‘সেক্যুলার’ প্রকাশক খুন, আবারো আক্রান্ত ব্লগাররা
৩১ অক্টোবর ২০১৫জাগৃতি প্রকাশনীর ফয়সাল আরেফিনকে শাহবাগে তাঁর কার্যালয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা৷ ‘সেক্যুলার' প্রকাশক হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি৷ ওদিকে পৃথক একটি হামলায় ব্লগার অভিজিৎ রায়ের বইয়ের প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুল গুরুতর আহত৷ আহত ব্লগার রণদীপম বসু এবং তারেক রহিম৷ শনিবার দুপুরে টুটুলের কার্যালয়ে তাঁদের কোপানো হয়েছে৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এই খবর ছড়িয়েছে দ্রুত৷ তবে এভাবে আর কতদিন চলবে?
ঢাকায় খুন হওয়া অভিজিতের বইয়ের প্রকাশক টুটুল৷ তাঁর উপর হামলা হতে পারে, এমন আশঙ্কা ব্লগাররা প্রকাশ করেছেন আগেই৷ খুনিদের তালিকায় তাঁর নাম ছিল, এই দাবি তাঁদের তাসত্ত্বেও নিরাপত্তা দেয়া হয়নি তাঁকে৷ কয়েকদিন আগে লিখেছিলাম ব্লগারদের উপর হামলার প্রস্তুতি বুঝি আবার শুরু হয়েছে৷ গণমাধ্যমে নিষিদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠী ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের' ই-মেল দেখে সেই শঙ্কা জেগেছিল৷ গণমাধ্যমে সেই সংবাদ প্রকাশের পরও পুলিশ প্রশাসন যে সতর্ক হয়নি, সেটা বোঝা গেল আজকের ঘটনার পর৷
গত জুনে ঢাকায় পুলিশের এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়েছিল৷ তিনি তখন বলেছিলেন, সব ব্লগারের নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব নয়৷ কিন্তু কেউ কি সব ব্লগারের নিরাপত্তা চাইছে? খুনিরা তালিকা ধরে খুন করছে৷ এখন পর্যন্ত যে ব্লগাররা খুন হয়েছেন, তাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে ঝুঁকি আগেই বোঝা গিয়েছিল৷ টুটুলরা আক্রান্ত হতে পারেন, সেই শঙ্কা ছিল৷ ফলে সব ব্লগার নয়, বরং নির্দিষ্ট কিছু ব্লগারের জীবন ঝুঁকির মুখে৷ সেই ঝুঁকিতে থাকাদের নিরাপত্তা দিতে এত অনীহা কেন পুলিশের?
দু'দিন আগে আরো এক ব্লগারের বাড়িতে হানা দেয়ার চেষ্টা করেছিল সন্দেহভাজন দুর্বৃত্তরা৷ সেই চেষ্টা সফল হয়নি৷ ফলে সেই ব্লগার বেঁচে গেছেন৷ আলোচিত সেই ব্লগারও আছেন ২০১৩ সালে প্রকাশিত ‘হিট লিস্টে৷' এই লিস্ট এমন এক সময় প্রকাশ হয়েছিল, যখন ঢাকার রাজপথে ‘নাস্তিক ব্লগারদের' হত্যার দাবিতে মিছিল করছিল উগ্র ইসলামপন্থি গোষ্ঠী ‘হেফাজতে ইসলাম৷' এখন পর্যন্ত ব্লগার খুনের পরপর যে দু'জন আটক হয়েছেন, তারা স্বীকার করেছেন যে তারা মাদ্রাসার ছাত্র৷ যদিও পুলিশ এই তথ্যটুকু সযতনে এড়িয়ে যাচ্ছে৷ আর ব্লগারদের ফাঁসি চাওয়া হেফাজতের সঙ্গে বর্তমান সরকারের সম্পর্কটাও পাকাপোক্ত হচ্ছে৷ যেটা বোঝা যায় তখন, যখন রেলের জমি তাদের নামে বরাদ্দ হয়৷
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপের দিকেই যাচ্ছে৷ গণমাধ্যম হারাচ্ছে স্বাধীনতা, আর ব্লগার, প্রকাশকরা প্রাণ৷ অন্যদিকে, নিরব প্রশাসন, সরকার৷