1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘সামর্থ্যের জায়গায় বাংলাদেশ এখনো অনেক পিছিয়ে'

সামীউর রহমান ঢাকা
২৪ মে ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সিরিজ হার কি স্রেফ আপসেট? টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কি দুর্দান্ত কিছু করতে পারবে নাজমুল হাসান শান্তর দল? এ মুহূর্তে অতটা আশাবাদী হতে পারছেন না জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার ও প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ৷

https://p.dw.com/p/4gDxI
খেলা শেষে বাংলাদেশ জাতীয় দলের খেলায়াড়েরা হাত মেলাচ্ছেন নিউজিল্যান্ডের খেলোয়াড়দের সঙ্গে
টি-টোয়েন্টি সংস্করণে বাংলাদেশ জাতীয় দলকে নিয়ে খুব একটা আশা দেখছেন না বিশ্লেষকেরাছবি: Kerry Marshall/Getty Images

ডয়চে ভেলে: আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য ঘোষিত বাংলাদেশ দল কেমন হয়েছে? দলটির কাছে আপনার প্রত্যাশা কী?

ফারুক আহমেদ: দলটা আমার মনে হয় গত দুই-তিন বছরের মধ্যে, আমি বলবো না যে সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ, তবে বৈচিত্র্য আছে দলের মধ্যে। আমি খেলোয়াড়, অধিনায়ক এবং প্রধান নির্বাচক; তিন ভূমিকাতেই সবসময় চিন্তা করে এসেছি দলের মধ্যে যেন বৈচিত্র্য থাকে। বিকল্প যত বেশি, সেই দলের ভালো করার সম্ভাবনা তত বেশি। সেই দিক বিবেচনা করলে আমাদের এবারের দলটা বেশ ভারসাম্যপূর্ণ। এখন এই দলটা কেমন করবে, সেটা নির্ভর করবে আমাদের খেলোয়াড়দের পারফর্ম্যান্সের উপর। তার সঙ্গে নির্ভর করবে প্রতিপক্ষের শক্তি ও দূর্বলতাও। তবে বাংলাদেশের যে সবশেষ কয়েকটা আইসিসি টুর্নামেন্ট ছিল, সবগুলোতেই কিন্তু খুবই হতাশাজনক পারফর্ম্যান্স। আরব আমিরাতের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে (২০২১), সবশেষ ২০২৩ বিশ্বকাপ; এই সব জায়গাতেই আমরা দেখেছি দল নির্বাচন থেকে শুরু করে সেরা একাদশ বাছাই করতে খুবই আজগুবি কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা। এটা উদাহরণ দিয়ে বললে ভালো হবে, যেমন আমরা দেখেছি ইনিংসের সূচনায় ছিল নতুন একটা ছেলে; (তানজিদ হাসান) তামিম। তরুণ খেলোয়াড়, প্রতিভাবান কিন্তু তার কোনো ব্যাকআপ ছিল না দলে। ছেলেটা রান করছিল না করছিল না, অথচ ৯টা ম্যাচই খেলতে হয়েছে। অন্যদিকে অফস্পিনার ২ জন, বামহাতি স্পিনার ২ জন, সিম বোলার বোধহয় ৪ জন না ৫ জন ছিল। সেই দলে কোনো ভারসাম্য ছিল না। এইগুলো বিবেচনা করলে মনে হয় এইবারের দলটা বেশ ভারসাম্যপূর্ণ। দলে অফস্পিনার আছে, ২ জন বাঁ-হাতি স্পিনার আছে, একজন লেগস্পিনার আছে রিশাদ, উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ৩ জন,মিডল অর্ডারে খেলার প্লেয়ার আছে; সব মিলিয়ে আমার কাছে মনে হয়েছে বর্তমান পরিস্থিতিতে দলটা একেবারে খারাপ হয়নি। তারপরও যেটা বলি, কিছু কিছু জিনিসের রেশ রেখে যেতে হয়।এখানে যেরকম সাইফউদ্দিনের না থাকাটা, বাম-হাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ একটা ভালো টুর্নামেন্ট কাটানোর পরও বিবেচনাতেই আসে না।এখনো মনে হয় এই দলটার মধ্যে বাংলাদেশের সেরা একাদশ গড়ার চাইতে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ কিছুটা কাজ করছে। কিছুটা কমেছে আগের চেয়ে হয়তবা, তবে এখনো উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ থাকে।সেগুলা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে, যদি আমরা সত্যিই একটা ভালো দল চাই, যারা একসঙ্গে খেলে আগামীতে ভালো করতে পারবে। তো আমি তো অবশ্যই আশা করবো বাংলাদেশ দল ভালো করুক। কারণ, আইসিসি ইভেন্টগুলোতে সবার নজর থাকে, যেটা দ্বিপাক্ষিক সিরিজে থাকে না। দলের উন্নতি,অগ্রগতি এসব সবার চোখে পড়ে। বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে অনেকের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে আসা সম্ভব। এবারে বিশ্বকাপটা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিলিয়ে হচ্ছে। কন্ডিশনটা কঠিন হতে পারে। বেশিরভাগই ড্রপ-ইন উইকেটে খেলা হবে যুক্তরাষ্ট্রে, খারাপ কথা না, তবে যতক্ষণ না পর্যন্ত উইকেট না দেখা হচ্ছে এবং উইকেটের আচরণ যাচাই না করা হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ধরে নিতে হবে কঠিন। সাইফউদ্দিনের অভাবটা টের পাওয়া যাবে, সে বেশ বুদ্ধিমান বোলার। টি-টোয়েন্টিতে এমন বোলার লাগবে, যার অস্ত্র অনেক; স্লোয়ার, ইয়র্কার, অফ কাটার করতে পারে। উইকেটের চরিত্রটা যদি ধীরগতির দিকে হয়, তাহলে এইরকম কারো অভাবটা টের পাওয়া যাবে। আমি আশা করি, বাংলাদেশ ভালো করবে, তবে কতটা ভালো করবে, সেটা নিশ্চিত নয়৷ তবে এটা বলতে পারি,প্রথম রাউন্ডটাই খুব জটিল হবে বাংলাদেশের জন্য। প্রথম রাউন্ডটা টপকাতে পারলে বাংলাদেশ দ্বিতীয় রাউন্ডে শ্রেয়তর ক্রিকেট খেলবে।

আমার সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা থাকলে হাথুরুসিংহেকে চাকরিচ্যুত করতাম: ফারুক আহমেদ

বিশ্বকাপের দলে তাসকিন আহমেদকে সহ-অধিনায়ক করা হয়েছে। তাসকিনের চোট আছে এবং বিশ্বকাপের প্রথম দিকে তাকে একাদশে পাওয়াটাও অনিশ্চিত। এই সিদ্ধান্তটা কি আপনাকে অবাক করেছে?

আসলে যদি আমি ওর বর্তমান চোটের ব্যাপারটা না ধরি, তাহলে বলবো, সিদ্ধান্তটা খারাপ না৷ ওকে সহ-অধিনায়ক করাটা খুব একটা খারাপ সিদ্ধান্ত না। তবে একজন নিজেই যখন নিশ্চিত না যে কবে থেকে খেলতে পারবে, দলকে কতটা দিতে পারবে; আমরা জানি যে, সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ম্যাচগুলো খেলতে পারবে না এবং এরপর সে ফিটনেসে কতটা ফিরে আসবে, সেটা আমরা জানি না। সে পুরোপুরি ফিট,দলের সঙ্গে যাচ্ছে সেক্ষেত্রে তাকে সহ-অধিনায়ক করাটাতে আমি দোষের কিছু দেখি না। কিন্তু যেহেতু তার খেলা নিয়ে শঙ্কা আছে, তাই যে পুরোপুরি ফিট তাকে সহ-অধিনায়ক করলেই ভালো হতো।বোর্ড হয়ত অন্যরকম ভেবেছে, একজন ভবিষ্যৎ নেতাকে বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দিতে চেয়েছে। যেহেতু (মেহেদি হাসান) মিরাজ নেই,মনে করেছে তাসকিনই সেরা বিকল্প। আমার কাছে মনে হয়েছে এটা খুব একটা ভালো সিদ্ধান্ত মনে হয়নি৷

মেহেদি হাসান মিরাজকে ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে মনে হলো দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। পরের বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মিরাজ দলেই নেই। এত ঘনঘন পরিবর্তন কেন দলে?

এই ক্ষেত্রে আমার উত্তরটা হবে ৫০-৫০। আমি আসলে যেভাবে ভাবি বা দল বাছাইয়ের যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করতাম, সেটা হচ্ছে,আমি খুব সুনির্দিষ্ট। ধরে নেই, মিরাজের সব গুণ আছে, অবশ্যই টেস্ট এবং ওয়ানডেতে সেই সেরা বিকল্প। তবে টি-টোয়েন্টির বেলায় যখন শেখ মেহেদি এসেছে, তখন টিম ম্যানেজমেন্ট চিন্তা করেছে কে টি-টোয়েন্টিতে শ্রেয়তর বোলার। মিরাজ অন্য দুই সংস্করণে যতটা কার্যকর, টি-টোয়েন্টিতে ততটা না। শেখ মেহেদি ওর চেয়ে ভাল বোলার টি-টোয়েন্টিতে কারণ সে পাওয়ার প্লে'তে ভালো বল করতে পারে, যেটা সে প্রমাণ করেছে আর শেষের দিকে ব্যাটিংয়েও ওর (মিরাজ) চেয়ে একটু জোরে মারতে পারে।

গত চার বছরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হয়েছে ৩টি। ২০২১, ২০২২ ও ২০২৪। এই তিন আসরে বাংলাদেশ দলের চেহারা তিন রকম। কেউ সবশেষ আসরে সহ-অধিনায়ক অথচ এবার দলেই নেই। যে এক আসরে অধিনায়ক, পরের বছর দলেই তার জায়গা হয় না।অথচ ভালো দলগুলোতে মূল খেলোয়াড়রা কম-বেশি একই থাকেন, পরিবর্তন হয় খুব সামান্য। আপনার চোখে এই অস্থিরতার কারণ কী?

প্রথম কথা হচ্ছে এটা অবশ্যই দূরদৃষ্টির অভাব। আর আমাদের দলটা দেখলেই মনে হয়, এখানে নির্বাচক কমিটি দুই, তিন জনের না, খুব সম্ভবত ১০-১২ জন নির্বাচক। তখন হয় কি, কোটার ভিত্তিতে সব কিছু এসে যায়। ধরা যাক ক্রিকেট বোর্ডের খুব বড় কোনো কর্মকর্তা, সে একজন সুনির্দিষ্ট ক্রিকেটারকে নিয়ে বললো যে, অমুক আমার খুব পছন্দের, তাকে নেয়া দরকার। আবার ম্যানেজমেন্ট, সিলেকশন কমিটি মনে করে না এইটা হলে ভালো হয়। এজন্য হয় কি, বেশিরভাগ সময় আমরা দেখি যে দলটা একটু আজগুবি ধরনের হয়ে যায়। ৫০ ওভার বিশ্বকাপ, যেটা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট, ভারতে সেই আসরে খেলতে যাবার আগে যেসব সার্কাস আমরা দেখেছি, মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে তামিম ইকবালকে নিয়ে...এদিকে সাতটা আটটা বোলার, কোনো ব্যাটসম্যান নাই, মিডল অর্ডারে কোনো ব্যাটসম্যান নাই, একাদশে পরিবর্তন করার মতোও কোনো ব্যাটসম্যান নাই, তখন আবার দেশ থেকে দুই তিনজনকে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা হয়েছিল...এই সব কারণেই বলছি যে ৫০ ওভারের ক্রিকেটের দলটাকে আমরা কিন্তু খুব গুলিয়ে ফেলেছি। আমরা যে সুস্থির একট দল দেখতে চাই, আমার প্রধান নির্বাচক পদ ছেড়ে দেবার পর, ২০১৫-১৬ সালের পর থেকে এই ৮ বছরে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও একটা শক্তিশালী দল হয়ে ওঠা দরকার ছিল যারা হয়তো বা সেমিফাইনালে খেলতে পারে৷ তীব্র প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ ম্যাচ খেলতে পারে৷ এটা কিন্তু আমরা দেখি নাই। এসবের অন্যতম কারণ প্রতিটা আসরে দলে প্রচুর রদবদল। তার মানে হচ্ছে, কোনো দূরদৃষ্টি নিয়ে দলগুলো করা হয় নাই। হঠাৎ করে মনে হয়েছে ছেলেটাকে একটা সুযোগ দিয়ে দেখি, সে ভালো করতে পারে। এর সঙ্গে আমরা সংস্করণ বুঝে খেলোয়াড় বাছাই করতে পারিনি। আমরা বুঝিনি ৫০ ওভারে কোন ক্রিকেটারকে দরকার, ২০ ওভারে কোন ক্রিকেটারকে দরকার। আমি আশা করবো নতুন যে নির্বাচক কমিটি হয়েছে, তারা অন্তত ২ বছর কাজ করবে কোনো রকম বাইরের প্রভাব ছাড়া৷ আর তাদের সিদ্ধান্তগুলো যেন তারাই নেয়। দুই-একটা প্রভাব থাকবেই৷ তবে ১০-১২টাই যেন প্রভাবে না হয়।

টি-টোয়েন্টির বর্তমান বাস্তবতায় বাংলাদেশ কি রান করায় পিছিয়ে আছে? বাংলাদেশ কি পর্যাপ্ত রান করতে পারছে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে?

অনেক পিছনে আছে। আমাদের শক্তি আর আমাদের সামর্থ্য, এটা জানতে মহাকাশ বিজ্ঞানী হবার প্রয়োজন নেই৷ স্ট্রাইক রেট দেখুন ব্যাটসম্যানদের, কয় জন আছে দলে যার স্ট্রাইক-রেট ১২৫-এর উপরে। অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত,পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এসব দেশের ক্রিকেটারদের স্ট্রাইক রেট দেখুন আর তার সঙ্গে আমাদের ক্রিকেটারদের তুলনা করুন, দেখবেন বিশাল পার্থক্য। তবে যেহেতু সংক্ষিপ্ত সংস্করণের খেলা, নির্দিষ্ট দিনে বা নিজেদের দিনে ভালো খেললে...দেখা গেল শেষ পর্যন্ত এই ফরম্যাটটা ৪ টা ভালো ওভার, ব্যাটিংয়ে ৩টা ভালো ওভার এসবেই ব্যবধান হয়ে যায়। এভাবে দেখলে সুযোগ বেশি, তবে সামর্থ্যের জায়গায় এখনো অনেক পিছিয়ে।

বিশ্বে অনেক কোচই অনেক নতুন তত্ত্ব নিয়ে এসেছেন। বব উলমারকে বলা হতো ল্যাপটপ কোচ, ডেভ হোয়াটমোর শ্রীলঙ্কার ৯৬'র দলটায় পিঞ্চ হিটিং তত্ত্ব প্রয়োগ করেছিলেন, ব্রেন্ডন ম্যাককালামের বাজবল দেখছি। আপনার কাছে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের বৈশিষ্ট্য কী মনে হয়েছে? সে কী করতে চায় এই দলটাকে নিয়ে?

আমি হাথুরুসিংহে জিনিসটা আসলে বুঝি না। আসলে একটা মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতাও তো চিন্তা করতে হবে। সে কী করেছে কোচ হিসেবে, কিংবা খেলোয়াড় হিসেবে? আমরা এসব ব্যাপার ধর্তব্যে আনি না৷ কিন্তু এসব খুব গুরুত্বপূর্ণ। সে ছিল অস্ট্রেলিয়ার একটা রাজ্য দলের সহকারি কোচ। সে শ্রীলঙ্কা ছাড়া আর কোথাও কোচিং করায়নি, সেটাও হঠাৎ করে বাংলাদেশের চাকরি ছেড়ে চলে গেল। তার কিন্তু আন্তর্জাতিক কোচিং ক্যারিয়ার খুবই সংক্ষিপ্ত। যা দেখি যে, সাংবাদিক ঢুকতে দেয় না, ক্লোজডোর অনুশীলন করে, আমার কাছে এসবকে মনে হয়েছে স্টান্টবাজি।তার মধ্যে আমি খুব অসাধারণ কিছু দেখি না। একটা খেলোয়াড়ের টেকনিক নিয়ে কাজ করেছে, কিংবা ওর অধীনে এসে একজনের খেলা একদম পালটে গেছে- এরকম কিছু দেখি নাই। এটা আমি ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে খুব কাছ থেকে দেখেছি। তাকে সবসময় বলতে শুনতাম, 'আমরা ভবিষ্যতের জন্য দল বানাচ্ছি।'' এই ভবিষ্যতের জন্য দল বানানোটা ২০১৩ সাল থেকে চলে আসছে। ২০১৫ বিশ্বকাপে আমরা খুব ভালো করলাম, আমি ছিলাম প্রধান নির্বাচক আর সে কোচ। আমাদের খুব ভালো সময় কাটছিল, হঠাৎ করে আমাদের অকূল পাথারে ফেলে রেখে চলে গেল এবং আবার ফিরে এলো। এসে দুইটা আসরে খুব খারাপ করলো দল৷ তারপর বলছে আমরা সামনের দিকে তাকিয়ে আছি। তার চুক্তিটা খুব লোভনীয়, এটা ভুললে চলবে না। একটা মানুষ যদি না পারে, তাহলে তাকে যেতে দেয়াই ভালো। গত বিশ্বকাপে যেসব ঘটনা ঘটিয়েছে, আমার সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা থাকলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে চাকরিচ্যুত করতাম। আমার কথা হচ্ছে, তাকে উত্তর দিতে হবে। কী হয়েছে আমরা কিন্তু ওকে কোনো প্রশ্ন করিনি। আমরা ভেবেছি সামনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আছে, দেখি। এই সবই অজুহাত। আমি বলছি, সে ৪ বছর থাকবে, অনেক টাকা কামাবে এরপর চলে যাবে। প্রশাসক হিসেবে, গভর্নিং বডি হিসেবে ক্রিকেট বোর্ডের এই ব্যপারগুলো খতিয়ে দেখা দরকার। আমরা এত টাকা দিয়ে যে একটা কোচকে আনি আর যদি মূল্যায়ন না করি, সে কী করছে না করছে তার পর কিন্তু আমরা সব ভুলে যাই। সে তো আমাদের ওয়ানডে দলটাকে ১০০ ভাগ অস্থির করে তুলেছে। তামিম ইকবালকে বাদ দেয়া, মাহমুদউল্লাহকেও প্রায় বাদ দিয়েই দিয়েছিল, কোনো ট্যুরে খেলায়নি৷ শেষ পর্যন্ত নিতে বাধ্য হয়েছে বিশ্বকাপে আর সে-ই ছিল সেরা পারফর্মার। আমরা যদি তার কাছ থেকে এসবের জবাবদিহি না চাই, তাহলে সে ধরাকে সরা জ্ঞান করবে। আমরা দেখি যে বিপিএল চলে,সে অস্ট্রেলিয়া পরিবারের সঙ্গে সময় কাটায়, সে টিভিতেও নাকি দেখে না৷ তার নাকি বন্ধ করে দিতে ইচ্ছা করে...৷যদি প্রশিক্ষক হিসেবে আমার নিজের শিক্ষার্থীদের ওপর কোনো ভরসা না থাকে, তাহলে আমি তাদের কেন শেখাতে যাবো? তার তাহলে অন্য কোথাও যাওয়া উচিত। আমি হলে চিন্তা করতাম, ঠিক আছে এই দলটা যথেষ্ট ভালো না। এই দলের পেছনে সময় নষ্ট করে লাভ নাই। সে একদমই দায়বদ্ধ না। এতে কী মনে হয়, সে-ই সবকিছু চালাচ্ছে। হতে পারে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবকিছুই এখন সে চালাচ্ছে। এটা খুব দুঃখজনক। কর্মী যখন নিয়োগকর্তার চেয়ে বড় হয়ে ওঠে, তখন সেটা একটা বড় সমস্যা। কর্মী যদি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বড় ভাবে নিজেকে, তাহলে সেটা দুঃখজনক।

সাকিব আল হাসানকে জাতীয় দলে বেছে নিয়েছিলেন আপনি বা আপনার সময়ের নির্বাচক কমিটি। তার প্রথম কোনো বিশ্বকাপ খেলা ২০০৭ সালে, ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটা হয়তো তার শেষ বিশ্বকাপ। শেষ বিশ্বকাপে সাকিবের কাছে কি আশা করছেন?

আমি আসলে এই সংস্করণের বাংলাদেশ দল নিয়েই খুব একটা আশাবাদী নই। কারণ, এই সংস্করণটা আমাদের শক্তির জায়গা না। আমি আশা করছি সৌভাগ্য তার সঙ্গী হবে। যদি পেছনে ফিরে তাকান, তাহলে দেখবেন যে, মাঠের বাইরে তাকে ঘিরে অনেক বিতর্ক ছিল৷ কিন্তু মাঠে সে শতভাগ দিয়েছে। তার খেলার সামর্থ্য নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ সে বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রতীক হয়ে উঠেছে। আমি আশা করবো তার শেষটা ভালো হবে। এই বিশ্বকাপে আমি তার কাছ থেকে চাইবো যে, শুধু ব্যাটসম্যান বা বোলারের ভূমিকায় সীমাবদ্ধ না থেকে দলটাকে একতাবদ্ধ করার জন্য অধিনায়ককে অনেক সাহায্য করবে। সাকিবকে কেন্দ্র করে খেললে আমাদের দল কিছুটা ভালো করতে পারে। আমি আশা করবো এই বিশ্বকাপটাকেও সে যেন মনে রাখার মতো করে রাখতে পারে, ঠিক ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের মতো।