সুনামি সতর্কতা সংকেত যন্ত্রের কার্যকারিতা নিয়ে সংশয়
২৯ অক্টোবর ২০১০ধারণা করা হয়েছিল, সাইবেরুট দ্বীপের কাছে গভীর সমুদ্রে বসানো এই দু'টি বিশেষ ‘বয়া' ভবিষ্যতে সুনামির পূর্বাভাস পেতে সহায়তা করবে৷ কিন্তু এবারের সুনামিতে বিপুল প্রাণহানি এবং ক্ষতির কারণে বিজ্ঞানীদের সে ধারণাটি ভুল প্রমাণিত হয়েছে৷ তাঁরা জানিয়েছেন, এই বয়া সুনামি সম্পর্কে আগাম কোন সতর্ক সংকেত জানাতে ব্যর্থ হয়েছে৷
গত সোমবার ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পটির কারণে সৃষ্ট সুনামির প্রবল ঝঞ্ঝা আর জলোচ্ছ্বাসে ইন্দোনেশিয়ার মেনতাওয়াই দ্বীপটি তছনছ হয়ে গেছে৷ তিনশো এগারো ব্যক্তি এই সুনামিতে প্রাণ হারিয়েছেন, নিখোঁজ রয়েছেন আরো তিনশো জন৷ ইন্দোনেশিয়ান ইন্সটিট্যুট অফ সাইন্স এর ভূকম্প গবেষণা বিভাগের প্রধান ড্যানি হিলম্যান জানিয়েছেন, ২০০৪ সালের সুনামির পর গভীর সমুদ্রে স্থাপিত এই দুইটি বয়া খুব দ্রুতই এর কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলেছিল৷
উল্লেখ্য, এই বয়াগুলো ইন্দোনেশিয়াকে জার্মান সরকার অনুদান হিসেবে দিয়েছিল৷ বয়াগুলোর বিশেষত্ব হচ্ছে- ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস বা সুনামির কারণে জলের উচ্চতার ক্ষেত্রে আকস্মিক কোন পরিবর্তন ঘটলে এটি বিশেষ ধরণের সতর্ক সংকেত পাঠাতে সক্ষম৷ কিন্তু ড্যানি হিলম্যান বলেছেন, এই বয়া সুনামির কারণে জলের উচ্চতার পরিবর্তনটি টের পাওয়ার আগেই জলোচ্ছ্বাস উপকূল প্লাবিত করেছিল৷
তিনি আরো জানিয়েছেন, সুনামির কোন ধরণের পূর্ব প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হয়নি, আর সুনামির সতর্কতা সংকেত পাওয়ার আগাম কোন ব্যবস্থাও কার্যকর ছিল না৷ তিনি বলেন, এই জলোচ্ছ্বাস এতো দ্রুত উপকূলে আঘাত হেনেছিল যে, এমনকি যদি বয়াগুলো কাজও করতো, সেক্ষেত্রেও সামগ্রিকভাবে এই বিপুল প্রাণহানির বিষয়টি প্রতিরোধ প্রায় অসম্ভবই ছিল৷ কারণ সুনামিটি আঘাত হেনেছিল রাতে আর কম্পনের বিষয়টিও অতোটা শক্তিশালী ছিল না৷ আর এদিকে ভূমিকম্পের পর সুনামি সতর্কতা সংকেত প্রচার করলেও এক ঘণ্টা পরেই এই সতর্ক সংকেতটি তুলে নেওয়া হয়েছিল৷
ড্যানি হিলম্যান জানিয়েছেন, তিনি বিশ্বাস করেন সতর্কতা সংকেত জানানোর ১০ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যেই সাইপোরা আর পাগাই দ্বীপে জলোচ্ছ্বাস আঘাত হেনেছিল৷
ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তাস্থ আগাম সুনামি সংকেত ব্যবস্থার প্রধান ফাওজি জানিয়েছেন, সতর্ক সংকেত জারি এবং তা তুলে নেওয়ার ফাঁকে কখন যে সুনামি আঘাত হেনেছে আমরা টেরই পাই নি৷ উল্লেখ্য, সুনামি সতর্কতা জানানোর জন্য যে ব্যবস্থাটি রয়েছে তাতে সিজমোমিটার, জিপিএস যন্ত্র, সমুদ্র তলের চাপ পরিমাপক যন্ত্র সহ জলোচ্ছ্বাস মাপার গজ, বয়া এবং স্যাটেলাইট ব্যবস্থার সহায়তা নেওয়া হয়ে থাকে৷
ফাওজি আরো জানিয়েছেন, সুনামি সংক্রান্ত পূর্ব প্রস্তুতির বিষয়টিই ইন্দোনেশিয়ার কারো ভেতরে নেই৷ উল্লেখ্য, প্রায় সতেরো হাজার দ্বীপরাষ্ট্রে প্রায়শই অগ্ন্যুৎপাত এবং ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটে৷
প্রতিবেদন: হুমায়ূন রেজা
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন