‘ফ্লাইবোর্ড’
১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫সঙ্গে ‘ফ্লাইবোর্ড' থাকলে তীব্র গতিতে পানি থেকে ছিটকে বেরিয়ে আকাশের দিকে ধেয়ে যাওয়া অসম্ভব নয়৷ দুই হাতে জেট, পায়ের নীচেও পাইপে লাগানো জেট জুতো৷
‘ফ্লাইবোর্ড' নিয়ে মেতে উঠেছেন মার্কো আমিকো-ও৷ ইটালির গার্ডা লেকে তিনি নতুন এই খেলা শেখান৷ ইউরোপে এমন সুযোগ এখনো বিরল৷ তাঁকে উড়তে দেখা নজর কাড়ার মতো এক দৃশ্য বটে৷ বোর্ডের উপর দাঁড়ানোর অনুভূতিটাই আলাদা! আমিকো বলেন, ‘‘৫ মিটার উচ্চতায় পায়ের নীচে এত চাপ থাকলে মনে হবে বাতাসে যেন ভাসছি, অনবদ্য এক অভিজ্ঞতা৷ একেবারে সুপারম্যান-এর মতো লাগে, নিজেকে মুক্ত মনে হয়৷ মনে হয়, এই বয়সেও যেন একটা খেলনা পেয়ে গেছি৷''
মার্কো আনাড়িদেরও ‘সুপারহিরো' প্রশিক্ষণ দেন৷ অস্ট্রিয়ার ইনসব্রুক শহরের ক্রিস্টিয়ান ডেমল তাতে অংশ নিয়েছেন৷ প্রশিক্ষণের আগেই ‘ফ্লাইবোর্ড' শিক্ষক বিভিন্ন কৌশল ও আচরণবিধি বুঝিয়ে বলেন৷ তাঁর কাছে প্রশ্ন, সামনে বেশি ঝুঁকে পড়লে কি হাতের জেট দিয়ে সামলে নেয়া যায়? মার্কো বলেন, ‘‘হ্যান্ড-জেট দিয়ে অবশ্যই ভারসাম্য আবার ফিরিয়ে আনা সম্ভব৷ কিন্তু সেটা কাজ না করলে কেউ হ্যান্ড-জেট আবার দু-পাশে রেখে মাথা সামনে করে, ঠিক ডলফিনের মতো ডাইভ দিতে পারে৷ তারপর আবার জেটের তোড়ে পানি থেকে বেরিয়ে আসতে পারে৷''
শুনতেই বেশ কঠিন লাগে বৈকি৷ সংক্ষিপ্ত নির্দেশ শোনার পর ক্রিস্টিয়ান সাহস করে কাজে নামলেন৷ পানি বেশি ঠাণ্ডা নয়৷ তিনি বললেন, ‘‘বেশ উত্তেজনা হচ্ছে, কী যে হবে! আমার কোনো ধারণা নেই৷ দেখি না কী হয়৷'' প্রথম প্রচেষ্টা দেখে তাঁকে ঠিক সুপারম্যান মনে হচ্ছে না৷ তবে তার আগে চাই যথেষ্ট প্রশিক্ষণ৷
একটি ইন্টারনেট ভিডিও-তে বেপরোয়া কসরত দেখে ফ্লাইবোর্ডিং সম্পর্কে সবাই জানতে পারে৷ ২০১১ সালে এক ফরাসি তার সরঞ্জাম উদ্ভাবন করেন৷ কাতারের রাজধানী দোহায় গত বছর প্রথম ফ্লাইবোর্ডিং বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল৷ ১৭টি দেশ থেকে ৫০ জন তাতে যোগ দিয়েছিলেন৷ প্রথম বিশ্বকাপ জয়ী এসেছিলেন ফ্লাইবোর্ড-এর দেশ ফ্রান্স থেকে৷
এদিকে ক্রিস্টিয়ান ডেমল-ও কয়েক মিনিটের মধ্যেই বোর্ডের উপর দাঁড়াতে শিখেছেন৷ ওঠানামা করতে তাঁর বেশ লাগছে৷ ডলফিন ডাইভ-ও দিব্যি রপ্ত করে নিয়েছেন তিনি৷ তীরে দাঁড়িয়ে দর্শকরাও ‘সুপারহিরো' মানের কসরত দেখেন৷ এক নারী বললেন, ‘‘দেখে ঠিক সায়েন্স ফিকশন মনে হচ্ছে৷ প্রথমে একজন এমনভাবে ঝাঁপ দিলো, যেন সে এক ডলফিন৷ আমরা বেশ চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম৷ তবে বেশ মজার নতুন খেলা, কেন নয়?'' আরেক জন বলেন, ‘‘আমার মনে হয় না, এই খেলা তেমন জনপ্রিয় হয়ে উঠবে৷ কারণ খুব বেশি মানুষের কাছে এর আবেদন নেই৷ এর জন্য উপকরণ কেনা, জোগাড় করা কঠিন, বাসায় রাখাও সহজ নয়৷ এ সব ভাড়া করাই অনেক সহজ৷ তাই খুব বেশি ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা কম৷''
ফ্লাইবোর্ডিং মোটেই সস্তার খেলা নয়৷ গার্ডা লেকে আনাড়িদের জন্য কোর্সের খরচ প্রায় ১৬০ ইউরো৷ তবে ক্রিস্টিয়ান ডেমল-এর মতো ওয়াটার স্পোর্টস অনুরাগীদের জন্য এটা এমন কোনো বড় অঙ্ক নয়৷ তিনি বললেন, ‘‘অসাধারণ অভিজ্ঞতা৷ এত উপরে উঠলে ভয় একটু করে বৈকি৷ তবে পড়ে গেলেও ক্ষতি নেই, তারও ব্যবস্থা আছে৷ বেশ পরিশ্রম করতে হয়, পেশিগুলির উপর অনেক চাপ পড়ে৷''
শেষে ওস্তাদ নিজেই আসরে নামলেন৷ মার্কো আমিকো অন্তত পানির উপর সুপারহিরো-র মতোই অনায়াসে ঘোরাফেরা করতে পারেন৷