সাহায্যের প্রতিক্ষায় টর্নেডো পীড়িতরা
মাত্র ১৫ মিনিটে উড়ে গেলে সবকিছু৷ প্রাণ হারালো অগুনতি মানুষ৷ প্রকৃতির এই ধ্বংসলীলার নাম ‘টর্নেডো’৷ শুক্রবার টর্নেডো আঘাত হানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কয়েকটি গ্রামে৷
বাড়ছে মৃতের সংখ্যা
সরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা সোমবার দুপুর অবধি ৩১৷ তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, প্রকৃত হতাহতের সংখ্যা আরো অনেক বেশি৷ টর্নেডোর পরপরই হতাহতরা বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ায় মৃতের প্রকৃত সংখ্যা জানা যাচ্ছে না৷
‘রোজ কেয়ামত’
আখাউড়ার আমোদাবাদ দিঘী গ্রামের ৮০ বছরের বৃদ্ধ আবুল হোসেন চৌধুরী জানান, তাঁর জীবনে এমন ঘটনা দেখেন নি৷ মুহূর্তে সব কিছু ধ্বংস হয়ে যায়৷ যেন রোজ কেয়ামত নেমে আসে৷
চিকিৎসকের অভাব
টর্নেডোর পর সরকারি সহায়তা সঠিক জায়গায় পৌঁছাচ্ছে না বলে মনে করেন ব্লগার আলী মাহমেদ৷ আখাউড়ার এই বাসিন্দা বলেন, ‘‘সব সরকারি সহায়তা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহর কেন্দ্রিক৷ সেনাবাহিনী দুর্গতদের সহায়তায় ৫৪ জন চিকিৎসক পাঠিয়েছেন বলে আমরা শুনেছি৷ অথচ আখাউড়া হাসপাতালে একজনকেও দেখা যায়নি৷’’
চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুর অভিযোগ
চিকিৎসকের স্বল্পতার কারণে টর্নেডোর পর গুরুতর আহত কেউ কেউ বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন বলে মনে করেন মাহমেদ৷ তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতালে চিকিৎসকের স্বল্পতার কারণে গুরুতর আহতরা চিকিৎসার জন্য এসেও ফিরে যান৷ এদের মধ্যে কেউ কেউ দূরে চিকিৎসা গ্রহণ করতে যাওয়ার পথে মারা গেছেন৷’’
প্রয়োজন সব ধরনের সহায়তা
দুর্ঘটনাস্থল ঘুরে এসে ব্লগার আলী মাহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘টর্নেডো দুর্গতদের এখন সব ধরনের সহায়তা প্রয়োজন৷ এর মধ্যে অবকাঠামোগত সহায়তা থেকে শুরু করে খাদ্য সহায়তা এবং আহতদের চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা দরকার৷’’ এই ব্লগার স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে টর্নেডো দুর্গতদের সর্বাত্মক সহায়তার চেষ্টা করছেন৷
কেন এমন হয়?
কেন এমন হয়? এই প্রশ্নের জবাবে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়া কর্মকর্তা আয়েশা খাতুন ডয়চে ভেলেকে জানান, টর্নেডো স্থানীয়ভাবে ছোট এলাকায় সৃষ্টি হয়৷ ওই এলাকায় বায়ুর চাপ খুবই কমে গিয়ে বাতাস হাল্কা হয়ে উপরে উঠে যায়৷ আর চারপাশের ভারী বাতাস শূন্যস্থান পুরণ করতে তীব্র বেগে, প্রচণ্ড শক্তিতে ওই এলাকায় আঘাত হানে৷ তার স্থায়িত্ব হয় খুব অল্প সময়৷ তবে এই সময়ের মধ্যে ব্যাপক ধ্বংসলীলা ঘটে৷
‘টর্নেডোর পূর্বাভাষ দেয়া সম্ভব’
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এ কে এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘‘আমাদের দেশে না থাকলেও এখন টর্নেডোর পূর্বাভাষ দেয়া সম্ভব৷ অ্যামেরিকা এবং ইউরোপ এক ধরনের রাডার ব্যবহার করে অন্তত ৪৫ মিনিট আগে টর্নেডোর পূর্বাভাষ দিতে পারে৷ আর এ ধরনের পূর্বাভাষ দিয়ে জীবন ও সম্পদ রক্ষার নজির আছে৷ এমনকি এখন ভূমিধসেরও পূর্বাভাষ দেয়া সম্ভব৷’’
নিয়তিই ভরসা
টর্নেডোর পূর্বাভাষের কোনো প্রযুক্তি নেই বাংলাদেশে৷ নেই কোনো দুর্যোগের পর দ্রুত উদ্ধার এবং সহায়তা পরিচালনার ব্যবস্থা৷ এধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে তাই এখনো বাংলাদেশে নিয়তিই ভরসা৷