সেবিট মেলায় জাপানের চমক
‘উদীয়মান সূর্যের দেশ’ বলে পরিচিত জাপান হানোফার শহরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় তথ্য-প্রযুক্তি মেলা সেবিট-এ সহযোগী দেশ৷ ‘সোসাইটি ৫.০’ বিষয়কে কেন্দ্র করে প্রায় ১২০টি কোম্পানি জীবনযাত্রার উপর ডিজিটাল প্রভাবের কিছু নমুনা তুলে ধরেছে৷
রোবট ও কঙ্কাল
‘এক্সোস্কেলিটন’ বা কঙ্কালসার রোবট কারখানার কর্মীদের ভারি জিনিসপত্র বহন করতে সাহায্য করে৷ পক্ষাঘাতগ্রস্ত মানুষকে চলাফেরায়ও সহায়তা করতে পারে তারা৷ এর প্রস্তুতকারক নেডো নামের জাপানি কোম্পানির কর্মীরা মেলায় জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে-র জন্য অপেক্ষা করছেন৷
আগন্তুক, পরিচিত না বন্ধু?
এ বছরের সেবিট মেলায় অনেক রোবট তাদের কেরামতি দেখাচ্ছে৷ জাপানের ইঞ্জিনিয়াররা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সফটওয়্যার ব্যবহার করে রোবটদের আচরণ যতটা সম্ভব মানুষের মতো করে তোলার চেষ্টা করছেন৷ সেই রোবট মুখ দেখে মানুষ চিনতে পারে, ‘বন্ধু’-দের আলাদা করে খাতির-যত্ন করে৷ বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ জাপানে রোবটরা আরও বেশি করে বয়স্ক মানুষদের দেখাশোনা ও হোটেলে পরিষেবার কাজ করছে৷
রূপে-গুণে লক্ষ্মী
এই রোবট ‘চিয়ারলিডার’-রা শুধু দেখতেই মিষ্টি নয় – কাজেকর্মে তারা কম যায় না৷ নানা রকম সেন্সর ও মোটর ভরা এই যন্ত্রদের যা শেখানো হয়, তা নির্ভুলভাবে করে দেখায় তারা৷ শিল্পক্ষেত্রে রোবটের প্রয়োগের ক্ষেত্রে জাপান দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে৷ প্রতি ১০,০০০ কর্মীর অনুপাতে ২১১ টি করে রোবট সেখানে কাজ করে৷ শীর্ষ স্থানে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, তৃতীয় স্থানে জার্মানি৷
অ্যাপ-সর্বস্ব জীবনযাত্রা
জাপানে সন্তানসম্ভবা মায়েদের এক তৃতীয়াংশই ‘নিম্পু টেকু’ নামের একটি অ্যাপ ব্যবহার করেন৷ অন্তত তার নির্মাতা হাকুহোডো কোম্পানি এমনটাই দাবি করে৷ স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য, ডাক্তারদের কাছে প্রশ্ন, চেকআপ-এর সময় স্থির করা – এই সব কাজ একটি অ্যাপের মাধ্যমেই করা যায়৷ ১৯৪২ সাল থেকে জাপানে যে ‘মাদার্স পাসপোর্ট’ চালু আছে, এই অ্যাপ তারই উত্তরসূরি৷ সন্তান মানুষ করার কাজে সাহায্য করতেও আলাদা অ্যাপ রয়েছে৷
উড়ন্ত সঙ্গী বেশি দূরে নেই!
শক্তিশালী হাত ও মোটরের কল্যাণে ‘প্রোড্রোন’ নামের উড়ন্ত যন্ত্র বেশ ভারি জিনিসপত্র বহন করতে পারে৷ এমনকি আপনাকেও তুলে নিয়ে উড়ে যেতে পারে৷ এর আরেকটি সংস্করণের আবার চাকাও আছে৷ ফলে সেটি দেওয়াল বা সিলিং-এর উপর চলে বেড়াতে পারে, ফাটল শনাক্ত করতে পারে৷ মূল্য প্রায় ৫০,০০০ ইউরো৷ তবে ধীরে ধীরে এমন ড্রোনের দাম কমবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
কাগজপত্র নিয়ে মাথাব্যথা
ব্যবসা বা অফিসের কাজে বাইরে গেলে খরচের দিকে নজর রাখতে হয়৷ সেই কাজে সাহায্য করতে এসে গেছে অ্যাপ৷ এক্ষেত্রে জাপানের অন্যতম প্রধান কোম্পানি এআইওয়ার্কস এমন এক অ্যাপ তৈরি করেছে, যা দিয়ে বিলের ছবি তুললেই চলবে৷ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সফটওয়্যার বাকি কাজ করে দেবে৷ কোম্পানির মতে, জাপানের অফিস কর্মীরা গড়ে প্রায় ৪০ শতাংশ সময় ডেটা এন্ট্রি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন৷ এবার সেটা বদলাতে চলেছে৷
নিজের বাস্তব পছন্দ নয়? অন্য একটি বেছে নিন!
অদূর ভবিষ্যতে কোটি কোটি মানুষ নিজেদের ব্যস্ততা ও সমস্যা ভরা জীবনযাত্রা থেকে রেহাই পেতে ‘ভার্চুয়াল রিয়ালিটি’ পরিবেশে ডুব দেবেন বলে পূর্বাভাষ শোনা যাচ্ছে৷ সেরেভো-র মতো কোম্পানি শরীরের বিভিন্ন অংশে পরার জন্য ভি-আর টুল তৈরি করছে৷ যেমন এই বিশেষ জুতো ব্যবহারকারীর পায়ের নীচে সিমেন্ট, ঘাস বা বরফের উপর চলার অনুভূতি সৃষ্টি করে৷ এর পরের ধাপে সারা শরীরের জন্য ভি-আর স্যুট তৈরির পরিকল্পনা চলছে৷
চারিদিকে সারাদিন কারাওকি!
‘লিরিক স্পিকার’ আসলে এক সাধারণ লাউডস্পিকার – শুধু একটি পর্দা ও বিশেষ সফটওয়্যারের সঙ্গে যুক্ত, যা কোনো গান চালালেই শনাক্ত করতে পারে৷ তারপর তালে তালে গানের কথা পর্দায় ফুটে ওঠে৷ অতএব আলাদা করে কারাওকি বার-এ যাবার দরকার নেই৷ যখন খুশি, যেখানে খুশি পছন্দের গান সঠিকভাবে গাইতে পারেন৷