সাগরে জাপানি বর্জ্য, চীন, কোরিয়ায় প্রতিবাদ
ফুকুশিমা নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টের বর্জ্য পানি প্রশান্ত মহাসাগরে ছাড়ার সিদ্ধান্তের পর থেকেই চলছে প্রতিবাদ৷ সেই প্রতিবাদে কান দেয়নি জাপান৷ ইতিমধ্যে সাগরে মিশতে শুরু করেছে তেজষ্ক্রিয় পানি৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
সেই ফুকুশিমা
২০১১ সালের ১১ মার্চ ভূমিকম্প থেকে সৃষ্ট ভয়ঙ্কর এক সুনামিতে ধ্বংস হয়ে যায় জাপানের ফুকুশিমা দালিচি পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র৷ পরিণামে তেজষ্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পরে ফুকুশিমাসহ আশপাশের এলাকায়, দেখা দেয় পরিবেশ-বিপর্যয়৷
বিষাক্ত পানি ছাড়ায় জাতিসংঘের অনুমোদন
ফুকুশিমা পারমাণবিক কেন্দ্র বিস্ফোরিত হলে ১৮ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়৷ এখনো সেখানে স্বাভাবিক পরিবেশ ফেরেনি৷ এরই মাঝে পরিবেশের জন্য নতুন হুমকি তৈরি করতে চলেছে ফুকুশিমার বর্জ্য পানি৷ দু বছর আগে ফুকুশিমার বর্জ্য পানি সাগরে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জাপান সরকার৷ গতমাসে তাতে অনুমেদান দেয় জাতিসংঘ৷ আজ (২৪ আগস্ট, ২০২৩) তাই প্রশান্ত মহাসাগরে ফুকুশিমার বিষাক্ত পানি ছাড়তে শুরু করেছে জাপান৷
দিকে দিকে প্রতিবাদ
জাপান সাগরে তেজষ্ক্রিয় পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর থেকেই চলছে প্রতিবাদ৷ সবচেয়ে কড়া প্রতিবাদ আসে চীন আর দক্ষিণ কোরিয়া থেকে৷ দুই দেশের পরিবেশ আন্দোলনকর্মীরা তো বটেই, এমনকি রাজনৈতিক দল এবং অধিকার সংগঠনগুলোও জাপানের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সোচ্চার৷ ওপরে ১২ আগস্ট দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সৌলে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশের ছবি৷
চীনের প্রতিক্রিয়া
সাগরে জাপানের তেজষ্ক্রিয় পানি ছাড়ার সিদ্ধান্তকে ‘স্বার্থপরতা’ হিসেবে দেখে আসছে চীন৷ চীন সরকার মনে করে, নিজেদের সুবিধার বিপরীতে কারো অসুবিধা, ক্ষতি ইত্যাদি দেখতে অপারগ বলেই এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে জাপান৷ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘‘ স্বার্থপরের মতো শুধু নিজেদের স্বার্থ দেখতে গিয়ে জাপানের কখনোই স্থানীয় এবং বিশ্বের মানুষদের ক্ষতি করা উচিত হবে না৷’’
জাপানেও বিক্ষোভ
ফুকুশিমা পারমাণবিক কেন্দ্রের বর্জ্য পানি প্রশান্ত মহাসাগরে ছাড়ার সিদ্ধান্তে জাপানের জেলেরাও ক্ষুব্ধ, উদ্বিগ্ন৷ সাগরে বর্জ্য পানি ছাড়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই সোচ্চার তারা৷ জাপানের জেলেরা মনে করেন, ফুকুশিমা বিপর্যয়ের কারণে এমনিতেই সারা বিশ্বে তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে, মাছ রপ্তানি কমেছে, প্রশান্ত মহাসাগরে বর্জ পানি ছাড়া হলে তাদের মাছ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞাও আসতে পারে৷
দক্ষিণ কোরিয়ায় সামুদ্রিক মাছের চাহিদা কমেছে
গত মাসে পোলস্টার মিডিয়া রিসার্চের করা এক সমীক্ষায় দেখা যায়, দক্ষিণ কোরিয়ার ৬২ মানুষ মনে করেন, সি-ফুড খাওয়া এখন কমাতে হবে৷ দক্ষিণ কোরিয়া সরকার ইতিমধ্যে জানিয়েছে, জাপানের ছাড়া বর্জ্য পানিতে সাগরের পানি দূষিত হচ্ছে কিনা তা নিয়মিত পরীক্ষা করে দেখা হবে- তা সত্ত্বেও এত মানুষের সামুদ্রিক খাবার থেকে মুখ ফেরানো নিঃসন্দেহে দুঃশ্চিন্তার৷
জাপানের দাবি
প্রতিবাদ, বিক্ষোভ সত্ত্বেও জাপান অনড়৷ চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সাগরে বর্জ্য পানি ছাড়ার বিষয়টিকে পরিবেশের জন্য হুমকি মনে করলেও জাপান বলেছে, ‘‘ এমন দাবির বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই৷’’ জাপানের দাবি, পানি ছাড়া শুরুর পর পরীক্ষা করে দেখেছে, সাগরের পরিবেশ আগের মতোই আছে৷
দক্ষিণ কোরিয়ায় নিষেধাজ্ঞা
এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী হান দুক-সু জানিয়েছেন, জনমন থেকে সকল আশঙ্কা দূর না হওয়া পর্যন্ত ফুকুশিমার ফিশারিজের সব মাছ এবং সি-ফুড আমদানি বন্ধ থাকবে৷
বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার
দক্ষিণ কোরিয়ায় বিক্ষোভের ঢেউ রাজধানী সৌলে অবস্থিত জাপান দূতাবাস পর্যন্ত পৌঁছে যায়৷ বিক্ষোভকারীরা দূতাবাসে ঢুকে পড়লে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷