সার্বিয়ায় আবিষ্কৃত গণকবর
১০ মে ২০১৪১৯৯৯ সালে কসোভো যুদ্ধে হেরে যাওয়ার পর বেলগ্রেডের সেনাবাহিনী একটি শেষ কাজ সম্পন্ন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে৷ তা হলো বেসামরিক কসোভো আলবেনীয়দের মরদেহ সার্বিয়াতে এনে লুকিয়ে ফেলা৷ নিজেদের অপরাধের বিস্তৃতি গোপন করাই ছিল তাদের লক্ষ্য৷
কসোভোর রক্তাক্ত সংঘর্ষে ১৩,৫০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়৷ এর মধ্যে বেশিরভাগই কসোভো-আলবেনীয়৷ গত ১৫ বছরে ১,২০০ কসোভো-আলবেনীয়র মৃতদেহ আবিষ্কৃত হয়৷ ১,৫০০ ‘নিখোঁজ' রয়েছেন বলে তালিকাবদ্ধ করা হয়েছে৷
সম্ভবত দ্বিতীয় বৃহত্তম গণকবর
সম্প্রতি কসোভো সংলগ্ন দক্ষিণ সার্বিয়ার গ্রাম রুডনিচায় একটি সরকারি নির্মাণ কোম্পানির পুরানো প্রস্তরখনিতে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শুরু হয়েছে৷ এক সাক্ষীর ধারণা, সেখানে ৪০০ মৃতদেহ থাকতে পারে৷ গত বছর রুডনিচায় ছয়টি মৃতদেহের অবশিষ্টাংশ পাওয়া গিয়েছে৷ দুই জনের ডিএনএ পরীক্ষা করে জানা গিয়েছে, এইগুলি যুদ্ধে নিখোঁজ ব্যক্তিদের দেহাবশেষ৷
এখন এই জঘন্য অপরাধ কীভাবে সংঘটিত হয়েছিল, তার প্রমাণাদি পাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে৷ বলেন প্রধান প্রত্নতত্ত্ববিদ আন্ড্রেই স্টারোভিচ৷ তাঁর মতে, ‘‘যে ট্রাকটি লাশগুলি বহন করেছে, সেখানে নিশ্চয়ই চিহ্ন রয়ে গিয়েছে৷ যেমন পোশাক-আশাক কিংবা গুলিগোলার চিহ্ন৷
সুসংঘটিত জঘন্য অপরাধ
এটা ছিল সুসংঘটিত জঘন্য অপরাধ৷ বলেন বেলগ্রেডের সাংবাদিক মেলিসা জোভানোভিচ৷ এক অনলাইন পোর্টালে লেখেন তিনি, ‘‘গণকবর তৈরি করার জন্য প্রয়োজন লজিস্টিক, লোকবল ও যন্ত্রপাতি৷ আলবেনীয়দের বিরুদ্ধে এই অপরাধ কতটা রাষ্ট্রীয়ভাবে সংঘটিত হয়েছিল, সার্বিয়ায় এখন সেই প্রশ্নটা তোলা হয় না৷'' বেলগ্রেড এক্ষেত্রে ভণ্ডামির আশ্রয় নিয়েছে৷ মাঝেমধ্যে দুই-একটা অপরাধ প্রকাশ করা হয়৷ অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়৷ কিন্তু রাষ্ট্রীয় বর্বরতাকে আড়ালে রাখার চেষ্টা করা হয়৷''
রুডনিচার আবিষ্কৃত নিহতদের সংখ্যা সঠিক হলে এটাই হবে সার্বিয়ায় আবিষ্কৃত দ্বিতীয় বৃহত্তম গণকবর৷ এর আগে বেলগ্রেডের কাছে সার্বিয়ার বিশেষ ইউনিটের ঘাঁটি বাটাইনিৎসায় প্রায় ১,০০০ মরদেহ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে৷ এছাড়া আরো কয়েকটি জায়গায় কিছু লাশ পাওয়া গিয়েছে৷
গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীর বর্ণনা
যুদ্ধের সময় সার্বিয়ার সেনাবাহিনীতে ড্রাইভার হিসাবে কাজ করতেন, এমন একজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী এখন নতুন পরিচিতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি দেশে বসবাস করছেন৷ তিনি সেই ২০০১ সালেই সার্বিয়ার প্রেসকে জানিয়েছিলেন, কীভাবে শিল্পনগরী বোর-এ সম্ভবত বিশাল চুল্লিতে পুড়িয়ে ফেলার জন্য শয়ে লাশ নিয়ে যাওয়া হয়৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘আমাকে কসোভো থেকে বোর-এ সবসময় রাতে গাড়ি চালিয়ে যেতে হতো৷ যাত্রার কারণ হিসাবে লেখা থাকতো ‘গোপনীয়'৷''
২০০৮ সালে স্বাধীনতা ঘোষণা করে
১৯৯৯ সালে কসোভোকে জাতিসংঘের নিয়ন্ত্রণে আনা হয়৷ ২০০৮ সালে সার্বিয়ার এই সাবেক প্রদেশটি একতরফা স্বাধীনতা ঘোষণা করে৷ সার্বিয়া এটির স্বাধীনতা মেনে না নিলেও ব্রাসেলস-এ কসোভোর সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের চুক্তিতে আবদ্ধ হয়৷ পরস্পরকে যে ভালবাসতে হবে, এমন কোনো কথা নেই, কিন্তু একটা আস্থার জায়গা তৈরি করা যেতে পারে৷ বলেন সার্বিয়ার নতুন প্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্ডার ভুচিচ৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘আমি নিশ্চিত করে বলতে চাই, কোনো অপরাধকে ধামাচাপা দেওয়া হবে না৷ অপরাধ যেই সংঘটিত করুক না কেন, তার দায়িত্ব নিতে হবে তাকে৷''
অপরাধীকে কারাগারে নিক্ষেপ করতে হলে সার্বিয়া ও কসোভো এই দুই পক্ষেরই প্রয়োজন বিশ্বাসযোগ্য বিচার৷ বলেন কসোভোর রাজধানী প্রিস্টিনার রাজনীতি গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিচালক ইলির ডেডা৷ কিন্তু যুদ্ধে নিখোঁজ অনেক ব্যক্তির অদৃষ্টে কী ঘটেছে তা এখন পর্যন্ত অজ্ঞাতই রয়েছে৷