‘সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে সুফল পাওয়া যায়’
২১ মে ২০১৯ডয়চে ভেলে : পেশাজীবীদের সিন্ডিকেটকে আপনি কিভাবে দেখেন?
গোলাম রহমান : পেশাজীবীদের নীতি-নৈতিকতা থাকা দরকার৷ কিন্তু দেখা যাচ্ছে অনেক পেশাজীবী নীতি-নৈতিকতার বাইরে গোষ্ঠীস্বার্থকে প্রাধান্য দিচ্ছে৷ এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়৷
কেন এই সিন্ডিকেট?
এটা গ্রুপ ইন্টারেস্ট৷ নীতি-নৈতিকতাকে প্রাধান্য না দিয়ে তাদের গ্রুপের আর্থিক স্বার্থ বা আইনের যে বিধি-বিধান সেগুলো অবজ্ঞা করে নিজেদের বাঁচানোর জন্য এই ধরনের আচরণ ডেভেলপ করেছে৷ এটা খুবই গর্হিত৷
এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে কি রাজনীতির সম্পর্ক আছে?
রাজনীতির ছত্রছায়ায় সাধারণত এসব হয়৷ সরকার যদি কঠোর হয়, তাহলে এই ধরনের আচরণ ব্যাপকতা পায় না৷ কিন্তু সরকার যদি নমনীয় হয়, তাহলে এই ধরনের কার্যক্রম বিস্তার লাভ করে৷
সরকার এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কতটা তৎপর? অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে সরকার না হলেও সরকারের মধ্যে বিশেষ স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী এদের প্রতি অনেক সময় নমনীয় মনোভাব পোষণ করে৷ অনেক সময়ই দেখা যায়, একজন পরিবহণ শ্রমিক অপরাধ করলেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে সবাই এক হয়ে আন্দোলন শুরু করেন...
ওই জন্যই তো বলছি, এটা গর্হিত, এটা অনৈতিক ও এটা অনাকাঙ্খিত৷ এটা আইনের প্রতি অবজ্ঞা৷
তাহলে কি এসব পেশাজীবী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না?
অবশ্যই না৷ এজন্য সরকারের উচিত আইনানুগভাবে এসব ক্ষেত্রে কঠোর হওয়া৷
পেশাজীবীদের এই সিন্ডিকেট সমাজে কী ধরনের প্রভাব ফেলে?
এসব সিন্ডিকেটের ফলে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হন৷ তাঁরা ন্যায় বিচার বা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হন৷
ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে তো এই রমজান মাসেও সরকার চাইলেও পণ্যের দাম কমাতে পারছে না...
পেশাজীবী আর ব্যবসায়ীদের বিষয়টা এক রকম না৷ অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর হওয়া দরকার৷ বাজার যাতে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া সরকারের দায়িত্ব৷
সরকার কি সেটা করছে?
চেষ্টা করছে৷
সিন্ডিকেটের কারণে কি দুর্নীতি উৎসাহিত হয়?
ব্যাপক অর্থে যেটা দুর্নীতি, সেটার মধ্যে এটা পড়ে৷ আমরা সাধারণ মানুষ নীতি-নৈতিকতা বহির্ভূত যে কোনো কাজকেই দুর্নীতি মনে করি৷ কিন্তু সরকারের যে আইন আছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের যে আইন আছে, সেটাতে কিন্তু এই ব্যাপক অর্থে দুর্নীতিকে সংজ্ঞায়িত করেনি৷ দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনে কিছু শিডিউল অব অপরাধ আছে৷ সেগুলোকেই শুধুমাত্র দুর্নীতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রী কোনো একটা বিষয়কে দুর্নীতি বলেছেন৷ কিন্তু সেটা দুর্নীতির আইনের সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে না৷ তবে সত্যিকার অর্থে এটা দুর্নীতি এতে কোনো সন্দেহ নেই৷
এখন কি তাহলে আইনগুলো সংশোধনের সময় এসেছে?
না, এটা সংশোধন করে হবে না৷ আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর যে ক্ষমতা, সেটা কিন্তু সীমিত৷ আমাদের যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, এখন সেই প্রতিষ্ঠানগুলোকে যদি তাদের সক্ষমতার চেয়ে বেশি দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাহলে কিন্তু সেই প্রতিষ্ঠান আরো অকার্যকর হয়ে পড়তে পারে৷
সম্প্রতি সংসদ সদস্য ক্রিকেটার মাশরাফির বিরুদ্ধে সমালোচনার ক্ষেত্রে চিকিৎসক পেশাজীবীদের একটা সমন্বয় দেখা গেল৷ এটা কিভাবে ঠেকানো যাবে?
উনি ডাক্তারদের যে আক্রোশের মধ্যে পড়েছেন, সেটাতে ডাক্তারদের আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না৷ তিনি যেটা করেছেন সব জনপ্রতিনিধির তা-ই করা উচিত৷ জনপ্রতিনিধিদের প্রধান দায়িত্ব হলো সাধারণ মানুষের স্বার্থ দেখা৷ সাধারণ মানুষ যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হন, প্রবঞ্চিত না হন, অধিকার-বঞ্চিত না হন সেদিকে লক্ষ্য রাখা৷ তাই আমি মনে করি, এই সংসদ সদস্য যে কাজটি করেছেন, তা সঠিক ছিল৷
এক্ষেত্রে তো খুব একটা বড় ধরনের ব্যবস্থা নিতে দেখিনি...
যদি খুব একটা ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তাহলে সেটা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা৷
এই ধরনের সিন্ডিকেট ভাঙতে হলে সরকারকে কী করতে হবে?
সরকারকে কঠোর হতে হবে, আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে৷ যদি আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয় তাহলে অনৈতিক কার্যক্রম আরো বেশি উৎসাহিত হবে৷
এই সিন্ডিকেট ভাঙতে গেলে সরকার কী ধরনের সংকটে পড়তে পারে?
আপনাদের মনে আছে কিনা জানি না, বহু বছর আগে ব্যাংকের লোকেরা সরকারকে জিম্মি করে ফেলেছিল৷ তখনকার প্রেসিডেন্ট সাত্তার সাহেব একসঙ্গে ১০ হাজার ব্যাংক কর্মচারীকে চাকরিচ্যূত করেন৷ তিনি কিন্তু খুব স্ট্রং মানুষ ছিলেন না৷ তারপরও তিনি এই ব্যাবস্থা নিয়েছিলেন৷ ওই ঘটনার পর ব্যাংকের কর্মচারীদের ওই আচরণ একেবারেই বদলে গিয়েছিল৷
সমাজে তো পেশাজীবী, ব্যবসায়ী সবারই সিন্ডিকেট আছে৷এখন সবার বিরুদ্ধে সরকার কী ব্যবস্থা নেবে?
এখানে সবাই তো একসঙ্গে হচ্ছে না৷ এখানে একটা গোষ্ঠীর সঙ্গে অন্য গোষ্ঠী মিলে সবাই একসঙ্গে বিদ্রোহ করবে না৷ সবার স্বার্থও এক না৷ তাই যখন যে গ্রুপ অনৈতিক কাজ করবে, তখনই তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে জনগণের সমর্থন থাকবে৷ আর জনসমর্থন থাকলে কেউ কিছু করতে পারে না৷ ধরেন, তাৎক্ষণিক সাফারিং হতে পারে৷ ওই যে ব্যাংকের কথা বললাম, তখন কিন্তু সাধারণ মানুষের তাৎক্ষণিক সমস্যা হয়েছিল, পরে কিন্তু সব ঠিক হয়ে গেছে৷ কঠোর হলে তা দীর্ঘমেয়াদে সুফল বয়ে আনে৷
এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে এখনই সরকারের কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?
যখনই অনৈতিক ও অরাজকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটবে, তখনই সরকারের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত৷ এখানে কারো প্রতি সদয় আচরণ করার কোনো যৌক্তিকতা নেই৷ কেউ অন্যায় করলে তার বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়াটা যৌক্তিক৷ আর না নেওয়া হলে অরাজক পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে৷
প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷