1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সুন্দরবনের বিদ্যুৎকেন্দ্র ভারতের জন্যও ক্ষতিকর!

অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুন দিল্লি২২ জুলাই ২০১৬

বন্দর, রেল যোগাযোগ,বিদ্যুৎ, প্রতিরক্ষাসহ অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে চাইছে ভারত৷ রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পেও ভারত বাংলাদেশের সহযোগী৷ তবে ভারতের বিশেষজ্ঞও বলছেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দু-দেশেরই ক্ষতি করবে৷

https://p.dw.com/p/1JU4n
Bangladesch Sundarbans Nationalpark Mangrovenwald
ছবি: Imago/V. Preußer

১৬টি প্রকল্পের মধ্যে ইতিমধ্যে কয়েকটির কাজ শুরুও হয়ে গেছে৷

ইরানের ছাবাহার বন্দর নির্মাণ চুক্তি সই হবার পর বাংলাদেশেও একটি সমুদ্র বন্দর তৈরির পরিকল্পনা করছে ভারত৷ ঢাকার সঙ্গে এ বিষয়ে জোর কথাবার্তা চলছে৷ আশা করা যায়, শীঘ্রই সবুজ সংকেত পাওয়া যাবে৷ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে একটি বন্দর ও অন্যান্য পরিকাঠামো প্রকল্প গড়ে তুলতে চায় ভারত৷ মিয়ানমারেও অনরূপ একটি বন্দর তৈরি নিয়েও ভাবনা চিন্তা চলছে৷ বাংলাদেশের মংলা এবং মিয়ানমারের সিতওয়ে বন্দরে ভারতীয় বিনিয়োগ নিয়েও কথাবার্তা চলছে অনেকদিন ধরেই, বলেছেন মোদী সরকারের জাহাজ চলাচল মন্ত্রী নিতিন গডকড়ি৷

ইরানের ছাবাহার বন্দরে ভারতের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা বিপুল, কারণ, বন্দরের কাছেই গড়ে উঠছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল৷ সেখানে খুব সস্তায় গ্যাস পাওয়া যাবে বলে ভারতের নালকো কোম্পানি সেখানে ইউরিয়া সার কারখানা তৈরি করবে৷ বাংলাদেশেও সস্তায় গ্যাস পাওয়া যেতে পারে৷ সেক্ষেত্রে আনুষঙ্গিক কলকারখানা গড়ে তোলার বিরাট সম্ভাবনা দেখা দেবে৷ গডকড়ি জানান, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সড়কপথে বছরে ৬০ কোটি টন পণ্য যাতায়াত করে৷ সেটা জলপথে নিয়ে গেলে আরো বেশি সুবিধা হবে নানা দিক থেকে৷

কলকাতা এবং হলদিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষের মতে, এটা বাস্তবায়িত হলে কলকাতা-হলদিয়া বন্দরের লাভ হবে বেশি৷ বিগত বছরগুলিতে ভারত নামমাত্র সুদে বাংলাদেশকে মোট প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার ঋণ দেয়৷ ১৬টি প্রকল্পে সেই টাকা ব্যয় করা হচ্ছে৷ কেনা হয়েছে ৪২৬টি উন্নত মানের বাস, কেনা হয়েছে ব্রডগেজ লাইনে চলার উপযোগী তেলবাহী ট্যাঙ্কার, তৈরি হয়েছে দুটি রেল সেতু৷

তবে গোল বেঁধেছে বাংলাদেশের খুলনা জেলায় সুন্দরবন এলাকায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে৷ ভারত-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এই তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে দেখা দিয়েছে পরিবেশগত বাধা৷ থমকে রয়েছে এর নির্মাণকার্য৷ সুন্দরবনের সংবেদনশীল প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিপন্ন হবে বলে সোচ্চার হয়ে উঠেছে দুই বাংলার পরিবেশবিদ, নাগরিক সমাজ৷ ইউনেস্কো সুন্দরবনকে হেরিটেজ স্থান বলে ঘোষণা করেছে৷ এমনকি বাংলাদেশের হাইকোর্ট পর্যন্ত সরকারের কাছে জানতে চেয়েছেন, কেন এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণকে অবৈধ ঘোষণা করা হবে না৷

রামসার কনভেনশনের নির্দেশিকায় সুন্দবনের জলাভূমি সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে৷ ঢাকা সেই কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী অন্যতম দেশ৷ সুন্দরবনের জৈব বৈচিত্র্য এবং ম্যানগ্রোভ চলতি ভাষায় যাকে বলা হয় ‘বাদাবন', তা ধ্বংস হলে বিপন্ন হয়ে পড়বে স্থানীয় লোকজনদের জীবন ও জীবিকা, কারণ, বাংলাদেশের বৃহত্তম কয়লা-ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য বছরে দরকার হবে ৪৭ লাখ টন কয়লা৷ সেই কয়লা নিয়ে যেতে হবে সড়ক পথে সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে ট্রাকে করে৷ বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হলে বাতাসে মিশবে ছাই, কয়লাগুঁড়ো, নির্গত হবে সালফার ডায়ক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইডের মতো বিষাক্ত গ্যাস৷ কাজেই এর বিরুদ্ধে জনবিক্ষোভের যুক্তিসংগত কারণ আছে৷ যদিও বাংলাদেশ সরকারের মতে, উচ্চ-প্রযুক্তির দরুণ পরিবেশ দূষণের মাত্রা হবে খুবই নগণ্য৷

ভারতের পরিবেশবিদ অধ্যাপক এস.হাজরা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সুন্দরবনের মতো স্পর্শকাতর অঞ্চলে এই কেন্দ্র স্থাপন স্রেফ বাংলাদেশের জন্যই নয়, ভারতের জন্যও ক্ষতিকর৷ সুন্দরবন দুই বাংলার সম্পদ৷ তবে বাংলাদেশের বিদ্যুতের চাহিদার কথা মাথায় রেখে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে সৌরবিদ্যুত, বায়ুবিদ্যুত, সমুদ্রের জোয়ার-ভাটা থেকে বিদ্যুৎ কিংবা বায়োগ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উত্পাদন সহজেই কম খরচে করা যেতে পারে৷

এপার বাংলা ওপার বাংলার মধ্যে ট্রেন চলাচল শুরু হলেও এবার ভারতে তৈরি রেল ইঞ্জিন, কামরা চলবে বাংলাদেশে৷ এতে লাভ হবে দুদেশেরই৷ ইঞ্জিন ও কামরা একই প্রযুক্তির হলে দ্রুত যাত্রি ও মাল পরিবহনে সুবিধা হবে৷ সময় ও অর্থ দুই বাঁচবে দুদেশেরই, মনে করেন ভারতের রেলের কর্তাব্যক্তিরা৷

৭০ টি আধুনিক রেল কামরা এবং ২০টি ইঞ্জিন পাঠানো হচ্ছে বাংলাদেশে৷ এগুলি তৈরি হয়েছে বারানসী কারখানায়৷ মোটকথা, বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে ঢাকা-দিল্লির মৈত্রীর করমর্দন বিভিন্ন ঐতিহাসিক কারণে কখনও শিথিল হবার নয়৷ সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব যদি পারস্পরিক আস্থা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা অটুট থাকে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য