1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সিসি ক্যামেরাহীন ট্রেনে অগ্নিসন্ত্রাস রুখবে আনসার

২০ ডিসেম্বর ২০২৩

ঢাকার তেজগাঁওয়ে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে আগুন দেয়ার ঘটনায় মা ও শিশুসহ চারজনের মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউ। এ ঘটনার পর সড়ক ও রেলপথে নিরাপত্তা আরো বাড়ানো হয়েছে।

https://p.dw.com/p/4aPc3
আগুন নেভানোর পর ছবি
মঙ্গলবার ভোরে ঢাকার তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে ‘মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস' ট্রেনের তিনটি বগিতে আগুন দেয়া হয়,ছবি: Mahmud Hossain Opu/AP Photo/picture alliance

সারাদেশে রেল পথে আনসার মোতায়েন করা হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য ট্রেনের গতি কমানো হয়েছে। আর রাতে ট্রেন ছাড়ার আগে আগাম রেকি করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সড়ক পথেও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে হাইওয়ে পুলিশ বাড়ানো হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। প্রায় দেড় হজার পয়েন্টে আনসার মোতায়েন শুরু হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ১৯ ডিসেম্বর ২৪ ঘন্টায় চারটি আগুনের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে মঙ্গলবার ভোরে ঢাকার তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে ‘মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস' ট্রেনের তিনটি বগিতে আগুনের ঘটনা খুবই ভয়াবহ। এছাড়া ওই দিন  সকালে শনির আখড়া, বনশ্রী এবং গুলিস্তান এলাকায় মোট তিনটি বাসে আগুন দেয়া হয়।

ফায়ার সার্ভিস আরো জানায়,  গত ২৮ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত  মোট ২৮০টি যানবাহন এবং ১৫টি স্থাপনায় আগুন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বাস ১৭৫টি, ট্রাক ৪৫টি, কাভার্ড ভ্যান ২৩টি, মোটর সাইকেল আটটি এবং ট্রেনসহ অন্যান্য যানবাহন ২৯টি।

হরতাল-অবরোধে ট্রেনে নাশকতা নতুন মাত্রা যোগ করেছে। মঙ্গলবার তেজগাঁয়ের ঘটনার দিনই তিস্তা-কুঁড়িগ্রাম রেলনাইনের নাট বল্টু খুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা । ১৩ ডিসেম্বর গাজীপুরের জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ রেললাইন অংশ বিশেষ কেটে ফেলায় ট্রেনের সাতটি বগি লাইনচ্যূত হয়ে একজন যাত্রী নিহত হন। ট্রেনটিতে তখন তেমন যাত্রী না থাকায় অনেক বড় ধরনের প্রাণহানি থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে। এর আগে ১৬ নভেম্বর টাঙ্গাইল স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রেনে আগুন দেয়া হলে তিনটি বগি পুড়ে যায়। ১৯ নভেম্বর সরিষাবাড়ি রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা যমুনা এক্সপ্রেসে আগুন দেয়া হয়। ওই আগুনে দুইটি বগি পুড়ে যায়। ২২ নভেম্বর সিলেটে উপবন এক্সপ্রেসে আগুন দেয়া হয়।

পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, হরতাল-অবরোধ চলাকালে ৩১ অক্টোবর থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত ট্রেনে ২৪টি নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। এইসব নাশকতার মধ্যে আগুন দেয়া ছাড়াও রেললাইন কেটে ফেলা, নাট বল্টু ও ফিসপ্লেট খুলে নেয়ার ঘটনা আছে। এ পর্যন্ত নাশকতায় ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

নিরাপত্তা আরো বাড়ানো হয়েছে: সাগর

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, "এইসব ঘটনার দায়-দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। কারণ, দেশের মানুষ ও যাত্রীদের জান-মালের নিরাপত্তার দায়িত্ব সরকারের। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে যারা নষ্ট রাজনীতি করছে তাদেরও দায়িত্ব নিতে হবে।”

তিনি বলেন, "বিরোধীদের হরতাল-অবরোধের মধ্যে দিন দিন নাশকতা বাড়ছে। এতে সাধারণ মানুষ ও যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। নিরীহ মানুষের জীবন যাচ্ছে । জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা বাইরে বের হচ্ছেন।”

তার কথা, "এইসব নাশকতার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের চিহ্নিত করতে হবে। কেনো নিরীহ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হন। আর যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচেছন , নিহত ও আহত হচ্ছেন, তাদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদেও ক্ষতিপুরণ দিতে হবে। আমরা দেখেছি, সরকার বাস মালিকদের ক্ষতিপূরণ দিলেও যাত্রীদের কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়া হয় না৷''

এদিকে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এক বিবৃতিতে বলেছেন, "রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন বা আন্দোলনের নামে মানুষ পোড়ানোর অধিকার কোনো রাজনৈতিক দলের নেই।” তিনি  ট্রেনে দেয়া আগুনে তিন বছরের শিশুসহ চারজনকে হত্যা, গণপরিবহণে আগুন, ট্রেন লাইন কাটা ইত্যাদি ধ্বংসাত্মক ঘটনায় সব রাজনৈতিক মহলকে বিবেকহীন রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্ট ও জীবননাশের রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘‘চলমান আন্দোলনের মাঝে এসব ধারাবাহিক নৃশংসতার দায় আন্দোলনরত দলগুলো এড়াতে পারে না। আবার এর পেছনে সরকারি মদদ রয়েছে বলে অভিযোগ মিথ্যা হলে তা প্রমাণের দায়িত্ব সরকারের ও সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের। আমরা সত্যিকারের অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই। নৃশংসতার সুযোগসন্ধানী রাজনীতি জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা বা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবি আদায়ের পথ হতে পারে না। অন্যদিকে সহিংসতা প্রতিরোধের নামে বলপ্রয়োগ, সংগঠনের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুন্ন করা হবে, ঢালাও ধরপাকড় হবে, বিনা বিচারে মানুষ জেল খাটবে, তা-ও কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমরা সহিংসতা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ চাই, সহিংসতার বিচার চাই; কিন্তু বিচার নিয়ে রাজনীতি দেখতে চাই না।''

নিরপত্তার জন্য রেলের গতি কমিয়ে দিয়েছি: তালুকদার

এদিকে রেলে নাশকতা প্রতিরোধে দেশের রেল ও সড়ক পথে ১৩ হাজার আনসার নিয়োগের কাজ শুরু হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এক হাজার ৫৮১ পয়েন্টে তারা দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া ট্রেনসহ যানবাহনের ভিতরেও নিরাপত্তার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার জানান, প্রচলিত নিরাপত্তা ব্যাবস্থার পাশাপশি আনসার মোতায়েনও শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, "আমাদের পশ্চিমাঞ্চলে এক হাজার ৫০০ আনসার দেয়া হয়েছে। তারা আমাদের ফোর্স এবং পুলিশের সঙ্গে মিলে ট্রেনের ভিতরে দায়িত্ব পালন করবেন।”

" এছাড়া আমরা নিরপত্তার জন্য রেলের গতি কমিয়ে দিয়েছি। আর রাতের বেলা মূল ট্রেন যাওয়ার আগে আরেকটি ছোট পাইলটিং ইঞ্জিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে,” বলে জানান তিনি। তবে ট্রেনের ভিতরে এখন সিসি ক্যামেরা নেই বলে জানান তিনি।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর জানান, এরই মধ্যে পুলিশের আইজি  সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে  রেল পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করে সারা দেশে যানবাহনে নিরাপত্তা বাড়িয়েছেন।  তিনি বলেন, "নির্বাচনকে সামনে রেখে সারা দেশে এমনিতেই বাড়তি নিরাপত্তা আছে। তারপরও আরো নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারী।”

তিনি দাবি করেন, " এইসব ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। গাজীপুরের অপরাধীদের চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তেজগাঁওয়ের ঘটনায় মামলা হয়েছে। তদন্ত চলছে। দ্রুতই অপরাধীরা আটক হবে।”

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য