সিরিয়ায় হামলা স্থগিত
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৩সিরিয়া ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান বর্তমানে কী? একদিকে বিশ্ব সম্প্রদায়, অন্যদিকে, খোদ মার্কিনিরা যখন সিরিয়ায় আগ্রাসনের বিপক্ষে৷ তাই ওবামার কণ্ঠে সিরিয়ায় সামরিক অভিযান স্থগিতেরই ইঙ্গিত পাওয়া গেল৷ আর মার্কিন সেনেটে ভোট পিছিয়ে যাওয়া এবং ওবামার প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের মন্তব্যে অনেকটা এমন আভাসই পাওয়া যাচ্ছে৷
সোমবার রাতে এবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওবামা বলেন, সিরিয়া সরকারের কাছে থাকা রাসায়নিক অস্ত্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে জমা দিতে রাশিয়ার আহ্বানের সাথে তিনি একমত৷ আর এমনটা হলে যুক্তরাষ্ট্র দেশটিতে হামলা চালানোর পরিকল্পনা স্থগিত করতে পারে৷
তিনি বলেন, এখানে তাদের জাতীয় নিরাপত্তার বিষয় জড়িয়ে আছে৷ যদি এই সমস্যার সমাধান কোনো সামরিক অভিযান ছাড়াই সম্ভব হয়, তবে সেটা সবার জন্যই উত্তম বলে মন্তব্য করেন তিনি৷
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ৬টি সংবাদ মাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ওবামা৷ সবগুলোতেই তার একই মতামত, কূটনৈতিক সমাধান খুঁজছেন তিনি৷ রাশিয়ার আহ্বানকে ইতিবাচক হিসেবে মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিকে বলেছেন রাশিয়ার কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে সরাসরি কথা বলতে৷
জন কেরির একই সুর
সিরিয়া সরকারের কাছে থাকা রাসায়নিক অস্ত্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে জমা দিতে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রী সের্গেই লাভরভ যে আহ্বান জানিয়েছিলেন তার সাথে একমত হয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেন, যদি রাসায়নিক অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ বিশ্ব সম্প্রদায়ের হাতে তুলে দেয়া হয় তাহলে সেখানে সেনা অভিযানের কোনো দরকার নেই৷
পিছিয়ে গেল কংগ্রেস ভোট
সিরিয়ায় সামরিক হামলার ব্যাপারে বুধবার কংগ্রেসে ভোটাভুটি হওয়ার কথা থাকলেও সেনেটের মেজরিটি লিডার হ্যারি রিড তা পিছিয়ে দিয়েছেন৷
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের একটি পত্রিকার জরিপ অনুযায়ী, সিরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের ব্যাপারে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ এবং উচ্চকক্ষ সেনেটের অর্ধেকেরও বেশি সদস্য বিরোধিতা বা বিরোধিতার মতো মতামত দিয়েছেন৷ সোমবার রয়টার্সের এক জরিপে দেখা গেছে, সিরিয়ায় অভিযান চালানোর বিপক্ষে বেশিরভাগ অ্যামেরিকান৷ সেপ্টেম্বরের ৫ থেকে ৯ তারিখ পর্যন্ত চালানো ঐ জরিপে দেখা যাচ্ছে, ৬৩ ভাগ মার্কিনি সিরিয়ায় হামলার বিপক্ষে৷
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া
সোমবার রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, সিরিয়া তাদের সব রাসায়নিক অস্ত্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হাতে যদি তুলে দেয় এবং সেগুলো ধ্বংস করে দেয়া হয়, তাহলে সেখানে হামলা চালানোর কোনো প্রয়োজন পড়বে না৷ তাই সিরিয়াকে রাসায়নিক অস্ত্র তুলে দেয়ার আহ্বান জানান তিনি৷
মঙ্গলবার চীন, ইরান এবং জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন রাশিয়ার এ আহ্বানকে স্বাগত জানিয়েছে৷ এমনকি রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংসের স্থানটি পর্যবেক্ষণের জন্য জাতিসংঘ প্রতিনিধিদের সেখানে প্রবেশের অনুমতি দিতে সিরিয়া সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বান কি মুন৷ অন্যদিকে, ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারজেই আফগাম জানিয়েছেন, তারা চান ঐ অঞ্চলে গণবিধ্বংসী সব অস্ত্র ধ্বংস হোক৷ এই উদ্যোগের ফলে সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হাতে রাসায়নিক অস্ত্র চলে যাবার আশঙ্কা থাকবে না৷
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, ২১ আগস্ট দামেস্কের উপকণ্ঠে সিরিয়ার সেনাবাহিনী রাসায়নিক হামলা চালিয়ে কয়েকশ মানুষকে হত্যা করেছে বলে তাদের কাছে শক্তিশালী তথ্য প্রমাণ রয়েছে৷ সে সব তথ্য তারা পরীক্ষা করে দেখছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি৷ মঙ্গলবার প্রকাশিত রিপোর্টে নিউইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থাটি বলছে, হামলায় সারিন নামে একটি রাসায়নিক নার্ভ এজেন্ট ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছে তারা৷
এপিবি/এসবি (এপি/এএফপি/রয়টার্স)