1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সেনা নিয়োগে কি নিরাপত্তা বাড়ে?

১৫ জুলাই ২০২৪

ইউরোপের বেশিরভাগ দেশই নাগরিকদের জন্য বাধ্যতামূলক সামরিক সেবা বাতিল করেছে। কিন্তু রাশিয়ার হুমকির মুখে, কিছু দেশ আবার এ ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে চায়।

https://p.dw.com/p/4iJD4
Berešu-Marsch der Pulkveža Oskara Kalpaka Berufsschule
ছবি: Ēriks Kukutis/Verteidigungsministerium Lettland

১৭ জুলাই থেকে লাটভিয়ায় সেনাবাহিনীতে কাদের নিয়োগ দেয়া হবে, সেটা লটারির মাধ্যমে নির্ধারণ করা হতে পারে। এই বছর থেকে বাল্টিকের এই দেশটিতে  সেনাবাহিনীতে প্রশিক্ষণ নেয়া আবার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ১১ মাসের এই প্রশিক্ষণে যদি পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক না পাওয়া যায়, তাহলে সেনাবাহিনী নিজেরাই তরুণদের নিয়োগ দিবে।

লাটভিয়ার প্রতিবেশী লিথুয়ানিয়া ২০১৫ সালে এবং সুইডেন ২০১৭ সালে বাধ্যতামূলক সামরিক সেবা আবার চালু করেছে। এমন পদ্ধতি আবার চালু করার ব্যাপারে আলোচনা করছে জার্মানি এবং যুক্তরাজ্যও৷

যুক্তরাষ্ট্রের কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস এর সোফিয়া বেশ মনে করেন, "সামরিক সেবার এই প্রতিশ্রুতি সত্যিই শক্তিশালী।" তার মতে, "এর মাধ্যমে সামরিক রিজার্ভ তৈরির একটি পথ তৈরি হয়, যা যুদ্ধের ক্ষেত্রে প্রয়োজন।" জার্মানিসহ অনেক ইউরোপীয় দেশের সেনাবাহিনীই বর্তমানে পর্যাপ্ত সেনা সদস্যের সংকটে ভুগছে।

ফরাসি বিপ্লবের সময় বেসামরিক সেনাবাহিনীর ক্ষেত্রে কনক্রিপশন বা বেসরকারি নাগরিকদের সামরিক বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। কিন্তু স্নায়ু যুদ্ধের অবসানের পরে ইউরোপে এই পদ্ধতির আর প্রয়োজন নেই বলে ধারণা করা হয়েছিল। তবে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার ফলে পরিস্থিতি বদলে গেছে। ইউরোপের দেশগুলো রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে। এবং এমন পরিস্থিতির জন্য দেশগুলো আগে থেকেই প্রস্তুত থাকতে চায়।

যুদ্ধের প্রস্তুতি

সোফিয়া বেশ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে যুক্তি দেয়া হচ্ছিলো, "আমাদের আরও প্রযুক্তি, বেশি সজ্জিত, কিন্তু সংখ্যায় কম পেশাদার বাহিনী দরকার।" তবে তিনি মনে করেন, দুটোরই প্রয়োজন রয়েছে। তিনি বলেন, "আমাদের অত্যন্ত সুসজ্জিত বাহিনী দরকার। যুদ্ধক্ষেত্রে আমাদের প্রযুক্তি দরকার এবং আমাদের আরও সৈন্য দরকার। ইউক্রেনের যুদ্ধ থেকে আমরা এটাই দেখতে পাচ্ছি।"

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ প্রতিপক্ষের শক্তি কমানোর যুদ্ধে পরিণত হয়েছে। এরই মধ্যে কয়েক লাখ সেনা নিহত হয়েছে। রাশিয়া এখনও যুদ্ধক্ষেত্রে নতুন যোগ দেয়া সেনাদের পাঠাচ্ছে যাদের কারো কারো কার্যত কোন প্রশিক্ষণই নেই। এটিই প্রমাণ করে যে ড্রোন এবং সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের পরেও আধুনিক যুদ্ধে সৈন্য সংখ্যারও উচ্চ চাহিদা রয়েছে।

ইটালির নৌবাহিনীর কর্মকর্তা বোভ মনে করেন, এক বছরের কম প্রশিক্ষণে সেনাবাহিনীতে যোগদান অপর্যাপ্ত। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেন, "আধুনিক যুদ্ধের ক্ষেত্রে উচ্চ প্রযুক্তির অস্ত্র এবং সেগুলো পরিচালনা করতে সক্ষম সৈন্যও থাকা দরকার। ফলে আমার দৃষ্টিতে তিন মাস, ছয় মাস, বা নয় মাসে সশস্ত্র বাহিনীর যুদ্ধ ইউনিটের জন্য প্রয়োজনীয় যথেষ্ট মৌলিক দক্ষতা এবং জ্ঞান অর্জন সম্ভব নয়।" নৌ কর্মকর্তা হিসাবে সাবমেরিনের সঙ্গে যুদ্ধের কৌশলও শিখেছেন বোভ।

অবশ্য প্রশিক্ষণ এবং অভিজ্ঞতার অভাবের চেয়ে আরও গুরুতর সমস্যা রয়েছে। বোভ বলেন, "তরুণদের তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীতে চাকরি করতে বাধ্য করা হলে তাদের মধ্যে অনুপ্রেরণার অভাব থাকবে। প্রশিক্ষণ এবং অভিজ্ঞতার অভাব সেটাকে আরো জটিল করে তুলবে।"

কেবল অনুপ্রাণিত হলেই সৈন্যরা যুদ্ধে জীবন দেয়ার প্রস্তুতি নিতে পারে। এবং এমন মানসিক প্রস্তুতি যুদ্ধ জয়ের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। বোভ বলেন, "আমি বুঝতে পারছি না কিভাবে আপনি এটা নিশ্চিত করবেন যে মানুষ অস্ত্র ব্যবহার করে যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াই করবে এবং সফল হবে।" এ প্রসঙ্গে রুশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়া তরুণদের বিপুল সংখ্যায় হতাহত হওয়ার ব্যাপারটি উল্লেখ করেন। একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষার কথাও বলেন তিনি, যেখানে দেখা গেছে যে ইউরোপের অনেক তরুণই আক্রান্ত হলেও অস্ত্র তুলে নিয়ে নিজের দেশকে রক্ষা করতে ইচ্ছুক নয়।

রাজনৈতিক এবং সামরিক ব্যয়

সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাধ্যতামূলক নিয়োগ আবার চালু করা হলে জার্মানিকে বছরে ৭০ বিলিয়ন ইউরো (প্রায় নয় লাখ কোটি টাকা) খরচ করতে হতে পারে। কেবল ব্যবহুল সামরিক প্রশিক্ষণ, ব্যারাক এবং ইউনিফর্মের কথা ভাবলেই হবে না। তরুণরা চাকরি না করে সেনাবাহিনীতে যোগ দিলে অর্থনীতিও সার্বিকভাবে দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বোভ মনে করেন, অর্থনৈতিক ব্যয়ের পাশাপাশি এই রাজনৈতিক প্রভাবও রয়েছে। তিনি বলেন, "যারা এই সেবায় যোগ দিতে বাধ্য হয়েছে, অনেক বছর পরেও তারা প্রতিষ্ঠানের প্রতি অনাস্থা প্রদর্শন করতে পারে।" বোভ এবং তার সহকর্মীরা একটি বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণার মাধ্যমে এই বিশ্লেষণ করেছেন। তার আশঙ্কা, সার্বজনীন সামরিক নিয়োগ দীর্ঘমেয়াদে ইউরোপের গণতন্ত্রকে দুর্বল করে দিতে পারে।

বোভ এক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবার ওপর ভিত্তি করে গড়ে তোলা সুইডিশ মডেলের প্রশংসা করেন। এই মডেলের অধীনে শুধুমাত্র যারা অত্যন্ত অনুপ্রাণিত, তাদেরই  অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সশস্ত্র বাহিনীতে কাজ করার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তিদের বেছে নিতে সেনাবাহিনী অনেক পরীক্ষানিরীক্ষা করতে পারে। এইভাবে নিয়োগের সংখ্যা কম হলেও ধীরে ধীরে যোগ্য সৈন্যদের বড় রিজার্ভ তৈরি করতে পারবে সেনাবাহিনী।

পিটার হিলে/এডিকে