সিরিয়ায় সংকট অব্যাহত
১৪ অক্টোবর ২০১৩সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে রবিবার দুটি আত্মঘাতী গাড়ি বোমা হামলা ঘটেছে৷ সরকারি টেলিভিশন ও রেডিও ভবনের কাছে এই বিস্ফোরণে অবশ্য হতাহতের কোনো খবর নেই৷ এদিকে ইদলিব প্রদেশে অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতিরা আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও সিরীয় আরব রেড ক্রিসেন্ট-এর সাতজন কর্মীকে অপহরণ করেছে৷ আইসিআরসি অবিলম্বে তাদের মুক্তির ডাক দিয়েছে৷
সিরিয়া সংকট নিরসনে রাজনৈতিক সমাধানের লক্ষ্যে জেনিভায় এক সম্মেলনের আয়োজন করা হচ্ছে৷ কিন্তু বিরোধী সিরীয় জাতীয় পরিষদ এই সম্মেলন বর্জন করবে বলে জানিয়েছে৷ গত ২১শে আগস্ট দামেস্কের উপকণ্ঠে সারিন গ্যাস হামলার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় প্রতিবাদ হিসেবে তারা এই অবস্থান নিয়েছে৷
একতরফা মার্কিন হামলার বিকল্প হিসেবে সিরিয়ার সরকারি ভাণ্ডারে রাসায়নিক অস্ত্র চিহ্নিত করে সেগুলি ধ্বংসের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে সদ্য নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী আন্তর্জাতিক রাসায়নিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ সংগঠন বা ওপিসিডাব্লিউ৷ জাতিসংঘের সঙ্গে তাদের যৌথ মিশনে প্রায় ৬০ জন বিশেষজ্ঞ কাজ করছেন৷ মিশনের প্রধান হিসেবে এবার সিগরিড কাগ-কে নিযুক্ত করা হচ্ছে৷ বুধবার নিরাপত্তা পরিষদের সম্মতি পেলে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করবেন৷
সিরিয়া সংকটের চরিত্র যে আরব বসন্তের আর পাঁচটা ঘটনার মতো নয়, তা গোটা বিশ্বের কাছে এতদিনে স্পষ্ট হয়ে গেছে৷ স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে যারা সংগ্রাম চালাচ্ছে, তাদের মধ্যে রয়েছে আল-নুসরা ফ্রন্ট-এর মতো আল-কায়েদার ঘনিষ্ঠ শক্তি৷ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি অনেক বিরোধী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠছে৷ সংকটের অবসান ঘটলে অভিযুক্তদের বিচারের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে৷ সিরিয়ার জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনালের ৩০ পৃষ্ঠার একটি ‘ব্লু-প্রিন্ট' তৈরি করেছেন ডেভিড ক্রেন-এর নেতৃত্বে কয়েকজন বিচারক৷ সিয়েরা লিওন-এর যুদ্ধাপরাধ আদালতের প্রধান কৌঁসুলি ছিলেন ক্রেন৷ সেই আদালত লাইবেরিয়ার যুদ্ধবাজ নেতা চার্লস টেলরকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিলো৷
সিরিয়ার সংকট শেষ হবার পর পরিস্থিতি কী হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়৷ এমনকি সিরিয়ার যুদ্ধাপরাধের বিষয়টি দ্য হেগ-এর আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের এক্তিয়ারে পড়বে কি না, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে৷ তবে ডেভিড ক্রেন মনে করেন, আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখলে যু্দ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা সহজ হয়৷ তাই সিরিয়ার বিরোধী পক্ষ, কিছু এনজিও সহ বিভিন্ন সূত্রের সাহায্যে তিনি ২০১১ সালের মার্চ মাস থেকে সিরিয়ায় এই ধরনের অপরাধের ঘটনা নথিভুক্ত করে চলেছেন৷ তাঁর মতে, প্রথমদিকে প্রেসিডেন্ট আসাদ ও তাঁর সহযোগীরাই প্রায় ৯০ শতাংশ অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন৷ বর্তমানে সরকার ও বিরোধীদের অপরাধের মাত্রা প্রায় সমান পর্যায়ে পৌঁছেছে৷
এসবি/ডিজি (এএফপি, রয়টার্স)