‘আরো বেশি দুর্দিন আসছে’
২৯ জুলাই ২০১৩সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের পর গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর হামলার যে দুটি ঘটনা সবচেয়ে বেশি আলোড়ন সৃষ্টি করেছে সেগুলোর পরিণাম এ পর্যন্ত একেবারে দু রকম৷ আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি ইনডেপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের দুজন সাংবাদিককে পেটানোর অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন৷ ঘটনার প্রতিবাদ এবং সাংসদ রনির কঠোর শাস্তি দাবিতে গণমাধ্যমের সোচ্চার হওয়া এবং সরকারের পদক্ষেপ- দুটি দিকই সংবাদকর্মীদের প্রায় শূন্যের দিকে নামতে থাকা নিরাপত্তাবোধকে বাড়িয়ে দেয়ার মতো৷ কিন্তু নাদিয়া শারমিন সাংসদ রনির বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে দেখার পরও বাংলাদেশে সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী হতে পারছেন না৷
গত ৬ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে হামলার শিকার হতে হয়েছিল নাদিয়া শারমিনকে৷ গোলাম মাওলা রনির সাংবাদিককে লাথি মারার দৃশ্যের মতো নাদিয়াকে হেফাজত কর্মীদের ধাওয়া করে মারার দৃশ্যও দেখানো হয়েছিল দেশের প্রায় সব টিভি চ্যানেলে৷ তাৎক্ষণিকভাবে দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছিলেন অনেকেই৷ শারমিন আহত হবার পর দোষীদের বিরুদ্ধে করা মামলার মতো রনির বিরুদ্ধে মামলাটিও হয়েছিল শাহবাগ থানায়৷ কিন্তু দুটি মামলার অবস্থা দুরকম৷ শুধু নারী হওয়ার ‘অপরাধে' হামলার শিকার হওয়া নাদিয়া শারমিন ডয়চে ভেলেকে দেয়া এ সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, এতদিনে আসামীদের ধরার কোনো উদ্যোগই নেয়নি শাহবাগ থানা৷
নাদিয়া শারমিনের বেলায় পুলিশ নীরব৷ সাংবাদিক নেত্রীবৃন্দও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার পর থেকে নিষ্ক্রিয়৷ ঘটনার পরপর যে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ হয়েছিল তা প্রায় ভুলে যাওয়া অতীত৷ অথচ ক'দিন আগে আরেকটা অস্ত্রোপচার হয়েছে পায়ে, তাই এখনো হাঁটতে পারেননা নাদিয়া৷ গত ৯ এপ্রিল হামলার শিকার হওয়ার পর চিকিৎসারত অবস্থায় দেয়া সাক্ষাৎকারে ডয়চে ভেলেকে খুব আত্মবিশ্বাস নিয়ে নাদিয়া জানিয়েছিলেন, সেরে ওঠার পর হেফাজতে ইসলাম কোনো সমাবেশ করলে আবার তিনি সাংবাদিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে সেখানে যাবেন, ভয়ে দূরে থাকবেন না৷ নিজের অবস্থানে দৃঢ় হলেও সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী নন একুশে টেলিভিশনের এই তরুণ সাংবাদিক৷ হেফাজতে ইসলামীর দুটি কর্মসূচিতে সারা দেশে ৫০ জনের মতো সাংবাদিককে প্রহার করা হয়েছে- এ তথ্য জানিয়ে নাদিয়া বললেন, ‘‘সামনে সাংবাদিকদের আরো বেশি দুর্দিন আসছে৷ (হেফাজতের) সামনের কর্মসূচিগুলোতে আরো অনেক সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হবে৷''
আর দশটি পেশার মতো বাংলাদেশে সাংবাদিকদেরও সমালোচনা আছে৷ তাই বলে কয়েকজন সাংবাদিক বা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের জন্য দেশের ইতিহাসের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে সাংবাদিকদের অবদানের কথা ভুললে কি চলে? সাংবাদিকের জীবনের নিরাপত্তা, নিরাপদ কর্মজীবনের নিশ্চয়তার দাবিকে গুরুত্ব না দিলে সেটা কি বর্তমান বা ভবিষ্যতের কোনো সরকার কিংবা দেশের সাধারণ কোনো মানুষের জন্যও সুদিন বয়ে আনবে? নাদিয়া শারমিন তা মনে করেন না৷ তাই সাংবাদিক নেত্রীবৃন্দ থেকে শুরু করে দেশের প্রধান দুই দলের নেত্রীকেও দেশের স্বার্থেই হামলার শিকার সব সংবাদকর্মীর পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি৷
এ সাক্ষাৎকারে চিকিৎসার অগ্রগতি এবং খরচ সম্পর্কেও জানতে চাওয়া হয়েছিল৷ জবাবে প্রসঙ্গক্রমে নাদিয়া শারমিন জানান হেফাজতে ইসলামী কর্মীদের হামলার শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হবার পর থেকে তাঁর কর্মস্থল একুশে টেলিভিশন তাঁকে বেতন এবং চিকিৎসার খরচ হিসেবে কিছুই দেয়নি৷ এ বিষয়ে একুশে টেলিভিশন কর্তৃপক্ষের বক্তব্যও জানতে চাওয়া হয়েছিল৷ বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলটির চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম সংক্ষিপ্ত এক টেলিফোন সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, ৬ এপ্রিল হামলার শিকার হওয়ার পর নাদিয়া শারমিনকে হাসপাতালে ভর্তি করা থেকে শুরু করে চিকিৎসার সমস্ত খরচ দিয়ে সুস্থ করে তোলা পর্যন্ত সকল দায়িত্ব পালন করেছে একুশে টেলিভিশন৷ তারপর থেকে নাদিয়া তাঁর কর্মস্থলের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি বলেও দাবি করেছেন আব্দুস সালাম৷
সাক্ষাৎকার ও প্রতিবেদন: আশীষ চক্রবর্ত্তী
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন