সুষমার ঢাকা সফর
২৫ জুন ২০১৪ভারতে বিজেপি সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর সুষমা স্বরাজই প্রথম মন্ত্রী, যিনি বাংলাদেশ সফর করছেন৷ এই সফরের সময় ভারতের এই নব নির্বাচিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক করবেন৷ এছাড়া রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন তিনি৷ আর শুক্রবার দেখা করবেন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে৷
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, নির্বাচনকালীন বিজেপি আর ভারতের ক্ষমতায় থাকা বিজেপির মধ্যে পার্থক্য এরই মধ্যে লক্ষ্য করা গেছে৷ তাই ভারতে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের এই সফর সুভেচ্ছা সফর হলেও, এর অনেক গুরুত্ব রয়েছে৷ জানান সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং কূটনীতিক মোহাম্মদ জমির৷
তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিজেপি নেতারা নির্বাচনের সময় বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের নাগরিকদের নিয়ে নানা রকম কথা বলায় এ সরকারকে নিয়ে এক ধরনের অস্বস্তি আছে বাংলাদেশে৷ কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার পর মনে হয়েছে নির্বাচনি কথা বাদ দিয়ে ভারতের নতুন সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্কই স্থাপন করতে চায়৷''
মোহাম্মদ জমির বলেন, ‘‘বাংলাদেশ ও ভাতের মধ্যে বেশ কিছু ইস্যু রয়েছে যার সমাধান প্রয়োজন৷ এর মধ্যে তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, সীমান্ত হত্যা, স্থল সীমান্ত, সমুদ্রসীমা এবং বন্দি বিনিময় অন্যতম৷''
তিনি মনে করেন, শুভেচ্ছা সফর হলেও এই বিষয়গুলো এই সফরে প্রাধান্য পাবে৷ তাই তাঁর কথায়, ‘‘২রা জুলাই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নিয়ে মামলার রায় হবে আন্তর্জাতিক আদালতে৷ স্বাভাবিকভাবেই এর আগে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর খুবই গুরুত্ব বহন করে৷''
ওদিকে সুষমা স্বরাজের ঢাকা সফরকে ইতিবাচকভাবে দেখছে বিএনপিও৷ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘‘দুই দেশের সীমান্ত বিরোধ, অভিন্ন পানির ন্যায্য হিস্যাসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে এই সফর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে৷''
তিনি বলেন, ‘‘ভারতের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকার গঠন করেছে৷ তারা ক্ষমতায় আসার পর নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে দক্ষিণ এশীয় দেশসমূহের আঞ্চলিক সংস্থা সার্ককে শক্তিশালী করতে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছে ভারত৷ তার অংশ হিসেবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইতিমধ্যেই ভুটান সফর করেছেন৷ আর এবার বাংলাদেশে আসছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷ এটা ইতিবাচক৷''
ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘আমরা মনে করি, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফরে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হবে৷''
জানা গেছে, সুষমা স্বরাজের বাংলাদেশ সফরে স্থল সীমান্ত চুক্তি প্রাধান্য পাবে৷ ভারত এ ব্যাপারে মোটামুটি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েই রেখেছে৷ তারা চাইছে, এই চুক্তিটি করে ফেলতে৷ এতে করে বাংলাদেশ থেকে পণ্যবাহী যানবাহন ভারতে প্রবেশের সুযোগ দেয়া হতে পারে৷ বিনিময়ে বাংলাদেশ যদি ভারতীয় পণ্যবাহী যানবাহন বাংলাদেশে ঢুকতে নাও দেয়, তাতেও হয়ত আপত্তি থাকবে না৷ কারণ ভারত মনে করে, এতে তাদের বাংলাদেশ থেকে পণ্য পরিবহণের খরচ কমে যাবে৷ এর সঙ্গে সঙ্গে ত্রিপুরায় পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশের কাছে স্থল ট্রানজিট চায় ভারত৷ অন্যদিকে বাংলাদেশ চায় তিস্তার পানি, সীমান্ত হত্যা বন্ধ, ব্যবসা-বাণিজ্য আর বন্দি বিনিময়৷
বলা বাহুল্য, বাংলাদেশের দিক থেকে সবচেয়ে জরুরি হলো তিস্তা নদীর জলবণ্টন, যেটাকে পণবন্দি করে রেখেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়৷ তবে শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, বাংলাদেশে আসার আগে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ৷ তাঁর বুধবার রাতেই বাংলাদেশে পৌঁছানোর কথা৷