জার্মান সহায়তা
২৬ ডিসেম্বর ২০১২প্রলয়ঙ্করী সেই সুনামিতে প্রাণ হারায় অন্তত ২,৩০,০০০ মানুষ, যার মধ্যে শুধু আচেতেই ১,৭০,০০০৷ ইন্দোনেশিয়ার পর আক্রান্ত হয় থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, তারপর ভারত৷ বঙ্গোপসাগরের আন্দামান এবং নিকোবার দ্বীপপুঞ্জের অস্তিত্ব যেমন এদিন সংকটাপন্ন হয়, তেমনই দক্ষিণ ভারতেও নেমে আসে মৃত্যুর হাহাকার৷ শুধুমাত্র কুড্ডালোরেতেই হারিয়ে যায় ৮০০ জন৷
সারা বিশ্বে যখন সেই সুনামির ক্ষয়ক্ষতি আর উপকূলীয় এলাকায় ভেসে থাকা, থরে থরে পড়ে থাকা মৃতদেহের ছবি প্রচার হতে শুরু করে, জার্মানির তৎকালীন চ্যান্সেলর গেয়ারহার্ড শ্রোয়েডার তখন নববর্ষের বক্তৃতায় বলেছিলেন, সুনামি বিধ্বস্ত অঞ্চলগুলোর সঙ্গে জার্মানির বিভিন্ন নগর এবং স্থানগুলো অংশীদারিত্ব গড়ে তুলবে৷
এরপর, ‘জার্মান অ্যাগ্রো অ্যাকশন'-এর মাধ্যমে সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে নেতৃত্বে দিয়েছিল বন শহর৷ দক্ষিণ ভারতের কুড্ডালোরে জেলায় সহায়তা কার্যক্রমের জন্য ছাত্ররা বাজার, বক্তৃতামালা এবং চ্যারিটি কনসার্টের আয়োজন করে সে সময়ে প্রায় ৫ লক্ষ ইউরো তহবিল জোগাড় করে৷
সেখানেই, সেই কুড্ডালোরে জেলায় একটা ছোট্ট গ্রামে যেদিন সুনামি আঘাত হেনেছিল, বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল সবকিছু – সেদিনের কথা এখন আর মনে পড়ে না ১৫ বছর বয়সি সাবিনাথের৷ তাঁর ঠিক মনে নেই কে কে মারা গিয়েছিল আর কতগুলো বাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল সেদিন ঐ বিশাল সব ঢেউয়ের কবলে৷ গত আট বছরে তাঁকে এসব নিয়ে এতবার, এত প্রশ্ন করা হয়েছে যে, তার উত্তরগুলো এখন ছাঁচে বাঁধা হয়ে গেছে সাবিনাথের জন্য৷
কিন্তু একটা জার্মান সংগঠনের নাম তাঁর মনে আছে যারা সেখানে সাহায্য করতে গিয়েছিল৷ মেট্টুপালায়ামে যে স্কুলটিতে সাবিনাথ পড়তো প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য সেটি তৈরি করে দিয়েছিল ‘জার্মান অ্যাগ্রো অ্যাকশন' এবং তাদের স্থানীয় অংশীদার ‘লাইফ হেল্প সেন্টার'৷
অঞ্চলটির তৎকালীন ম্যাজিস্ট্রেট জ্ঞানদ্বীপ সিং বেদি বলেন, ‘‘এমন একটা সময়ে এই নৈতিক সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী ছিল যে হাজার হাজার মাইল দূরে বন শহরের মানুষরা আমাদের নিয়ে চিন্তা করেছেন৷ তাঁরা অন্তর থেকে দান করেছেন৷ এটা ভারত-জার্মান বন্ধুত্বের একটা দারুণ দৃষ্টান্ত৷''
তবে শুধু এহেন সাহায্যই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন উপকূলবর্তী অঞ্চলে সুনামি সতর্কতা ব্যবস্থা স্থাপন করাতেও ছিল জার্মানদের অবদান৷ সমুদ্র সৈকতে লাউডস্পিকার অথবা সাইরেন দিয়ে হোক, বা গভীর সমুদ্রে সুনামির ঢেউ মাপবার জন্য উচ্চপ্রযুক্তির মনিটর অথবা বয়া দিয়ে হোক – জার্মানি সর্বত্রই ছিল বন্ধু হিসেবে৷
তাই অনেকক্ষেত্রে সুনামিকে ‘একটি সুবর্ণ সুযোগ' হিসেবে দেখে সুযোগসন্ধানী মানুষ জিনিসপত্রের অপব্যবহার করলেও, এটা কখনই ভুলে গেলে চলবে না যে, সুনামি না হলে সাবিনাথের হয়ত স্কুলে যাওয়াই হতো না৷ কারণ, এখনও তাঁর স্কুলের খরচ, খাবার এবং বইপত্র – সবই যোগায় জার্মান ঐ এনজিও'টিই৷