জার্মানির কি ভূমিকা হবে?
২৯ আগস্ট ২০১৩জাতিসংঘের পরিদর্শকরা রাসায়নিক অস্ত্রের হদিশ খোঁজা যথাশীঘ্র সমাপ্ত করে শনিবার সকালেই সিরিয়া পরিত্যাগ করবেন, বলে জানিয়েছেন মহাসচিব বান কি-মুন৷ যেখানে খোদ সিরিয়া সরকার ঐ পরিদর্শকদের আরো কিছু সময় সিরিয়ায় থেকে আরো গোটা তিন সাইট পরিদর্শনের অনুরোধ জানিয়েছে! পরিস্থতি যে কতটা জরুরি, তা এ থেকেই বোঝা যায়৷
বুধবার সন্ধ্যায় বারাক ওবামা অবশ্য স্পষ্ট বলেছেন যে, তিনি সিরিয়ার উপর হামলা চালানোর কোনো পরিকল্পনা এখনো পর্যন্ত অনুমোদন করেননি৷ অন্যদিকে তিনি এ-ও জানিয়েছেন যে, সে সিদ্ধান্ত নিতে হলে তিনি জাতিসংঘের সনদের জন্য অপেক্ষা করার অভিপ্রায় রাখেন না৷ ওবামার যুক্তি হলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় আসাদ প্রশাসনের রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করা সম্পর্কে পর্যাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ পেয়েছে এবং সে সাক্ষ্য-প্রমাণ যথাশীঘ্র প্রকাশ করা হবে৷
ওদিকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন সিরিয়ার উপরে হানা দেওয়ার পরিকল্পনা পার্লামেন্ট পাস করাতে গিয়ে বিরোধী লেবার দল, এমনকি নিজের কনজারভেটিভ দলের একাংশের বাধা পেয়েছেন৷ সাংসদরা আগে জাতিসংঘের অস্ত্র পরিদর্শকদের বিবরণ দেখতে চান৷ এদিকে ব্রিটেন সাইপ্রাসে তাদের আক্রোতিরি ঘাঁটিতে আরএএফএর যে ছ'টি টাইফুন জঙ্গিজেট পাঠিয়েছে, সেগুলি শুধুমাত্র ‘‘সতর্কতা ও সাবধানতা বশত'', বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়৷ ওদিকে রাশিয়া পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে যে দু'টি যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছে – একটি মিসাইল ক্রুইজার ও একটি অ্যান্টি-সাবমেরিন জাহাজ – সেগুলি নাকি ভূমধ্যসাগরে রুশ জঙ্গিজাহাজগুলির রদবদলের একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অঙ্গ৷
সব মিলিয়ে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ৷ কাজেই জার্মানিকে ভাবতে হচ্ছে, জার্মানি সিরিয়ার বিরুদ্ধে কোনো সামরিক পদক্ষেপ সমর্থন করবে কিনা, করলেও, কিভাবে করবে৷ মৌখিকভাবে জার্মান সরকার পশ্চিমি মিত্রবর্গের পাশে দাঁড়িয়েছেন৷ কিন্তু যেহেতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অথবা সামরিক অভিযানে সম্মত অপরাপর মিত্রদেশ পরিকল্পিত সামরিক পদক্ষেপের ধারা-প্রকৃতি নির্দিষ্ট করেনি, সেজন্য জার্মান সরকারও সে অভিযানে সম্ভাব্য জার্মান ভূমিকা নির্দিষ্ট করার কোনো প্রয়োজন বোধ করেননি৷
‘‘আমাদের হাতে কি কি সামরিক বিকল্প আছে, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার ব্যাপারে আমার কিছু বলব না,'' বলে মন্তব্য করেছেন জার্মান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র৷ অপরদিকে সিরিয়ার মতো ঘটনাবলীর ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের হাতে এক ধরনের সামরিক ‘‘টুল কিট'' থাকে৷ বিগত ১৫ বছরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে দৃশ্যত একাধিকবার ঐ ‘‘যন্ত্রপাতির বাক্সো'' বের করতে হয়েছে, যেমন ১৯৯৯ সালে কোসোভো যুদ্ধের সময় জার্মানির টর্নাডো জঙ্গিজেটগুলি সার্বিয়ার উপর ন্যাটোর বিমান আক্রমণে অংশ নেয়৷ ২০০২ সাল যাবৎ জার্মান সৈন্যরা আফগানিস্তানে নিযুক্ত রয়েছে৷ সম্প্রতি পূর্ব আফ্রিকার মালিতে ফরাসি সামরিক হস্তক্ষেপ্রে সময় জার্মান বিমানবাহিনী ফরাসি জঙ্গিজেটগুলিকে উড়ন্ত অবস্থায় তেল নিতে সাহায্য করে৷ কাজেই সিরিয়াতেও জার্মান বিমানবাহিনীর একটা অনুরূপ ভূমিকা কল্পনা করা সম্ভব৷
জার্মান নৌবাহিনীর কথা ভাবলে, জার্মানির একাধিক পর্যবেক্ষণ ও যুদ্ধজাহাজ বর্তমানে ভূমধ্যসাগরে টহল দিচ্ছে৷ তার মধ্যে ‘‘ওকার'' নামধারী একটি জাহাজ আছে, যা আশপাশের বেতার ও টেলিফোন সম্প্রচারের উপর আড়ি পাততে পারে৷ সিরিয়ার বিরুদ্ধে ন্যাটোর অভিযানে জার্মানির অ্যাওয়াক্স প্রণালী যুক্ত বিমানগুলিও আকাশে নজরদারির কাজ করতে পারে৷
শেষ প্রশ্ন যেটা থেকে যায়, সেটা হলো: পশ্চিমা শক্তিরা কি সত্যিই জার্মানির অংশগ্রহণে আগ্রহী? তাদের কি সত্যিই সেই প্রত্যাশা রাখে? ভূমধ্যসাগরে অবস্থিত জাহাজ থেকে সিরিয়ার দিকে মার্শ রকেট নিক্ষেপের জন্য যুক্তরাষ্ট্র কি ব্রিটেনের জার্মান সাহায্যের প্রয়োজন পড়বে না৷ লিবিয়া সংক্রান্ত ভোটে জার্মানি বিরত থাকার পর অন্তত পশ্চিমা মিত্রবর্গের কাছে জার্মানির ভাবমূর্তি – বিশেষ করে সামরিক অভিযানের ক্ষেত্রে – অনেকটা ম্লান হয়ে এসেছে৷ কাজেই জার্মানি যদি এবার ‘‘হোলিয়ার দ্যান দাউ'' – আমার তোমাদের চেয়ে পবিত্র – এই খেলা না খেলে, বাকিরা তা-তেই খুশি থাকবে৷