নির্বাচনে দাঙ্গার প্রভাব
১৪ জানুয়ারি ২০১৪পশ্চিম উত্তর প্রদেশের মুজফ্ফরনগর ও তার আশেপাশের জেলাগুলিতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর আবার মাথা তুলেছে সাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদকে ঘিরে বিতর্ক৷ আঙুল তোলে হচ্ছে একে অপরের বিরুদ্ধে৷ ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধর্মীয় মেরুকরণের ফায়দা তুলতে ময়দানে নেমে পড়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলি৷ তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ শিবির তোপ দেগেছে বিজেপিলালিত হিন্দুত্ববাদী গৈরিক সেনাদের দিকে৷ কংগ্রেস দায়ী করছে উত্তর প্রদেশের শাসকদল সমাজবাদী পার্টিকে৷ কংগ্রেসের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকার সতর্ক করে দেয়া সত্ত্বেও সমাজবাদী সরকার দাঙ্গা রোধে যথেষ্ট ব্যবস্থা নেয়নি৷ তাই এবার, এর ফায়দা তুলবে মায়াবতির দলিত পার্টি বিএসপি, এমনটাই মনে করেন জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপিকা সুধা পাই৷
কীভাবে? পশ্চিম উত্তর প্রদেশে হিন্দু জাঠ আর মুসলিমদের মধ্যে সৌহার্দ দীর্ঘদিনের৷ সেই জাঠ সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট নেতা ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী চরণ সিং-এর আমল থেকে৷ প্রশ্ন হলো, এক দশকের এই সুসম্পর্ক নষ্ট করে কেন জাঠ-মুসলিম সম্প্রদায় রাজনৈতিক দলগুলিকে ফায়দা তোলার সুযোগ দিল? তাঁর মতে, এর অন্তর্নিহিত কারণ হলো অর্থনৈতিক রেষারেষি৷ স্রেফ ধর্মীয় আত্মপরিচয়ের রাজনীতি নয়৷
পশ্চিম উত্তর প্রদেশে বেশিরভাগ জমি জাঠদের দখলে এবং মুজফ্ফরনগর ও তার লাগোয়া অঞ্চলের চিনি শিল্পে জাঠ সম্প্রদায়ের আধিপত্য বেশি৷ কিন্তু ধীরের ধীরে চিনি শিল্পের অবস্থা খারাপের দিকে যায়৷ মন্দা দেখা দেয় জাঠদের আর্থিক অবস্থায়৷ ভারতীয় আখ চাষি সংগঠনের অভিযোগ, এর কারণ সরকারের প্রতিকূল আখ চাষ নীতি৷ রাজ্যের চিনি শিল্পে আর্থিক লোকসানের বহর বছরে তিন হাজার কোটি টাকা৷ আখের দাম ২০০৫ সালের কুইন্টাল প্রতি ১১৫ টাকা থেকে বেড়ে ২০১০ সালে ১৬৫ টাকা হলেও আখ চাষিদের তাতে লাভ হয়নি চিনি মিলগুলি ঠিকমতো না চলায়৷ পাশাপাশি মুসলিমদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হতে থাকে ঐ এলাকায়৷ বিশেষ করে নির্মাণ শিল্পে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা মেটায় মূলত মুসলিমরা৷ এছাড়া ফল বাগিচা, অটোমোবাইল ও ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পে দক্ষ মুসলিম শ্রমিকরা অনেক এগিয়ে৷ এই অর্থনৈতিক ব্যবধানে জন্ম নেয় রেষারেষি৷ তাই এটাকে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ বলতে নারাজ আগ্রা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিদ্যার অধ্যাপক এস. পান্ডে৷ গ্রামীণ অর্থনীতির পরিবর্তন থেকে শুরু হয় প্রতিযোগিতার লড়াই৷ সরকারের কাছ থেকে চাকরি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পেতে জাঠরা নিজেদের অন্যান্য অনুন্নত শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানাতে থাকে যেটা এক দশক আগে জাঠরা ভাবতে পারতো না৷ অর্থনৈতিক সংঘাত থেকেই শুরু হিংসা৷ সবুজ বিপ্লবে জাঠদের ছিল অগ্রণী ভূমিকা ৷
১৯৮৭ সালে চরণ সিং-এর মৃত্যুর পর জাঠ-মুসলিম আতাঁতে ভাটা পড়তে শুরু করে৷ তাতে ইন্ধন জোগায় চরণ সিং-এর ছেলে রাষ্ট্রীয় লোকদলের নেতা অজিত সিং এবং সমাজবাদী নেতা মুলায়েম সিং-এর উস্কানিমূলক ভাষণ৷ অন্যদিকে পশ্চিম উত্তর প্রদেশের ১২টি জেলার ৭৭টি বিধানসভা আসনে জনসংখ্যার দিক থেকে মুসলিম সম্প্রদায় ভারি, প্রায় ৩৩ শতাংশ৷ ৭৭টি বিধানসভার আসনের মধ্যে ২০১২ সালের ভোটে ২৬টি আসন গেছে মুসলিম প্রার্থীদের ঝুলিতে৷ সুতরাং, ধর্মীয় মেরুকরণে কোনো দলেরই লাভ হবে না৷ সবাই চায় নিরাপত্তা৷ ঐ দাঙ্গায় মারা যায় জনা পঞ্চাশেক, গৃহহারা হয় প্রায় ৫০ হাজার পরিবার৷ এইসব পরিবারদের পুনর্বাসন নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনীতির আরেক রংখেলা৷