1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌সামাজিক দূরত্ব রেখেই রেস্তোরাঁয়!‌

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
১৭ এপ্রিল ২০২০

করোনা পরবর্তী সময়ের জন্যে তৈরি হচ্ছেন বড় রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা। কিন্তু দুশ্চিন্তায় মাথায় হাত ছোট রেস্তোরাঁর। অনেকেই ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার কথা ভাবছেন।

https://p.dw.com/p/3b4PT
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Sharma

করোনা লক ডাউনের কারণে হোটেল, রেস্তোরাঁ বন্ধ। সংক্রমণ ছড়ানোর ভয়ে খাবারের হোম ডেলিভারি নিতেও ভরসা পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। এই অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠেও যখন জীবন আবার স্বাভাবিক হবে, তখনও কি লোকে আগের মতো স্বচ্ছন্দে, স্বস্তিতে বাইরে দল বেঁধে খেতে যেতে পারবেন?‌

না, এখনই অতটা আশাবাদী হতে পারছেন না রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা। বরং মনে করছেন, করোনা পরবর্তী বিশ্বে মানুষের জীবনের ধরন-ধারণ বদলে যাবে। তারা অনেক বেশি সাবধানী হয়ে পড়বে। তার সঙ্গেই খাপ খাইয়ে নিতে হবে। কোনো উপায় নেই। কিন্তু কীভাবে?‌

কলকাতা শহরসহ গোটা ভারতের প্রথম সারির রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী, মোগলাই খানার জনপ্রিয় চেইন রেস্তোরাঁ ‘‌অওধ ১৫৯০'‌, এশীয় খাবারের জন্যে বিখ্যাত রেস্তোরাঁ চেইন ‘‌চাওম্যান'‌–এর কর্ণধার শিলাদিত্য চৌধুরী জানাচ্ছেন, ঠিক যেভাবে ব্যবধান রেখে, নিরাপদ দূরত্বে যাত্রী বসিয়ে বিমান পরিষেবা চালু করার কথা ভাবছে সরকার, সেভাবেই তাঁরাও রেস্তোরাঁর নকশা বদলানোর কথা ভাবছেন। শিলাদিত্যর কথায়, ‘‌‘‌আমরা সোশাল ডিস্টেন্সিং মেইনটেন করেও রেস্টুরেন্ট কীভাবে খোলা যায়, তার একটা পরিকল্পনা করছি। যেমন, একটা ছয় জনের টেবিলে আমরা তিন জনকে বসালাম। (‌যেভাবে এখন বিমানে বসার ব্যবস্থা হচ্ছে)‌, সেভাবে আমরা প্ল্যান করছি অলরেডি, প্ল্যান শুরুও করেছি। রেস্টুরেন্টের কিচেনটাকেও সেভাবে প্ল্যান করেছি। আর তো কোনো অপশন নেই।'‌'‌

সুনন্দ ব্যানার্জি

তবে সে তো ভবিষ্যতের কথা। লক ডাউন পুরোপুরি উঠে গিয়ে স্বাভাবিক জনজীবন ফের সক্রিয় হলে। কিন্তু তার আগের পরিস্থিতি বেশ খারাপ। পশ্চিমবঙ্গে নির্দিষ্ট লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছে, এমন নথিভুক্ত রেস্তোরাঁর সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার। যদি প্রতিটি রেস্তোরাঁয় গড়ে ৪০ জন কর্মচারীও থাকে, তা হলে ২৮ লক্ষ লোক। এবং তাঁদের পরিবার। তার পাশাপাশি যাঁরা কাঁচা মাল, অন্যান্য রসদের জোগান দেন। এঁদের সবার জীবন ও জীবিকা নির্ভর করে এই রেস্তোরাঁ ব্যবসার ওপর।

আর মাঝারি বা ছোট রেস্তোরাঁর পক্ষে ব্যবসা বন্ধ রেখে পরিস্থিতি সামাল দেওয়াটাই দুরূহ। যেমন বলছিলেন বয়সে নবীন, কিন্তু খুব জনপ্রিয় মোগলাই খাবারের রেস্তোরাঁ ‘‌হ্যাংলাথেরিয়াম'‌–এর অন্যতম মালিক সুনন্দ ব্যানার্জি। তাঁদের দুটি রেস্তোরাঁ মিলিয়ে ৩০ জন কর্মী। গত মাসে তাঁদের পুরো মাসের বেতন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই মাসে কোনো ব্যবসা হয়নি। তা-ও হয়ত যারা কাজ করছে এখনো, তাদের নিজেদের পকেট থেকেই বেতন দেবেন। কিন্তু একটি রেস্তোরাঁ হয়ত বন্ধ করে দিতে হবে। কারণ, কর্মীদের বেতন ছাড়াও এক বড় খরচ হল বাড়ি ভাড়া। ব্যবসা বন্ধ, তাই বাড়ি ভাড়া নেবেন না, এটা কী করে বাড়িওয়ালাকে বলা যায়। এটা তো তাঁরও রোজগার।

শিলাদিত্য চৌধুরী

সুনন্দর বক্তব্য, ‘‌‘‌আমাদের প্রাইম মিনিস্টার বললেন যে, কিসিকো নৌকরিসে মত নিকালিয়ে। রেন্ট নিও না, এই রিকোয়েস্ট পর্যন্ত করা যেতে পারে। কিন্তু আমি তো তাদেরকে বলে রাখতে পারি না যে, ইনডেফিনিট পিরিয়ডের জন্য নো রেন্ট!‌ খুব লজিকালি যদি তারা ভাবে যে, আমাকে যদি সে বেরও করে দেয়, আমার জায়গায় কাকে পাবে?‌ কিন্তু সেই লজিক্যাল ভাবনাটা এখন কারো মধ্যেই আসছে না।'‌'‌

শিলাদিত্য চৌধুরী বোঝালেন, রেস্তোরাঁ ব্যবসার ক্ষতি হলে, তার প্রভাব কতটা সুদূরপ্রসারী হবে। কারণ, এই ব্যবসায় লগ্নি হয় চক্রাকারে। রেস্তোরাঁ চালাতে যা খরচ হয়, গ্রাহক খেতে এলে সেই খরচটা উঠে আসে। আবার সেই টাকাটাই ব্যবসায় খাটে। শিলাদিত্যর কথায়, ‘‌‘‌এই ব্যবসাটায় পুরোটাই সাইকেল। মানে, লোকে পয়সা দিয়ে খাচ্ছে, আমরা ভেন্ডরদের থেকে জিনিস কিনছি, স্যালারি দিচ্ছি, রেন্ট দিচ্ছি— এটা একটা সাইকেলের ভেতর দিয়ে চলছে তো?‌ আর স্পেশালি আমাদের মতো ব্র্যান্ড যারা, আমরা তো ক্যাশ পয়সা উইথড্র করি না!‌ যা প্রফিট হয়েছে, সেটা থেকে আস্তে আস্তে একটা একটা রেস্টুরেন্ট বাড়িয়ে গেছি। এখন যা পরিস্থিতি, সেটা একমাস তো টেনেছি কোনোরকমে আমরা, টেনেছি। সেকেন্ড মাসটাও চেষ্টা করব যেটুকু হোক টেনে করে দেওয়ার। কিন্তু তিন মাস যদি এটা আটকে যায়, তা হলে কিন্তু পুরো ইন্ডাস্ট্রিটা বসে যাবে! সাঙ্ঘাতিক প্রবলেম হয়ে যাবে, সবারই।'‌'‌‌

অর্থাৎ, ব্যবসা ছোট হোক বা বড়, রেস্তোরাঁর ক্ষেত্রে এই চলতি লক ডাউনই একমাত্র দুঃসময় নয়। এর জের থাকবে পরের আরো অনেক বছর ধরে। ক্ষতিগ্রস্থ হবেন অনেক মানুষ।