‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ নিয়ে বইয়ের পর এবার আসছে সিনেমা
৩ অক্টোবর ২০১৭রহস্য, রোমাঞ্চের সঙ্গে দেশপ্রেম মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে হিন্দি ছবি ‘উরি'৷ এ যেন ভারতের ‘জেরোনিমো'৷
তখন শেষরাত৷ ফিকে হয়ে এসেছে চাঁদ৷ সেনার বিশেষ হেলিকপ্টার থেকে লাফিয়ে নামলেন কমান্ডোরা৷ ঘন্টা চারেক পর পাহাড় ডিঙিয়ে নিজের দেশে ফেরা৷ মাত্র এক ঘন্টার রোমহর্ষক অপারেশনে কমান্ডোরা গুঁড়িয়ে দিয়ে আসে পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের ৭টি জঙ্গিঘাঁটি৷ মারা যায় প্রতিপক্ষের দুই সেনাসহ মোট ৫০ জন জঙ্গি৷ ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক'-কে সামনে রেখে লেখক এবং নির্দেশকের মর্জিতে এমনভাবেই সেজে উঠছে চিত্রনাট্য৷ তৈরি হচ্ছে হিন্দি সিনেমা ‘উরি'৷ বলিউডে আরও কয়েকটি সিনেমা তৈরির তোড়জোড় চলছে৷
ওসামা বিন লাদেনকে খুঁজে বের করে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ‘জেরোনিমো' নামে খ্যাত৷ এ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বহু বাস্তব কাহিনী ও ‘গল্প' তৈরি হয়েছে৷ সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, ভারতেও ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক' জেরোনিমো-র আকার নিতে চলেছে৷
পাক-সীমান্তের ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক' সাধারণ কোনও ঘটনা নয়৷ যেকোনও দেশে এমন ঘটনা খুব কমই হয়৷ ফলে, এমন ঘটনা নিয়ে সিনেমা তৈরি হবে, বই প্রকাশিত হবে, তুমুল আলোচনা হবে, সেটাই স্বাভাবাবিক৷ কাশ্মীরসহ সীমান্ত সমস্যার সমাধানে ভারতীয় সেনাকে ‘হিরো' করে চলচ্চিত্র তৈরি করা হলে একদিকে যেমন সীমান্তের উত্তেজনা অনেকটা কমে, তেমন সমাজের সাধারণ মানুষের মধ্যেও তার প্রভাব পড়ে৷ বই বা সিনেমা সহজেই বাজার মাত করে৷ তাছাড়া সরকারি আনুগত্য পান নির্মাতারা৷ ফলে, যেকোনও দেশে সেনার গুনগান নতুন কিছু নয়৷
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা উৎপল ভট্টাচার্য অবশ্য বলছেন, ‘‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক একটা ইতিহাস৷ ফলে সেটা স্মরণ রাখা, স্মরণীয় করে রাখার প্রয়োজনীয়তা আছে বৈকি৷ এমন ঘটনা রোজ ঘটে না৷ ১৯৭১ সালে এমন এক লড়াইয়য়ের মাধ্যমে নতুন একটা দেশ তৈরি হয়েছিল৷ তাই একবছর পরে কেউ বই লিখছেন৷ কেউ তথ্যচিত্র বানাচ্ছেন৷ এটা খুবই স্বাভাবিক৷ তাই এসব নিয়ে অযথা রাজনীতি করার কোনও অর্থ নেই৷''
‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক' নিয়ে সম্প্রতি দুটি বই বেরিয়েছে ভারতে৷ একটি নীতিন এ গোখলের ‘ইন সিকিওরিং ইন্ডিয়া দ্য মোদি ওয়ে : পাঠানকোট, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক অ্যান্ড মোর'৷ দ্বিতীয়টি শিব আরুর ও রাহুল সিংয়ের লেখা ‘ইন্ডিয়াজ মোস্ট ফিয়ারলেস: ট্রু স্টোরিস অফ মডার্ন মিলিটারি হিরোজ'৷ এতে তুলে ধরা হয়েছে কাশ্মীরে উরি সেক্টরে সেনাছাউনিতে রাতের অন্ধকারে আচমকা জঙ্গি হামলার ঘটনার ঠিক ১১ দিনের মাথায় ভারতের মাটি ছাড়িয়ে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের ইতিবৃত্ত৷ সেইসঙ্গে ভারতীয় সেনার কমান্ডোদের সাহসিকতার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে৷
গোখলের বইয়ে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা এবং বিদেশনীতির বিবরণ দেওয়া হয়েছে৷ সেইসঙ্গে নরেন্দ্র মোদী সরকারের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের উল্লেখ করা হয়েছে৷ অন্যদিকে, শিব আরুর ও রাহুল সিংয়ের বইটিতে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের প্রধান কমান্ডারের জবানবন্দি-সহ অপারেশনের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দেওয়া হয়েছে৷
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আর কয়েক মাস পরেই মুক্তি পেতে পারে বলিউডের ‘উরি' সিনেমাটি৷ এই সিনেমাটিরও পটভূমি সার্জিক্যাল স্ট্রাইক৷ সিনেমাটি প্রযোজনা করছে রনি স্ক্রুওয়ালার আরএসভিপি৷ নির্দেশনা করছেন আদিয়া ধর৷ সিনেমার প্রধান কমান্ডারের ভূমিকায় অভিনয় করছেন ভিকি কৌশল৷ সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে সিনেমা তৈরি করতে ছাড়েননি ধর্ষণসহ একাধিক মামলায় জেলবন্দী স্বঘোষিত ধর্মগুরু গুরমীত রামরহিম৷ তাঁর তৈরি ‘এমএসজি দ্য লায়নহার্ট: হিন্দ কা নাপাক কো জবাব' সিনেমাটিও সেনা অভিযানের পর তৈরি হয়েছিল৷
লেখা হয়েছে, উরি হামলার পাল্টা হিসেবে যেহেতু সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, মেজর ট্যাঙ্গো নিজে অপারেশনের জন্য ১৯ জন কম্যান্ডোকে বেছে নেন৷ তিনি জানতেন, ১৯ জনের প্রাণের দায়িত্ব তাঁর৷ অপারেশনের সবচেয়ে কঠিন অংশ ছিল ফিরে আসা৷ ঢালু পাহাড়ের গা বেয়ে ফিরে আসার সময় পাক সেনা যে সর্বশক্তি দিয়ে আক্রমণ করবে, তা ভালোই জানতেন তিনি৷ সেভাবেই তাঁদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়৷ সেদিনের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘কানের একদম পাশ দিয়ে ছুটে যাচ্ছিল বুলেট৷ পাক অধিকৃত কাশ্মীরের দুই গ্রামবাসী এবং দুই পাক নাগরিক তথ্য জুগিয়ে সাহায্য করেছিলেন৷''
অন্যদিকে, পাকিস্তানের পর এবার মায়ানমার সীমান্তে আবার সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালালো ভারতীয় সেনা৷ মায়ানমার সীমান্তে খাপলাং গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বড়সড় অভিযান চালায় তারা৷ সেনার পূর্বাঞ্চলীয় সদর সূত্রের খবর, ভোর ৪টে ৪৫ মিনিট নাগাদ ভারত-মায়ানমার সীমান্ত লাগোয়া অঞ্চলে নিষিদ্ধ সংগঠনের শিবির লক্ষ্য করে এই অভিযান চালানো হয়৷ এক বিবৃতি পেশ করে ইস্টার্ন কমান্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অভিযানে একাধিক এনএসসিএন (কে) জঙ্গি নিহত হয়েছে৷ তাদের শিবিরগুলি সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হয়েছে৷ প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে অভিযান চলে৷
এর আগে ২০১৫ সালে মায়ানমার সরকারের সঙ্গে যৌথ অভিযানে পড়শি দেশে প্রবেশ করে নাগা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছিল ভারতীয় সেনা৷ সে হামলার পরিকল্পনা দলের প্রধান ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) অজিত দোভাল৷ ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রক জানিয়েছে, ভারতীয় ফৌজ মায়ানমার ভূখণ্ডে প্রবেশ করেনি৷ ভারত ও মায়ানমারের মধ্যে ১৬৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে৷