সুনামির পাঁচ বছর পর আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপপুঞ্জ
২৬ ডিসেম্বর ২০০৯আন্দামান ও নিকোবার
স্বচ্ছ জলে সূর্যের লুকোচুরি আর সাদা ধবধবে বালুকাময় সৈকতের জন্য পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় আন্দামান এবং নিকোবার দ্বীপপুঞ্জ৷ কিন্তু ২০০৪ সালের ভয়াবহ সামুদ্রিক ঝড় সুনামির আঘাতে জর্জরিত হয়ে গেছে এই ভূ-স্বর্গ৷ ঐ অঞ্চলে সুনামিতে প্রাণ হারিয়েছিল প্রায় ছয় হাজার মানুষ৷ তবে সুনামির পর থেকে ঐ অঞ্চলের প্রতি পর্যটকদের দৃষ্টি পড়েছে আরো বেশি করে৷ এছাড়া ভারতের নীতি-নির্ধারকরাও ভাবছেন দ্বীপগুলোর উন্নয়নের কথা৷
মুগ্ধ পর্যটকদের মন্তব্য
২৫ বছর বয়সি জার্মান পর্যটক কার্সটেন শিলার বললেন, ''রৌদ্র স্নান এবং বিনোদনের জন্য ভারতের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা হচ্ছে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ৷'' ফিনল্যান্ড থেকে আসা অপর এক পর্যটকের মন্তব্য, ''এখানকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ডুবসাঁতারের সুযোগ৷ কিন্তু এখন দ্বীপগুলোতে কিছুটা সমস্যা থাকায় পর্যটকের সংখ্যা কম৷ এখানকার সবকিছুই অত্যন্ত শান্ত এবং স্থির৷''
সুনামির ইতিবাচক ফলও রয়েছে - জাভেদ
আন্দামান এবং নিকোবার ব্যবসায়ীদের প্রধান সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ জাভেদের বেশ কিছু নৌযান রয়েছে৷ তিনি এগুলোতে করে পর্যটকদের দ্বীপগুলোতে যাতায়াতের ব্যবস্থা করেন৷ জাভেদ বলেন, ''আমি মনে করি যে, এই দ্বীপগুলোর ইতিহাসে পাঁচ বছর আগের সুনামি ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্যোগ৷ তবে এই দুর্যোগের কিছু ইতিবাচক ফলাফলও রয়েছে৷ আগে পৃথিবীর মানচিত্রে আন্দামান এবং নিকোবার দ্বীপপুঞ্জ খুঁজে পাওয়া যেত না৷ এমনকি অনেক ভারতীয় মানুষও জানত না যে, এগুলো কোথায়৷ তবে সুনামির পর আমাদের সম্পর্কে সবাই জেনেছে৷ আমাদের এখন এই অবস্থা কাজে লাগাতে হবে৷ এই পর্যটন কেন্দ্রটির বাজার সৃষ্টি করতে হবে এবং আরো বেশি পর্যটক আকৃষ্ট করতে করতে হবে৷''
আকর্ষণীয় পর্যটন শিল্প গড়ে তোলার পরিকল্পনা
২০০৪ সাল পর্যন্ত এই দ্বীপগুলোতে পর্যটন শিল্প প্রসার লাভ করছিল৷ প্রতি বছর ভারত এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে প্রায় দেড় লাখ পর্যটক আসতো৷ ফলে ঐ অঞ্চলে বড় আকারের বিলাসবহুল হোটেল নির্মাণের পরিকল্পনাও করা হয়েছিল৷ কিন্তু এমন সময়ই সুনামি সেখানে আঘাত হানে৷ এখন অবশ্য তাজ হোটেল গোষ্ঠী সেখানে তাদের পরিষেবা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছে৷ এছাড়া সরকারও ঐ অঞ্চলের জন্য প্রায় এক শ' মিলিয়ন ইউরোর প্রকল্প পর্যালোচনা করছে৷ ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে ঐ দ্বীপগুলোতে বিমানের সংখ্যাও ইতিমধ্যে দ্বিগুণ করা হয়েছে৷
পরিবেশবিদদের উদ্বেগ
এছাড়া প্রাদেশিক রাজধানী পোর্ট ব্লেয়ারের বিমান বন্দরটি আন্তর্জাতিক বিমান ওঠা-নামার জন্য উন্মুক্ত করার বিষয়েও আলোচনা চলছে৷ তবে পরিবেশবিদ সামির আচার্য মনে করেন যে, ''এসবের ফলে দ্বীপগুলোর আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জীবনাচরণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷'' আচার্য বলেন, ''এসব দ্বীপে পর্যটনের সম্প্রসারণ ঘটুক তা আমরা অবশ্যই চাই৷ কিন্তু পর্যটনের অপব্যবহার খুব খারাপ৷ এবং পরিবেশ বান্ধব পর্যটনের নামে যাকিছু বলা হচ্ছে, সব শুধুমাত্র কেতাদুরস্ত৷''
আচার্য অবশ্য শুধুমাত্র ঐ অঞ্চলের জীব-বৈচিত্র্য বিষয়েই নয়, বরং পর্যটন খাতের উন্নয়ন কার কাজে লাগবে - সে বিষয়েও শঙ্কা ব্যক্ত করেছেন৷ এর মাধ্যমে কি আদৌ ঐ অঞ্চলের মানুষের কোন উপকার হবে, নাকি ভারতীয় আগন্তুকদের স্বার্থ হাসিল হবে? তাঁর আশঙ্কা, ঐ অঞ্চলের আদিবাসী 'জারাওয়া' জনগোষ্ঠী হুমকির সম্মুখীন৷ আন্দামান এবং নিকোবার দ্বীপগুলোর আদিবাসীদের মুখপাত্র শামি শোধি বললেন, ''সবচেয়ে বড় হুমকির মধ্যে রয়েছে 'জারাওয়া' জনগোষ্ঠী৷ প্রধান সড়কের পাশেই তাদের বাস৷ তাদের জীবনযাত্রা এবং সংস্কৃতি অন্যান্য আগন্তুকদের দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে৷ এটার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে৷''
প্রতিবেদন: প্রিয়া এসেলবর্ন, ভাষান্তর: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ