সাম্প্রদায়িকতা মানসিক ব্যাধি
৮ জানুয়ারি ২০১৪সামহয়্যার ইন ব্লগে মোস্তফা কামাল পলাশ লিখেছেন, ‘‘সাম্প্রদায়িকতা একটা মানসিক ব্যাধি আর অসাম্প্রদায়িকতা হলো মানবিক গুণ৷ দুঃখজনক হলেও সত্য যে, মানব চরিত্রের উপরোক্ত দুটি মানবিক গুণাবলি মানুষ অর্জন করে শৈশব ও কৈশোরে তার বাবা-মা, ভাই-বোন ও আত্নীয়স্বজনদের কাজকর্ম দেখে; আর যৌবন বয়সে তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকে৷'' এরপর পলাশ তাঁর শৈশবের কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘‘আমি সবসময়ই গর্ব করে সকলকে বলি, আমার শৈশবে আমি ঐভাবেই বেড়ে উঠেছি৷ ধর্মভীরু কিন্তু অন্যের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মা-বাবা, দাদা-নানাকে দেখে শিখেছি...যখন পত্রিকার পাতা খুলে দেখি শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মাবলম্বী হবার কারণে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে তখন ভাবি, কারা মানসিকভাবে অসুস্থ সেই মানুষ? কোন পরিবেশে তারা বেড়ে উঠেছে? তাদের বাবা-মারাই বা কোন শিক্ষা তাদের দিয়েছেন?''
একই ব্লগে সুকান্ত কুমার সাহা ‘‘ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা বিএনপিকে কেন ভোট দেয় না সেটা তাদের ভাবা উচিত!!!'' শিরোনামে একটি পোস্ট দিয়েছেন৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘হিন্দুরা মার খেয়ে প্রমাণ করেছে দেশে ভোট হয়েছে বা নাগরিকেরা ভোট দিয়েছে৷ আবার অন্যভাবেও বলা যায়, বিএনপি- জামাত হিন্দুদের মেরে, তাদের বাড়িঘর তথা গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে/ভেঙে প্রমাণ করেছে দেশে ভোট হয়েছে বা নাগরিকেরা ভোট দিয়েছে... এবার যদি সবাই ভোটে অংশগ্রহণ করতো তাহলে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অন্তত কিছু ভোট বিএনপি পেত৷ তাই আমি বলবো, মার না দিয়ে, কেন ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা বিএনপিকে ভোট দেয় না, সেটা তাদের ভাবা উচিত!!! এটাই গণতন্ত্রের সঠিক পন্থা!!!''
এদিকে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ‘সংখ্যালঘু' শব্দটি বর্জনের কথাও বলছেন কেউ কেউ৷ যেমন সামহয়্যার ইন ব্লগে অদিতি মৃণ্ময়ীর পোস্টের শিরোনাম, ‘‘সংখ্যালঘু, মালাউন, মালু এ জাতীয় উস্কানিমূলক শব্দ নিষিদ্ধ হোক৷'' পোস্টের সঙ্গে তিনি একটি ছবি দিয়েছেন৷ তাতে দেখা যাচ্ছে এক ভদ্রলোক তাঁর বাড়িতে অসহায় অবস্থায় বসে আছেন৷ কারণ তাঁর বাড়ির অনেক কিছু পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে৷ ঐ ব্যক্তি হিন্দু সম্প্রদায়ের হওয়ায় এই হামলা হয়েছে বলে মনে করেন মৃণ্ময়ী৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘...ইনারা নিরপেক্ষ থাকলেও এদের ‘ইন্ডিয়ার দালাল' বলে মারা হবে৷ এই বৈষম্য উস্কে দিতে তৎপর আমাদের মিডিয়া এবং হলুদ সাংবাদিকতা৷ তারা খুব সুন্দরভাবে হিটের জন্য পত্রিকায়, খবরে এদের ‘সংখ্যালঘু' অথবা ‘মালাউন' নাম দিয়ে উগ্র ধর্ম ব্যবসায়ী জঙ্গিদের শিকার হিসেবে দেখিয়ে দিচ্ছেন৷ আর এভাবেই প্রাণ হারাচ্ছে, নিরিহ বাংলাদেশিরা৷ আজ থেকে আমরা যদি এই ‘সংখ্যালঘু' শব্দটার ব্যবহার বাদ দেই, তাহলে হয়তো তাড়াতাড়ি কোনো সুফল নাও পেতে পারি, কিন্তু আস্তে আস্তে আমাদের এই সোনার বাংলাদেশ থেকে ধর্ম বৈষম্য উঠে যাবে বলে আশা রাখি৷''
তবে অন্য মত পাওয়া গেলো সেজান মাহমুদ নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারীর স্ট্যাটাসে৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘...সংখ্যালঘুতো শুধু ধর্মের ভিত্তিতে না৷ আরো অন্য কিছুতেও হতে পারে৷ যেমন আমার মতে, বাংলাদেশে বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তার মানুষেরাও সংখ্যালঘু৷ অন্যদিকে যে শব্দটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো ‘ভালনারেবল' বা বাংলায় ‘আক্রম্য' বা অরক্ষিত৷ এর অর্থ হলো যারা সহজেই আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হতে পারে৷ বাংলাদেশে নারীরাও কি আক্রম্য নয়? শিশুরা? রাস্তায় একা পেলে, ভিড়ের মধ্যে, স্টেডিয়ামে নারীরাও তো আক্রম্য৷ সেখানে একজন নারী বা শিশু যদি ধর্মীয়ভাবে সংখ্যালঘু হয় তাহলে তাদেরকে আরো বেশি ‘ভালনারেবল' মনে করে দুষ্কৃতিকারীরা৷ তাই সংখ্যালঘু শব্দ বর্জন না করে বরং গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত, সেই সঙ্গে ‘ভালনারেবল' বা ‘আক্রম্য' শব্দটিতে জোর দেয়া উচিত, উচিত এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো৷ উচিত যারা আক্রম্য তাদেরকে সামাজিক, নৈতিক এবং আইনগত প্রোটেকশন দেয়া৷ এখানে সরকারি-বিরোধীদলের যেমন ভূমিকা আছে, তেমনি সাধারণ নাগরিকেরও ভূমিকা আছে৷''
সংকলন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী