1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
খেলাধুলাপর্তুগাল

সুইজারল্যান্ডের জালে পর্তুগালের গোল উৎসব

সামীউর রহমান ঢাকা
৭ ডিসেম্বর ২০২২

২০০৬ বিশ্বকাপের পর আবারও শেষ ষোলোর বাধা পেরিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে গেল পর্তুগাল। সুইজারল্যান্ডকে ৬-১ গোলে হারিয়ে শেষ আটে পর্তুগিজরা প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছে মরক্কোকে।

https://p.dw.com/p/4KZX4
FIFA Fußball WM 2022 in Katar | Portugal - Schweiz
ছবি: Matthias Koch/picture alliance

রূপকথা বললেও কম হয়ে যায়! ২১ বছর বয়সী গনসালো রামোস কাল প্রথমবারের মত শুরুর একাদশে খেলতে নেমেছিলেন বিশ্বকাপে। তাও ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর জায়গায়! উপলক্ষটা স্মরণীয় করে রাখলেন চোখ ধাঁধানো  হ্যাটট্রিকে। তাতেই ২০০৬ বিশ্বকাপের পর আবারও শেষ ষোলোর বাধা পেরিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে গেল পর্তুগাল। সুইজারল্যান্ডকে ৬-১ গোলে হারিয়ে শেষ আটে পর্তুগিজরা প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছে মরক্কোকে।

কিক-অফের আগে, যখন দুই দলের শুরুর একাদশের নাম দেখান হল তখন থেকেই সমর্থকদের  মনের ভেতর দ্বিধা। রোনাল্ডো নেই শুরুর একাদশে, সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে কি পারবে পর্তুগাল? লিওনেল মেসির আগেই কি বিদায় নিয়ে নেবেন সিআর সেভেন? দুজনেরই শেষ বিশ্বকাপ, খালি হাতে তো অন্তত একজনকে তো ফিরতেই হবে। তবে বেঞ্চে বসে বিদায়, ব্যপারটা তো রোনাল্ডোর প্রতি অন্যায়ই হবে।

রোনাল্ডোর জায়গায় শুরুর একাদশে যাকে দলে দেখা গেল, সেই ২৬ নম্বর জার্সির গনসালো রামোস  বিশ্বকাপে প্রথমবারের মত শুরু থেকেই খেলতে নেমে এমন একটা গোল করলেন, যা মনে করাল রোনাল্ডোকেই। ম্যাচের তখন ১৭তম মিনিট, চতুর্থবারের মত বলে স্পর্শ করতে পেরেছেন ২১ বছর বয়সী রামোস। হোয়াও ফেলিক্সের পাসে বল পেয়ে বাম প্রান্ত দিয়ে বক্সের ভেতর ঢুকে বাম পায়ে যে বুলেট শটটা নিয়েছেন, তাতে ইয়ান সমারস জায়গা থেকে নড়ার সময়টাও পাননি। দূরহ কোণ, গায়ের সঙ্গে লেগে থাকা প্রতিপক্ষের মার্কার ছাড়িয়ে রামোসের শটে বলটা এত জোরে পোস্টের ভেতর ঢুকে জালে লেগে আবার বেরিয়ে এল যে চট করে অনেকে বুঝে উঠতে পারননি যে গোল হয়েছে নাকি ক্রসবারে লেগে বল ফিরে এসেছে।

এই গোলেই মাত্র ২১ বছর ১৬৯ দিন বয়সে বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে পর্তুগালের সবচেয়ে কম বয়সী গোলদাতা হয়ে গেলেন রামোস। বেনফিকায় খেলা এই ফরোয়ার্ড বেশ অনেকদিন ধরেই পর্তুগালের বয়সভিত্তিক ফুটবল দলের অংশ। ২০১৯ সালে উয়েফা অনূর্ধ ১৯ ফুটবল প্রতিযোগিতায় রানার্স আপ হয় পর্তুগাল, ফাইনালে হেরেছিল স্পেনের কাছে। সেই আসরে ৪ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন গনসালো রামোস। গত বছর উয়েফা অনূর্ধ-২১ ফুটবল প্রতিযোগিতারও ফাইনালে খেলেছিল পর্তুগাল, সেই দলেও ছিলেন রামোস।

মিনিট দশেক পর জারদান শাকিরি ফ্রি-কিকে প্রায় গোল করেই ফেলেছিলেন। ডানপ্রান্তে বক্সের একটু বাইরে থেকে নেয়া জোরাল ফ্রি কিকটা মানবপ্রাচীরকে ডিঙ্গিয়ে গোলপোস্টেই ছিল, পর্তুগিজ গোলরক্ষক ডিয়োগো কস্তা ডানে ঝাঁপিয়ে শেষ মুহূর্তে কর্নারের বিনিময়ে গোল বাঁচান। এগিয়ে যাবার সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেনি সুইসরা বরং ৩৩তম মিনিটে পেপের গোলে পিছিয়ে পড়ে ২-০ গোলে। কর্নার কিকটা নিয়েছিলেন ব্রুনো ফার্নান্দেস। উড়ে এসে লাফিয়ে যেভাবে নিজের মাথাটা সুইস রক্ষণের খেলোয়াড়দের উপরে নিয়ে এসে বলে লাগালেন পেপে, তাতে কে বলবে তার বয়স চল্লিশ ছুঁই ছুঁই। কাল সুইসদের বিপক্ষে ম্যাচের প্রথমার্ধের দুটো গোলে দুটো দারুণ রেকর্ড হয়েছে। ২১ বছর ১৬৯ বছর বয়সী রামোস গোল করে হয়েছেন নকআউটে গোল করা পর্তুগালের সবচেয়ে কমবয়সী গোলদাতা আর পেপে ৩৯ বছর ২৮৩ দিন বয়সে হয়েছেন সবচেয়ে বেশি বয়সী গোলদাতা।

দ্বিতীয়ার্ধ শেষের আগে, ৪৩ মিনিটে গোলের আরেকটা সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিলেন রামোস। গোলরক্ষককে একা পেয়েও বুটের টোকায় সোজা বল তুলে দিয়েছেন ইয়ান সমারসের হাতে।

তবে নিজের দ্বিতীয় গোলের জন্য খুব বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি রামোসকে। দ্বিতীয়ার্ধে খেলা শুরুর মিনিট দশেকের মাথাতেই স্কোরশিটে আবার নাম লেখান এই পর্তুগিজ তরুণ।  ম্যাচের ৫১ মিনিটে দালোর নিচু করে বাড়ানো ক্রসে পা ছুঁইয়ে সমারসকে ফাঁকি দিয়ে বল জালে পাঠান রামোস। ম্যাচে তার দ্বিতীয় গোলে হতভম্ব নিজেই, উল্লাসটাও করতে গিয়ে বোধহয় তার বিশ্বাস হচ্ছিল না।

৫৫ মিনিটে আবারও গোল, এবার রাফায়েল গেরেরোর। একঘন্টারও কম সময়ে ৪ গোল দিয়ে ১০ ডিসেম্বর মরক্কোর সঙ্গে আল  থুমামা স্টেডিয়ামে দেখা হওয়াটা নিশ্চিত করে ফেলল ফের্নান্দো সান্তোসের দল।

তবে চমক এখনো ফুরায়নি! ৬৭ মিনিটে চমৎকার এক গোলে নিজের হ্যাটট্রিক পূরণ করে ফেললেন রামোস। অঘটনের কাতার বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে দেখা যায়নি কোন হ্যাটট্রিক, ৫৬তম ম্যাচে এসে প্রথম কাউকে দেখা গেল এক ম্যাচে তিন গোল করতে। সেটা তাও এমন এক ফুটবলারকে, গ্রুপ পর্বের দুই ম্যাচে মাঠে নেমে যে খেলেছে দুই ম্যাচ মিলিয়ে মাত্র ১০ মিনিট!

এর মাঝে অবশ্য সুইজারল্যান্ডের ম্যানুয়েল আকঞ্জি একটা গোল শোধ করেছেন, বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে সুইসদের প্রথম গোল। ওই গোলের মাহাত্ম্য এতটুকুই, খেলায় কোন প্রভাব নেই।

হ্যাটট্রিকের খানিকটা পর, ৭৪ মিনিটে রামোসকে তুলে নিয়ে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোকে নামিয়েছেন কোচ সান্তোস। তখন দর্শকরা তালি দিয়েছে, অফসাইডে থেকে একটা গোলও করেছেন রোনালদো, কিন্তু রামোসকে ভুলিয়ে দেবার মত কিছু করতে পারেননি। বরং শেষ দিকে রাফায়েল লিয়াও গোল করে স্কোরলাইন ৬-১ করে দিয়েছেন। লিয়াও এর গোলের মিনিট দুয়েক পর বেজেছে শেষ বাঁশি, তাতে করে নিশ্চিত হয়ে গেল সুইসদের বিদায় আর শেষ আটে পর্তুগালের জায়গা।

চেকোস্লাভাকিয়া ভেঙ্গে গেলেও ১৯৯০'র বিশ্বকাপে চেকোস্লোভাকিয়ার হয়ে শেষ ষোলোর ম্যাচে কোস্টারিকার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে টমাস স্কুরাভি যে রেকর্ডটা করেছিলেন, সেটা টিকে ছিল ৩২ বছর। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে রামোস ভেঙ্গে দিয়েছেন সেই রেকর্ডটাও।