সিরিয়ার পরিস্থিতি
১০ এপ্রিল ২০১২বাস্তব পরিস্থিতি
১০ই এপ্রিলের মধ্যে শহরাঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহারের কাজ শুরু হওয়ার কথা৷ কিন্তু আসাদের সেনাবাহিনী হোমস ও হামা সহ একাধিক শহরে বিরোধীদের উপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে৷ বিরোধীদের সূত্র অনুযায়ী, মঙ্গলবার এই হামলায় কমপক্ষে ৩১ জন নিহত হয়েছে৷ মুখে অবশ্য তারা সেনা প্রত্যাহারের কথা বলে চলেছে৷ মস্কোয় সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়ালিদ মুয়াল্লেম দাবি করেছেন, যে কিছু প্রদেশ থেকে কিছু সেনা ইউনিট সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ কিন্তু তিনি অভিযোগ করেছেন, তুরস্কের মাধ্যমে বিদ্রোহীদের অস্ত্র সরবরাহ করা হচ্ছে৷ এই অবস্থায় নিরস্ত্রীকরণ কীভাবে সম্ভব, সেই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি৷ তিনি সিরিয়ায় আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন৷
‘সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস’ অবশ্য দাবি করছে, যে সিরিয়ার সরকার জাতিসংঘের শান্তি পরিকল্পনা পুরোপুরি অমান্য করছে৷ সংস্থার প্রধান রামি আব্দুল রহমান বলেন, এর ফলে দেশ গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে চলেছে৷ বিরোধী জাতীয় পরিষদের সদস্য শেখ আনাস আয়রুত বলেন, মুয়াল্লেম ডাহা মিথ্যা কথা বলছেন৷ বিশ্বকে বিভ্রান্ত করতে সিরিয়ার সরকার এমন কৌশল নিচ্ছে৷ পরিষদের আরেক সদস্য জেনিভায় বলেছেন, বর্তমান ৬ দফা শান্তি পরিকল্পনা বিফল হলে জাতিসংঘের দূত কোফি আন্নান’কে বিষয়টি নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের কাছে ফিরে যেতে হবে৷
বিরোধীদের অবস্থান
বিদ্রোহীদের বক্তব্য, আগে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করতে হবে৷ পরিকল্পনা অনুযায়ী বৃহস্পতিবারের মধ্যে শহরাঞ্চল থেকে সৈন্য ও সাঁজোয়া গাড়ি প্রত্যাহার না করলে তারা সংগ্রাম চালিয়ে যাবে৷ ‘ফ্রি সিরিয়ান আর্মি’র মুখপাত্র কর্নেল কাসেম সাদ আল-দিন বলেন, তার পরেই বিরোধীরা জাতিসংঘের পরিকল্পনা মেনে নিতে প্রস্তুত৷ তবে কোনো আংশিক অস্ত্রবিরতি মানবে না তারা৷ এদিকে উত্তরে হাসাকে প্রদেশে অজ্ঞাতপরিচয় আততায়ীদের গুলিতে ৬ সিরীয় সৈন্য নিহত হয়েছে৷
আন্তর্জাতিক তৎপরতা
আপাতত সবার নজর মস্কোর দিকে৷ রাশিয়া এতকাল সিরিয়ার প্রশ্নে আন্তর্জাতিক সমাজের পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করে আসছিল৷ কিন্তু আরব লিগ ও জাতিসংঘের শান্তি পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে রাশিয়া ও চীন৷ ফলে আসাদ প্রশাসনের বর্তমান আচরণে কিছুটা বিরক্ত সেদেশ৷ রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ মস্কোয় সিরিয়ার উদ্দেশ্যে অস্ত্রবিরতির শর্ত অক্ষরে-অক্ষরে মেনে চলার দাবি জানিয়েছেন৷ আসাদ প্রশাসন এখনো মরিয়া হয়ে শেষ রক্ষা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷
এদিকে সোমবার তুরস্কের ভূখণ্ডে অবস্থিত যে শরণার্থী শিবিরের দিকে লক্ষ্য করে সিরিয়া থেকে গুলি চালানো হয়, কোফি আনান সেই শিবির পরিদর্শন করেছেন৷ সেখানেও আসাদ-বিরোধী বিক্ষোভ চলছিল৷ তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রেচেপ তাইয়িপ এর্দোয়ানও কড়া ভাষায় সিরিয়া থেকে হামলার নিন্দা করেছেন৷ এই অবস্থায় তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেত দোভোতলু বেইজিং সফর কাটছাঁট করে দেশে ফিরেছেন৷ তিনি এবিষয়ে আলোচনা করতে সৌদি আরব যাচ্ছেন৷ এদিকে লেবানন সীমান্তে সিরিয়া থেকে গুলি চালানোর ঘটনায় এক টেলিভিশন ক্যামেরাম্যানের মৃত্যু হয়েছে৷
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ