সিআইএ-র সব ভুলভ্রান্তি জানাতে হবে
১০ ডিসেম্বর ২০১৪ব্যাপারটা শুরু হয়েছিল কয়েক বছর আগে, একটি সর্বর্দলীয় উদ্যোগ হিসেবে৷ কিন্তু জর্জ ডাব্লিউ বুশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সিআইএ-র নিপীড়ন পদ্ধতি সেনেট পর্যায়ে অনুসন্ধান করার প্রচেষ্টাকালে একটি তিক্ত, দলগত বিরোধে পর্যবসিত হয়েছে – যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণত যেমন হয়ে থাকে৷ তার ফল হয়েছে এই যে, সেই অনুসন্ধানের রিপোর্ট প্রকাশিত হবার পর দু'পক্ষকেই বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে৷
মার্কিন প্রশাসন যদি দেশের নাগরিক তথা বিশ্ববাসীকে একটি যৌথ লক্ষ্য পরিবেশন করতে পারতো, তাহলে তো কথা ছিল না৷ সেই লক্ষ্য হতে পারতো: সরকার নিয়ন্ত্রিত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান নাইন-ইলেভেন যাবৎ যে সব ভুলভ্রান্তি করেছে, তার বিশ্লেষণ করে সেই সব ভুলভ্রান্তির পূর্ণ দায়িত্ব নেওয়া৷ তার পরিবর্তে ওয়াশিংটন থেকে শোনা যাচ্ছে শুধু দলীয় রাজনীতির কচকচি ও মারপ্যাঁচ৷ যার ফলস্বরূপ রিপাবলিকানরা এই রিপোর্ট প্রকাশের তীব্র বিরোধিতা করেছে এবং আগামীতে মিডিয়ায় আন্দোলন করার অভিপ্রায় রাখে৷ ওদিকে সিআইএ নিজেও তার নিজস্ব ব্যাখ্যা দেবে, বলে ধরে নেওয়া যায়৷ এ সবের ফলে সেনেটের গুপ্তচর বিভাগীয় তদন্ত পরিষদের সভাপতি ডায়ানে ফাইনস্টাইন – এবং সেই সঙ্গে হোয়াইট হাউস সব সমালোচনা সত্ত্বেও রিপোর্টের প্রকাশনা সমর্থন করতে বাধ্য হবেন৷
বিতর্ক হওয়া উচিত ছিল রিপোর্টের বিষয়বস্তু নিয়ে
প্রকাশনা নিয়ে বিতর্কটা দুঃখজনক, কেননা তার ফলে আসল বিষয়টি উপেক্ষিত হচ্ছে৷ প্রকাশ করা উচিত হবে কিনা, তা নিয়ে আলোচনা না করে, রিপোর্টের ফলাফল নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত ছিল৷ সিআইএ-র বন্দি নিপীড়ন পদ্ধতি থেকে আমরা সে আমলের কার্যকলাপ, রীতিনীতি সম্পর্কে কি জানতে পারি – এবং আজ কি বদলাতে পারি – সেটাই হলো আসল কথা৷
প্রকাশনার বহু সমালোচকের মূল যুক্তি হলো: বিদেশে মার্কিন নাগরিকদের উপর – এবং মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির উপর এই প্রকাশনার সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া৷ কিন্তু এ যুক্তি খাটে না৷ রিপোর্টের প্রকাশনা নয়, বরং রিপোর্টে যে ধরনের আচরণ, জেরার প্রক্রিয়া ইত্যাদি বর্ণনা করা হয়েছে, তা থেকেই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হবে৷ আরো গুরুত্বপূর্ণ সম্ভবত এই যে, প্রকাশনার ফলে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির ক্ষতিসাধন তো দূরের কথা, বরং এই প্রকাশনাই সম্ভবত সে নীতির বিশ্বাসযোগ্যতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি গ্লোবাল সুপারপাওয়ার, এমন একটি দেশ, যা নিজেকে স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, স্বাধীনতার আলোকবর্তিকা বলে মনে করে থাকে৷ সেই ইউএসএ কিভাবে অপরাপর দেশের বিরুদ্ধে মানবাধিকার ভঙ্গের অভিযোগ আনবে, যদি ওয়াশিংটন নিজে তার ভুলভ্রান্তি স্বীকার না করে? এক কথায়: অসম্ভব৷
আইনের শাসনে নিপীড়নের কোনো স্থান নেই
বুশ প্রশাসনের আমলে সিআইএ এবং অপরাপর সরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যকলাপের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বিশ্বাসযোগ্যতার ক্ষতি হয়েছে: তা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য এটা অত্যন্ত জরুরি যে, ওয়াশিংটন তার নিজের ভুলভ্রান্তি স্বীকার করবে৷ তবে এই রিপোর্ট প্রকাশের একমাত্র কারণ হিসেবে শুধু পররাষ্ট্রনীতির কথা ভাবলে অন্যায় হবে, কেননা বিষয়টি তার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ৷ একটি গণতান্ত্রিক দেশ, যেখানে আইনের শাসন বিরাজ করছে, সেখানে শারীরিক অত্যাচার কিংবা নিপীড়নের কোনো স্থান নেই৷ কাজেই সেনেট যে এই নিপীড়ন সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, সেটা একটা লক্ষণীয় পদক্ষেপ – আদতে যার প্রয়োজন পড়ারই কোনো প্রয়োজন ছিল না৷