কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে রায়
৯ মে ২০১৩জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় ২০১০ সালের ২৯শে জুলাই৷ এরপর তাকে যুদ্ধাপরাধ মামলায় গ্রেপ্তার দেখান হয় একই বছরের ২রা আগস্ট৷
১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটসহ সাত ধরণের মানবতাবিরোধী অভিযোগ আনা হয় কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে৷ ট্রাইব্যুনাল ২-এ গত ১৬ই এপ্রিল মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপনসহ সব ধরণের কাজ শেষ হয়৷ রায়ের জন্য অপেক্ষমান এই মামলাটির রায় ঘোষণার দিন জানানো হয় বুধবার৷
কামারুজ্জামান শেরপুর অঞ্চলে হত্যা ও ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ৷ আর আলবদর বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বরসহ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে৷ প্রসিকিউটর এ কে এম সাইফুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান যে, তারা আদালতে কামারুজ্জানের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপনে সক্ষম হয়েছেন৷ তাই তারা আশা করেন, তার সর্বোচ্চ শাস্তি হবে৷
২০১০ সালের ২৫শে মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন হওয়ার পর, এখন পর্যন্ত মট তিনটি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে৷ প্রথম রায়ে জামায়াতের সাবেক নেতা মাওলানা আবুল কালাম আযাদকে পলাতক অবস্থায় মৃতু্যদণ্ড দেয়া হয়৷ দ্বিতীয় রায়ে জমায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং তৃতীয় রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে মৃতু্যদণ্ড দেয়া হয়৷ ২৮শে ফেব্রুয়ারি সাঈদীর মৃতু্যদণ্ডের রায় ঘোষণার পর, জামায়াত শিবির সারা দেশে ব্যাপক তাণ্ডব চালায়৷ চার দিনের তাণ্ডবে তারা দেশের ২১টি জেলার পুলিশ স্টেশনগুলিতে হামলা, পুলিশের ওপর হামলা, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা এবং তাদের বাড়িঘর ও উপসনালয়ে আগুন দিয়ে এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে৷ সে সময় সারা দেশে পুলিশসহ প্রায় ১০০ জন নিহত হন৷
সেই ত্রাসের ঘটনার পর বৃহস্পতিবার জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে রায় দেয়া হচ্ছে৷ ব়্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান কর্ণেল জিয়াউল আহসান ডয়চে ভেলেকে জানান, রায় ঘেষণার পর এবার আর তাণ্ডব সৃষ্টির কোনো সুযোগ দেয়া হবে না৷ তাই শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশেই সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে৷ পুলিশ এবং ব়্যাব ছাড়াও গোয়েন্দা জাল বিস্তার করা হয়েছে বিভিন্ন অঞ্চলে৷ আর ঢাকার ট্রাইব্যুনাল এবং আশপাশের এলাকা তিন স্তরের নিরপত্তার চাঁদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে বলে খবর৷
এদিকে, বুধবার সন্ধ্যা থেকেই শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে অবস্থান নিতে শুরু করেছে তরুণ প্রজন্ম৷ তারা সেখানে মাইক লাগিয়ে স্লোগানে স্লোগানে মুখর করে তুলছে শাহবাগ এলাকা৷ গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠকদের একজন মারুফ রসূল ডয়চে ভেলেকে জানান, প্রতিটি রায়ের আগেই তাদের গণজাগরণ মঞ্চে সমবেত হওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করা আছে৷ তারা সেই কর্মসূচি অনুযায়ীই সমবেত হয়েছেন৷ মঞ্চ সরিয়ে তাদের আন্দোলন থামানো যাবেনা বলেও জানিয়েছেন তিনি৷
উল্লেখ্য, গত ৫ই ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধ মামলায় জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের প্রতিবাদে এবং ফাঁসির দাবিতে শুরু হয় শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ৷ তবে গত রবিবার রাতে মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের অবস্থান ভেঙে দেয়ার পর, ভোররাতে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের মঞ্চসহ সব স্থাপনা সরিয়ে নেয় পুলিশ৷