ঢাকায় ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী
২১ ডিসেম্বর ২০১৬আসিয়ান ফোরামে ইন্দোনেশিয়াকে বেশ সমীহ করা হয়৷ আর এই ইন্দোনেশিয়ার সমর্থনেই ১৯৯৭ সালে আসিয়ান-এর সদস্য হয়েছিল মিয়ানমার৷ যদিও সে সময় রোহিঙ্গা ইস্যুতে অনেক সদস্যই মিয়ানমারের বিরোধী ছিল৷ এখন অবশ্য সেই ইন্দোনেশিয়াই রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সেচ্চার হয়েছে৷ রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে ইন্দোনেশিয়া যে বেশ ‘সিরিয়াস’ তা বোঝা গেল দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর তৎপরতায়৷
তৎপরতার অংশ হিসেবে মিয়ানমারে আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক সভায় যোগ দিয়ে মঙ্গলবার ঢাকায় আসেন ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুডি৷ রাখাইন প্রদেশের সহিংস ঘটনার সর্বশেষ অবস্থা জানানোর জন্য মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর ও আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নিয়ে সোমবার মিয়ানমারে এক বৈঠক করেন অং সান সু চি৷
ঢাকায় এসে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুডি টেকনাফের উখিয়ায় কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে যান৷ তাঁর সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম৷ শরণার্থী শিবির পরিদর্শনের পরে ইন্দোনেশিয়ার মন্ত্রী বলেন, ‘‘শরণার্থীদের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ এবং শরণার্থীদের সহায়তা দেবার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরো বেশি কিছু করা উচিত৷’’
তিনি শরণার্থীদের সঙ্গে কথাও বলেন৷ জানতে চান তাঁদের অবস্থা এবং তাঁরা মিয়ানমার থেকে কীভাবে বাংলাদেশে আসলেন৷
ওদিকে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘রোহিঙ্গা সমস্যার উৎপত্তি মিয়ানমারে এবং এর সমাধান সেখানেই হতে হবে বলে মনে করেন রেতনো মারসুডি৷’’ বলা হয়, তিনি এ-ও মনে করেন যে, ‘‘রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য মিয়ানমার সরকার যে পদক্ষেপ নেবে, তাকে সমর্থন জানানো প্রয়োজন৷’’ একই সঙ্গে সীমান্তে উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সম্পর্ক, যোগাযোগ ও সমন্বয়ের গুরুত্বের কথা বলেন তিনি৷
ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও বৈঠক করেন৷
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আসিয়ান-এর দুই প্রভাবশালী সদস্য ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া এবার রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে সক্রিয় হয়েছে৷ আমি মনে করি, তারা তাদের এই তৎপরতা অব্যাহত রাখলে মিয়ানমারকে সমস্যা সমাধানে আগ্রহী করা যাবে৷ আর বাংলাদেশের এই সুযোগকেই কাজে লাগাতে হবে৷’’
তাঁর কথায়, ‘‘রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশ একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্যোগ নিতে পারে, যেখানে ভারতসহ আরো অনেক দেশকে যুক্ত করার সুযোগ আছে৷ মিয়ানমারকেও সঙ্গে নিতে হবে৷ কারণ সমস্যাটা তাদের৷’’
এছাড়া বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্খীদের প্রতি অনেক মানবিক৷ কিন্তু এই দায় বাংলাদেশের একার নয়৷ এবার আসিয়ানভুক্ত দু'টি দেশ এই সমস্যা সমাধানে আওয়াজ তুলেছে৷ আমার আশা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও আরো সক্রিয় হবে৷’’
তিনি বলেন, ‘‘এখন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কতটা দক্ষতার সঙ্গে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার উদ্বেগকে কাজে লাগাতে পারে, তার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু৷’’
প্রসঙ্গত, গত অক্টেবর থেকে এ পর্যন্ত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেখানকার সরকারি বাহিনীর হামলায় শতাধিক রোহিঙ্গা নিহত এবং ৩০ হাজারের বেশি গৃহহারা হয়েছেন৷
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার হিসাব মতে, নতুন করে ৩৪,০০০ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে বাধ্য হয়েছে৷
প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে নীচে মন্তব্যের ঘরে লিখুন৷