মার্কিন সেনা প্রত্যাহারে সুফল পাচ্ছে কে?
৯ অক্টোবর ২০১৯সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের এক হাজারের মত সৈন্য রয়েছে৷ তার মধ্যে তুরস্কের সীমান্ত এলাকা থেকে মাত্র দুই ডজন সেনা প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন৷
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মার্কিন সেনা প্রত্যাহার হওয়ায় সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সের (এসডিএফ) যোদ্ধারা আঙ্কারার সাঁড়াশি আক্রমণের শিকার হতে পারেন৷ রাশিয়া, ইরান, সিরিয়া সরকার ও আইএস- এদের সবাই অঞ্চলটিতে সুফল লাভের চেষ্টা চালাচ্ছে৷
মঙ্গলবার কিছু মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর ওই অঞ্চলে অভিযানের প্রস্তুতি নিয়েছে তুরস্ক৷ কুর্দি যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে এসডিএফকে নির্মূল করে তুরস্ক কয়েক লাখ সিরীয় শরণার্থীর জন্য একটি নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করতে চায়৷
এমন পরিস্থিতিতে কুর্দি যোদ্ধারা বাশার আল আসাদ সরকারের সঙ্গে জোট বাধতে চাইলেও সেই আলোচনা দূর্বল হয়ে গেছে৷ মঙ্গলবার এসডিএফ এর কমান্ডার-ইন-চিফ মাজলুম আবদী অংশীদারিত্বের প্রস্তাব দেন৷ সিরিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আল মাকদাদ কুর্দিদের সংলাপের প্রস্তাব দিয়ে জাহান্নামে না যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন৷
এসডিএফ জোটের মুখপাত্র সালিহ মুসলিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, সিরিয়ার সরকার যদি এই অঞ্চলের স্বায়ত্তশাসিত ব্যবস্থা রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেয় তবেই তারা সংলাপে বসবেন৷ এটি একীভূত সিরিয়ার অংশ হওয়া উচিত৷ যদি তারা এ জাতীয় সমাধান চায় তবে তাদের সঙ্গে সংলাপ হতে পারে৷ তবে আমি মনে করি সিরিয়ার সরকার ইরান ও রাশিয়াকে ছাড়া নিজেরা এ কাজ করার মত স্বাধীন নয়৷
ইসলামী রাষ্ট্রবিরোধী জোটের সাবেক মার্কিন দূত ব্রেট ম্যাকগুর্ক সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারে ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তকে রাশিয়া, ইরান এবং আইএসের জন্য উপহার হিসাবে বর্ণনা করেছেন৷
আর এসডিএফ জোটের মুখপাত্র মুসলিম বলছেন, তুরস্ক এই অঞ্চলে জিহাদিদের আরো কাছাকাছি এনে বিশেষ এক ধরনের অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করবে৷... কারণ তুরস্ক তাদের সাথে বাণিজ্য করছিল এবং তাদের কাছ থেকে তেলও পাচ্ছিল৷ সম্ভবত তুরস্ক নতুন খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চলেছে৷
উত্তরে তুরস্কের সঙ্গে যখন যুদ্ধের দামামা বাজছে তখন এসডিএফকে তার নিয়ন্ত্রণাধীন ক্যাম্পগুলোতে প্রায় ৭০ হাজার আইএস যোদ্ধা এবং বন্দীদের সঙ্গেও লড়াই করতে হবে৷
সালিহ মুসলিমও মনে করেন তুরস্ক আটককৃতদের দায়িত্ব নেবে৷ কারণ দেশটি আইএস সদস্যদের সমর্থন ও অস্ত্র দিয়ে সিরিয়ায় পাঠায়৷ তারা তাদের পুনর্গঠন করতে এবং ইউরোপের বিরুদ্ধে ব্ল্যাকমেল করতে ব্যবহার করবে৷
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটবিরোধী লড়াইয়ের মিত্র কুর্দিদের পাশ থেকে সরে এসে এভাবে তাদের ওপর আক্রমণের পথ করে দেয়ায় রিপাবলিকানদেরও তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন ট্রাম্প৷ মার্কিন প্রেসিডেন্টকে সিদ্ধান্ত বদলাতেও অনুরোধ জানিয়েছিলেন অনেকে৷
যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণার পর তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সিরীয় সীমান্তে অভিযানের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বলে টুইটারে জানিয়েছে৷ ট্রাম্পো টুইটারে লিখেছেন, ‘সীমার বাইরে' কিছু করলে তিনি তুরস্কের অর্থনীতি ‘পুরোপুরি ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন' করে দেবেন৷
নেটো সদস্য এই দুই দেশ একসময় একে অপরের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে টানাপোড়েন দেখা যাচ্ছে৷ কূটনৈতিক ওই টানাপোড়েনের সূত্র ধরেই গত বছর যুক্তরাষ্ট্র তুরস্কের বেশ কিছু পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে দিয়েছিল, নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল অনেক কর্মকর্তার ওপর৷
টম অ্যালিনসন/এসআই/কেএম