মার্কিন নির্বাচন
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১২মিট রমনি এককালে সহকর্মীদের সমকামিতা নিয়ে বিশেষ উত্তেজিত হয়ে পড়তেন না৷ ম্যাসাচুসেটসের গভর্নর নির্বাচনে প্রার্থী হবার সময় রমনি বলেছিলেন, এই রাজ্যে মহিলাদের যে গর্ভপাতের অধিকার আছে, গভর্নর হলে তিনি সে আইনের কোনো রদবদল করবেন না৷
ইত্যবসরে রমনি কিন্তু আরো ডানঘেঁষা হয়ে পড়েছেন৷ বিবাহের সংজ্ঞা তাঁর কাছে হয়ে দাঁড়িয়েছে: ‘‘একজন পুরুষ আর একজন মহিলার মধ্যে বন্ধন''৷ এমনকি তিনি মার্কিন সংবিধানেও এই সংজ্ঞা দেখতে চান৷ তিনি এখন গর্ভপাতের বিরোধী এবং ১৯৭৩ সালে আদালতের যে রায়ে মহিলাদের গর্ভপাতের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে, আদালত সে রায় প্রত্যাহার করুক, এই হল রমনির দাবি৷
রমনি এখন তাঁর দলের রক্ষণশীল তৃণমূলের সমর্থন পেতে সচেষ্ট৷ ‘‘দৃশ্যত তাঁর কোনো স্থায়ী, বুনিয়াদি মূল্যবোধ বা অবস্থান নেই,'' রাষ্ট্রবিজ্ঞানী টোমাস মান ডয়চে ভেলে'কে একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন৷ অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচনের পর রমনির তাঁর উদারপন্থি অবস্থানগুলোয় ফেরার কোনো পথ থাকবে না৷ নয়তো তাঁর কোনো পক্ষেই কোনো সমর্থন থাকবে না৷
তবে রমনির প্রতিদ্বন্দ্বী ওবামাও তাঁর অবস্থান বদলেছেন, যেমন সমকামীদের বিবাহের ব্যাপারে৷ গত মে মাসে তাঁকে বলতে শোনা যায়, নারী-নারী কিংবা পুরুষ-পুরুষ বিবাহ সম্ভব হওয়া উচিত৷ এক্ষেত্রে বলা যেতে পারে, অ্যামেরিকায় জনমত সম্প্রতি এ'ধরণের সমকামী বিবাহের দিকে ঝুঁকেছে, বিশেষ করে ওবামার ডেমক্র্যাট দলে উদারপন্থি হাওয়া লাগার ফলে৷ সেই সঙ্গে রয়েছে তরুণ ভোটাররা এবং নিরপেক্ষ ভোটাররা৷ কাজেই ওবামাও সেই হাওয়াতেই পাল ভাসিয়েছেন৷
গর্ভপাতের ক্ষেত্রেও হাওয়া বদলাচ্ছে, কিন্তু বইছে উল্টোদিকে৷ সমকামী বিবাহের চেয়ে এখানে লোকে অনেক বেশি উত্তপ্ত হয়ে পড়ে, মাথা গরম করে৷ গর্ভপাত বিরোধীরা গত কয়েক বছরে অ্যামেরিকার জনগণের একটা সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশকে তাদের দিকে টানতে পেরেছে৷ ওবামা কিন্তু গোড়া থেকেই মহিলাদের গর্ভপাতের অধিকারের সপক্ষে৷
অভিবাসন নীতির ক্ষেত্রেও দুই প্রার্থীর দু'রকম মনোভাব৷ অ্যামেরিকায় যে আনুমানিক এক কোটি দশ লক্ষ অভিবাসী-বহিরাগত বেআইনিভাবে বাস করছে, ওবামা তাদের বৈধতা দিতে চান৷ ওদিকে রিপাবলিকানরা সে আইন রুখে আসছে৷ ওবামা স্বয়ং ডিক্রি জারি করে তরুণ অভিবাসীদের কিছুটা থাকার সুযোগ দিলেও, তাঁর প্রশাসন কিন্তু কড়া হাতে বেআইনি অধিবাসীদের বহিষ্কার করে আসছে৷ রমনি আবার কোনো অভিবাসীর অতীতের ভুলত্রুটি ক্ষমা করতে রাজি নন৷ তিনি যাবতীয় রাজক্ষমার বিরোধী৷ এবং তিনি মেক্সিকো সীমান্তে একটি হাই-টেক বেড়া তোলার সপক্ষে৷
এই তিনটি ‘সামাজিক' বিষয়ের মধ্যে অভিবাসনকেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী টোমাস মান, কেননা দেশে লাতিনোদের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলছে৷ এবং তাদের কাছে এই অভিবাসন নীতির ব্যাপারটার একটা উচ্চ প্রতীকি মূল্য আছে, এমনকি তারা নিজে সরাসরি তার আওতায় না পড়লেও৷ বুশের আমল থেকেই এই লাতিনো গোষ্ঠী ডেমক্র্যাট এবং ওবামার দিকে ঝুঁকছে৷
তবে দুই প্রার্থীর প্রচার অভিযান যে শুধু গর্ভপাত, অভিবাসন অথবা সমকামী বিবাহ নিয়ে, এটা ভাবলে ভুল হবে৷ অর্থনীতির গুরুত্ব পূর্বাপর থেকে যাচ্ছে৷ তবে দীর্ঘমেয়াদি সূত্রে অভিবাসন এবং সমকামী বিবাহ সম্পর্কে দুই তরফের মনোভাব এই নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণ করতে পারে, বলে টোমাস মানের ধারণা৷ বিশেষ করে যদি অভিবাসন প্রসঙ্গে লাতিনো ভোটাররা এবং সমকামী বিবাহ প্রসঙ্গে তরুণ ভোটাররা ওবামার দিকে ঝোঁকে৷
প্রতিবেদন: ক্রিস্টিনা ব্যার্গমান / এসি
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন