সুন্দরবন বাঁচাও মিছিল পণ্ড
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণের কথা ছিল সাইকেল মিছিলটির৷ তবে মিছিল শুরু হওয়ার আগেই পুরো শহীদ মিনার এলাকা ঘিরে রাখে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পক্ষ অবলম্বনকারীরা৷ তাদের হাতে ছিল জাতীয় পতাকা৷ সুন্দরবন বাঁচাও আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত মঞ্জুরুল আলম পান্না ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এদের হাতে ছাত্রলীগের কোনো ব্যানার ছিল না৷ তবে আমরা বুঝতে পেরেছি যে এরা ছাত্রলীগের সদস্য৷ আসে ছাত্রলীগ নামধারীরা আগে থেকে পরিকল্পনা করেই আমাদের কর্মসূচিতে বাধা দেয়৷ আর পুলিশ আমাদের সহযোগিতা না করে উলটে দোয়েল চত্বর এলাকায় জলকামান ছুড়ে গোটা কর্মসূচিটাই পণ্ড করে দেয়৷''
ঘটনার সময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বিরোধী পক্ষের ধ্বস্তাধ্বস্তির ঘটনাও ঘটে৷ বিরোধীরা জাতীয় পতাকা হাতে দাঁড়ানো তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর ও খনিজ সম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য-সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদকেও ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়৷
‘সুন্দরবন বাঁচাও সাইকেল মিছিল'-এর সমন্বয়ক সামান্তা শারমিন অভিযোগ করেন, ‘‘মিছিল শুরুর সময়ই ক্যাম্পাসে মানববন্ধন শুরু করে ছাত্রলীগ৷ তারা শহীদ মিনার ঘিরে রাখে৷ সেখান থেকে নেতা-কর্মীদের বের হতেও বাধা দেয় তারা৷ আমাদের অবরুদ্ধ করে রাখে৷''
যারা বিদ্যুৎকেন্দ্রের পক্ষে অবস্থান নেয় তাদের ব্যানারে লেখা ছিল, ‘আমরা রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চাই৷' ওই ব্যানারে মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমাদের এখানে পূর্ব নিধারিত কর্মসূচি ছিল৷ সে অনুযায়ীই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ সুন্দরবন থেকে ৬০-৬১ কিলোমিটার দূরে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে, এতে বনের কোনো ক্ষতি হবে না৷''
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি রুম্মন হোসেন বলেন, ‘‘আমরা শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেছি৷ কিন্তু যারা রামপালের বিরোধিতা করছে, তারাই গায়ে পড়ে এসে ঝামেলা করার চেষ্টা করে৷ আমাদের কর্মসূচি পণ্ড করার জন্য তারা ধাক্কাধাক্কি করে৷'' তবে তাঁর দাবি, ‘‘বিদুৎকেন্দ্রের দাবিতে এই কর্মসূচি ছাত্রলীগ দেয়নি৷ সাধারণ শিক্ষার্থীরাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই কর্মসূচি দিয়েছে৷''
সুন্দরবন বাঁচাও আন্দোলনের মঞ্জুরুল আলম পান্না জানান, ‘‘দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিরোধীরা চলে যাওয়ার পর, আমরা শাহবাগের দিকে সাইকেল মিছিল নিয়ে অগ্রসর হই৷ কিন্তু পুলিশ সেখানে আমাদের বাধা দেয়৷ এরপরও আমরা দোয়েল চত্বর দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে, পুলিশ জলকামান ছুড়ে আমাদের কর্মসূচি পণ্ড করে দেয়৷''
তিনি আরো অভিযোগ করেন, ‘‘শহীদ মিনারে যখন বিরোধীরা আমাদের ঘিরে রাখে, তখনও পুলিশ আমাদের সহযোগিতা করেনি৷ তারা সহযোগিতা করেছে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সমর্থকদের৷ ছাত্রলীগ নামধারীরা এবং পুলিশ পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করেছে৷''
এ নিয়ে তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর ও খনিজ সম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব-অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের বক্তব্য জানার জন্য যোগাযোগের চেষ্টা করেও, তাঁকে পাওয়া যায়নি৷
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কোনো অনুমতি না নিয়েই সুন্দরবন বাঁচাও সাইকেল মিছিল কর্মসূচি দেয়া হয়েছিল৷ এ ধরনের কর্মসূচি পালনে পুলিশের পূর্বানুমতি নিতে হয়৷ তারপরও পুলিশ বাধা না দিয়ে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি যাতে না হয় সেই চেষ্টাই করেছে৷ দু'পক্ষকেই শান্ত রাখার চেষ্টা করা হয়েছে৷''
জলকামান ছোড়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ শান্তি-শৃঙ্খলা রাক্ষায় যা করণীয় তা করেছে৷''
প্রসঙ্গত, সুন্দরবন বাঁচানোর দাবিতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ এই সাইকেল মিছিলের আয়োজন করে৷ মিছিলটি কেন্দ্রীয শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে মোহাম্মদপুর, সংসদ ভবন, ফার্মগেট, শাহবাগ হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে গিয়ে শেষ হওয়ার কথা ছিল৷ ফেসবুকে ‘সুন্দরবন বাঁচাও সাইকেল মিছিল' নামে একটি ইভেন্ট খুলে কর্মসূচিতে সবাইকে যোগ দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল৷
হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা
দেবারতি গুহ