1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে মোদীকে সাবেক আমলাদের কড়া চিঠি

২৭ এপ্রিল ২০২২

দেশের সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অত্যন্ত কড়া চিঠি লিখলেন ১০৮ জন সাবেক আইএএস ও আইপিএস অফিসার। 

https://p.dw.com/p/4AU5m
প্রধানমন্ত্রী মোদীকে সাবেক আমলারা রীতিমতো কড়়া চিঠি লিখেছেন।
প্রধানমন্ত্রী মোদীকে সাবেক আমলারা রীতিমতো কড়়া চিঠি লিখেছেন। ছবি: Adnan Abidi/REUTERS

মঙ্গলবার লেখা এই চিঠিতে সাবেক আমলারা বলেছেন, ''ঘৃণার উন্মত্ততায় ধ্বসের যে ছবি আমরা দেখছি, তাতে শুধু মুসলিম ও অন্য সংখ্যালঘুদের বলি দেয়া হচ্ছে তাই নয়, দেশের সংবিধানকেও হত্যা করা হচ্ছে।'' তারা জানিয়েছেন, ''সাবেক আমলা হিসাবে এরকম কড়া ভাষায় আমরা সাধারণত মতপ্রকাশ করি না। কিন্তু যে নিরন্তর গতিতে আমাদের সাংবিধানিক কাঠামো ধ্বংসের কাজ হচ্ছে, তা দেখে আমরা আমাদের রাগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করতে বাধ্য হচ্ছি।''

প্রধানমন্ত্রী মোদীকে তারা সরাসরি বলেছেন, ''এই বিশাল সামাজিক বিপদের সামনে আপনার চুপ করে থাকা আমাদের বধির করে দিচ্ছে।'' তারা এটাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, তারা হলেন কনস্টিটিউশনাল কনডাক্ট গ্রুপের সদস্য, সকলেই সাবেক সিভিল সারভেন্ট, তারা কয়েক দশক ধরে সংবিধানের সেবা করেছেন। তারা মনে করছেন, ''এই বিপদ অভূতপূর্ব। সাংবিধানিক নৈতিকতা ও আচরণ এখন অভূতপূর্ব বিপদের মুখে পড়েছে। আমাদের মহান ঐতিহ্য যা আমরা সংবিধান থেকে পেয়েছি, তা সম্ভবত ভেঙে খানখান হয়ে যাবে।'' 

ওই চিঠিতে মোট ১০৮ জন সাবেক আমলা সই করেছেন। তাদের মধ্যে আছেন সাবেক আইএএস অফিসার ও লেখিকা অনিতা অগ্নিহোত্রী, সাবেক জাতীয় সুরক্ষা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন, সাবেক পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিং, সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব জিকে পিল্লাই, সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সময়ে প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি টিকেএ নায়ার, দিল্লির সাবেক লেফটানান্ট গভর্নর নাজিব জঙ্গ সহ বিভিন্ন মন্ত্রক ও ক্যাবিনেট সচিবালয়ের সাবেক সচিব, যুগ্ম সচিব পর্যায়ের একগুচ্ছ অফিসার। 

চিঠিতে কী বলা হয়েছে

চিঠিতে সাবেক আমলারা কোনোরকম রাখঢাক না করে বলেছেন, ''গত কয়েক বছর ও বিশেষ করে গত কয়েক মাসে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিশেষ করে মুসলিমদের বিরুদ্ধে আসাম, দিল্লি, গুজরাট, হরিয়ানা, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডে ঘৃণার কারণে সহিংসতা বাড়ছে। দিল্লি ছাড়া সবকটি রাজ্যই বিজেপি শাসিত। আর দিল্লিতে পুলিশ কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে।'' তাদের মতে, ''সবচেয়ে চিন্তার বিষয় হলো, সংবিধানের মৌলিক নীতি এবং আইনের মূল নীতির তোয়াক্কা না করে সংখ্যাগুরুবাদ প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। সেখানে রাজ্যগুলি তার সহযোগী ভূমিকা নিচ্ছে।'' 

তাদের মতে, ''এই ঘৃণা ও সহিংসতা সরাসরি মুসলিমদের দিকে যাচ্ছে। বিজেপি শাসিত রাজ্য সরকারগুলি আইন প্রয়োগ করে শান্তি ও সৌহার্দ্য বজায় রাখার চেষ্টা করছে না, তারা বরং সংখ্যালঘুদের ভয়ের পরিবেশে রাখছে। তাদের ধর্মপালনের অধিকার, নিজেদের রীতিনীতি, পোশাক, পার্সোনাল ল, খাবার খাওয়ার সাংবিধানিক অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে।'' চিঠিতে বলা হয়েছে,  ''সরকারি ক্ষমতা এমন ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, যাতে একটি সম্প্রদায়ের উপর সহিংসতাকেই উসকানি দেয়া যায় এবং তারা ভয়ের পরিবেশে থাকতে বাধ্য হয়। দলিত, সংখ্যালঘু, গরিব ও সমাজের পিছিয়ে থাকা শ্রেণিকে তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করার ঘটনা এখন বাস্তব।'' 

সাবেক আমলারা বলেছেন, ''আমরা জানি না, এই যে সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা তৈরি করা হচ্ছে, তা কোনো সমন্বিত কাজ কি না এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের নির্দেশে তা হচ্ছে কি না। কিন্তু যেটা স্পষ্ট, তা হলো, রাজ্য ও স্থানীয় স্তরের প্রশাসন এমন একটা পরিবেশ তৈরি করছে, যাতে ক্ষতিকর লুম্পেনরা ভয় না পেয়ে কাজ করতে পারে। শুধু পুলিশ বা স্থানীয় প্রশাসন নয়, দেখে মনে হচ্ছে, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্তরের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পর্যায় থেকে অনুমোদন পাচ্ছে তারা।''

আমলারা বলেছেন, ''আগের সাম্প্রদায়িক ঘটনার সঙ্গে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনার ফারাক হলো, এই ঘটনাগুলো হিন্দু রাষ্ট্রের ভিত তৈরি করছে। কিন্তু সাংবিধান ও আইন এই ধরনের প্রয়াসকে অনুমোদন করে না।''

প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন

এই আমলারা প্রধানমন্ত্রী মোদীকে বলেছেন, ''আমরা আপনার বিবেকের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, আপনি সবকা সাথ সবকা বিকাশের প্রতিশ্রুতি পূরণ করুন। আমাদের আশা, স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে পক্ষপাতমূলক চিন্তার উপরে উঠে আপনি ঘৃণার রাজনীতি বন্ধ করার ডাক দেবেন। সংবিধানকাররা যে ভারতের ধারণা দিয়েছেন, তার জন্য, সৌভ্রাতৃত্ব ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য একটা পরিবেশ দরকার। ঘৃণা থেকে ঘৃণাই আসে। সেই বিষময় পরিবেশে এই সব ধারণা বেঁচে থাকতে পারবে না।'' 

সাবেক আমলারা এর আগেও প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন। কিন্তু কখনো এতটা কড়া ভাষায়, এরকম শব্দবন্ধ ব্যবহার করে প্রতিবাদ জানাননি এবং প্রধানমন্ত্রীকে এইভাবে বেঁধেননি।

জিএইচ/এসজি (দ্য ওয়্যার, এন়ডিটিভি)