ভারতে বিদেশিদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন
২৬ অক্টোবর ২০১৭পুলিশ জানিয়েছে, সুইজারল্যান্ডের লুজানের অধিবাসী ২৪ বছরের কোয়েন্টিন জেরেমি ক্লার্ক এবং তাঁর বান্ধবী মারি ড্রক্সজ গত ৩০শে সেপ্টেম্বর আগ্রায় বেড়াতে গিয়েছিলেন৷ গত শনিবার তাজমহল দেখে পরের দিন ফতেহপুর সিক্রিতে ঘুরতে যান ওই জুটি৷ ফতেহপুর সিক্রি দিল্লির কাছে অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র৷ ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া'কে ঐ তরুণ-তরুণী জানিয়েছেন, হামলাকারীরা তাদের পথ রোধ করে এবং তরুণীর সঙ্গে জোর করে সেলফি তোলার চেষ্টা করে৷ এরপর তাঁরা রাজি না হলে লাঠি আর পাথর নিয়ে হামলে পড়ে তাঁদের উপর৷ লাঠির বাড়ি মাথায় পড়লে তরুণটি মাটিতে পড়ে যায়৷
ফতেহপুর সিক্রির রেলস্টেশনের কাছে গত রবিবার ঘটেছে এই ঘটনা৷ পথচারীরা মোবাইল ফোনে ঘটনার ভিডিও ধারণ করেছেন, যেখানে আহত ঐ জুটিকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা গেছে৷
টাইমস অফ ইন্ডিয়া'র প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থা ডিপিএ জানিয়েছে, হামলার পর তাঁদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷ কিন্তু পরে তাঁদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে দিল্লির একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়৷ চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, যুবকটির মাথার খুলি ফেটে গেছে৷ তাঁর মস্তিষ্কে রক্ত জমেছে৷ আর তরুণীটির হাত ভেঙে গিয়েছে৷
এরইমধ্যে উত্তরপ্রদেশ রাজ্য সরকারের কাছে ঘটনার বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ৷ টুইটারে লিখেছেন, ‘‘আমি এই প্রতিবেদনটি এইমাত্র দেখেছি৷ রাজ্য সরকারের কাছ থেকে এ সংক্রান্ত রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছি৷''
এর পরের টুইটে তিনি জানিয়েছেন, আহত ঐ যুগলের খোঁজ-খবর নিতে রওনা হয়েছেন তাঁর কর্মকর্তারা৷ রাজ্য পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হামলার পেছনে চারজন ব্যক্তির হাত রয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা৷
রাজ্যের সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা অমিত পাঠক সংবাদ সংস্থা এএফপিকে ফোনে জানিয়েছেন, আগ্রার পুলিশ হামলাকারীদের কয়েকজনকে চিহ্নিত করেছে৷ তিনি জানিয়েছেন, ‘‘এদের মধ্যে কয়েকজন অপ্রাপ্তবয়স্ক৷ আমরা তদন্ত করছি৷ তারা অপ্রাপ্তবয়স্ক হলেও আইন অনুযায়ী, তাদের কিশোর আদালতে পাঠানো হবে৷'' অন্য এক পুলিশ কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার পরে জানিয়েছেন, সন্দেহভাজন একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছেন তাঁরা৷
তবে ঠিক কী কারণে সুইস যুগলের উপর হামলা চালানো হলো, সেটা এখনও পরিষ্কার নয়৷
সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে যৌন সহিংসতা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে এবং অনেক পশ্চিমা দেশ ভারত সফরের সময় হামলার ঝুঁকি আছে বলে পর্যটকদের সতর্কও করে দিয়েছে৷
সুইস দূতাবাসের ওয়েবসাইটে পর্যটকদের ভারতে ‘ভয়ংকর' সব অপরাধের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে, বিশেষ করে জনপ্রিয় স্থানগুলোতে৷
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ঘটনা নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে৷ অনেকেই পর্যটকদের যথার্থ নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সমালোচনা করেছেন৷ বিরোধী দল কংগ্রেস পার্টির এক নেতা মিলিন্দ দেওরা টুইটারে লিখেছেন, ‘‘ভারতের সবচেয়ে বড় রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে কী ভয়াবহ অবনতি হয়েছে, এটা তারই লজ্জাজনক একটি উদাহরণ৷ যোগী আদিত্যনাথ কী শুনতে পাচ্ছেন?''
ভারতে বিদেশি পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে আগেও প্রশ্ন উঠেছে৷ ২০১৩ সালেই বিদেশি নারী পর্যটকদের শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের বেশ কিছু ঘটনা ঘটে৷ সে বছরের জানুয়ারিতে মধ্যপ্রদেশে ধর্ষিতা হন এক কোরীয় নারী৷ এছাড়া কলকাতায় এক আইরিশ নারী, মানালিতে অ্যামেরিকান নারী , মধ্যপ্রদেশের দাতিয়া জেলায় এক সুইস মহিলা ধর্ষণের শিকার হন৷ এর আগে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে দিল্লিতে এক বিদেশিনীকে ধর্ষণ করা হয়৷
এপিবি/এসিবি (এপি, এএফপি, ডিপিএ)