ে গিয়েছিল৷ কিন্তু ফিটনেস নিয়ে তাঁর মন্তব্যে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক৷
সাকিবের ফিটনেসের কথা ভেবে অবশ্য এর আগেই এশিয়া কাপের ১৫ সদস্যের দলের সঙ্গে ১৬তম সদস্য হিসেবে যোগ করা হয় মোমিনুল হককে৷ অর্থাৎ, সাকিব দলের সঙ্গে যাচ্ছেন, থাকবেন মোমিনুলও৷ জালাল ইউনুস বলেন, ‘‘সাকিব যদি এশিয়া কাপে যেতে চায়, আমরা বাধা দেব না৷ কিন্তু ২০-৩০ ভাগ ফিট মানে সে খেলার মতো অবস্থায় নেই, আনফিট৷ তার খেলা উচিত হবে না৷ দলের সঙ্গে তাই ১৬তম সদস্য হিসেবে মোমিনুল হককে পাঠানো হচ্ছে৷’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘সাকিব আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তবে তাকে খেলতে বাধ্য করা হবে না৷ আসলে সাকিব দলের সঙ্গে থাকলে ৪০ ভাগ মনোবল এমনিতেই প্লেয়ারদের বেড়ে যায়৷’’
বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জাতীয় দলের কোচ স্টিভ রোডস দাবি করেন, সাকিবের কথাটাই ছিল ভুল, ‘‘আমি বিশ্বাস করি না সে মাত্র ২০-৩০ ভাগ ফিট৷ আমার মনে হয় ও এর চেয়েও অনেক বেশি ফিট৷’’ কোচের এমন ভাবনার পেছনে কাজ করছে ওয়েস্ট ইন্ডিজে সাকিবের পারফরম্যান্স৷ এই চোট নিয়েই তো জুলাই-আগষ্টের সফরে দারুণ খেলে এলেন সাকিব! দলের সঙ্গে তার অনুশীলন না করাতেও কোনো সমস্যা দেখছেন না কোচ৷ জালাল ইউসুন বলেন, ‘‘সাকিবের সঙ্গে কোচের কথা হয়েছে, সে কারণে কোচ এসব বলেছেন৷’’
ক্রীড়া সাংবাদিক দেবব্রত মুখোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘২০-৩০ ভাগ ফিট একজন খেলোয়ারকে কিভাবে দলে রাখা হলো সেটাই তো এখন বড় বিস্ময়৷ তাঁর সঙ্গে কি তাহলে আগে বোর্ড থেকে কথা বলা হয়নি৷ আর সাকিবের এই তথ্য আমারও বিশ্বাস হয় না৷ একজন প্লেয়ার ২০-৩০ ভাগ ফিট থাকার অর্থ তাঁকে হাসপাতালে থাকার মতো অবস্থা৷ সে কারণেই বলছি, সাকিব ঠিক বলেননি৷’’ সাকিব বারবারই খেলতে চাচ্ছেন না৷ আগের টুর্নামেন্টও খেলতে চাননি৷ তাহলে তাঁকে জোর করা হচ্ছে কেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আসলে সাকিব আমাদের দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্লেয়ার৷ তিনি না খেললে দুই জনকে খেলাতে হয়৷ তবে আমি মনে করি, তিনি খেলতে না চাইলে জোর করে খেলানো উচিত না৷ তাঁর কাছ থেকে দেশের এখনো অনেক কিছু পাওয়ার আছে৷’’ এ নিয়ে কোনো ধরনের প্যাকটিস না করেই তিনটি টুর্নামেন্ট খেলতে যাচ্ছেন সাকিব? কেন তাঁকে এই সুযোগ বারবার দেয়া হচ্ছে? জবাবে দেবব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্র্যাকটিস না করা সাকিবের সমস্যা৷ এতে তাঁরই ক্ষতি৷ এভাবে চলতে থাকলে তিনি নিজেই এক সময় আর খেলতে পারবেন না৷ আসলে শেষ কথা হলো, তিনি আমাদের খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্লেয়ার, তিনি অনেকদিন খেলুন, এটা আমরাও চাই৷’’
সাকিব পুরোপুরি ফিট নন, এটাও মানছেন কোচ৷ তিনি বলেছেন, ‘‘সে পুরোপুরি ফিট নয়৷ কিন্তু ক্যারিবিয়ানে সে যেমন খেলেছে তেমনটাই যদি খেলতে পারে, তাহলে সেটি বাংলাদেশের জন্য বিশাল সম্পদে পরিণত হবে৷ এই ছেলেটি অপূর্ব একজন ক্রিকেটার৷ যদি সাকিব ৬০-৭০ ভাগ ফিট হয়ে থাকে, তাহলেই তাঁর কাছ থেকে দল অনেক কিছুই পেয়ে যাবে৷’’