জীবন, মৃত্যু ও আত্মহত্যা
২২ আগস্ট ২০১৪সামহয়্যার ইন ব্লগে মঞ্জুর চৌধুরী লিখেছেন,
‘‘কিছুদিন আগে রবিন উইলিয়ামস আত্মহত্যা করলেন৷ পৃথিবীর সম্পূর্ণ বিপরীত প্রান্তে আমাদের শিল্পী ন্যান্সিও আত্মহত্যা করার চেষ্টা করলেন৷ বুঝে গেলাম আগুন ছড়াতে শুরু করেছে৷ কাজেই তড়িঘড়ি করে আত্মহত্যা নিয়ে আমি লিখলাম৷ উদ্দেশ্য একটাই৷ যদি কেউ লেখাটা পড়ে সর্বনাশা সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন৷''
তিনি লিখেছেন, ‘‘আত্মহত্যার ফলে লাভটা কী হলো? সম্ভাবনাময় এক জীবনের খুবই দুঃখজনক পরিণতি৷''
মঞ্জুর চৌধুরী আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করেছেন তাঁর লেখায়৷ লিখেছেন, ‘‘আমাদের দেশে একটি মেয়ে যখন আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়, তখন তার আশেপাশের মানুষ নানান কুৎসা রটাতে শুরু করে, বেশিরভাগই রসালো এবং মশলাদার৷ দুঃখজনক হলো, মানুষ এইসব ফালতু কথা বিশ্বাসও করে৷''
তিনি আঁর পরিচিত একজনের আত্মহত্যার খবর উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘‘মেয়েটি নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল৷ মেয়েটির মৃত্যুর খবর কলেজে আসতেই ক্লাসমেটদের মধ্যে ফিশফিশানি শুরু হয়ে গেল, তবে কি সে প্রেগন্যান্ট ছিল? না হলে আত্মহত্যা করবে কেন? পরে জানা গেল কলেজের পরীক্ষায় বাজে রেজাল্ট করায় মা-বাবার কথা শুনে অভিমানে মেয়েটি আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়৷''
এ জন্য বাবা-মার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি৷ লিখেছেন, ‘‘একটা কথা সর্বজন স্বীকৃত যে মা-বাবার চেয়ে আপন কেউ পৃথিবীতে নেই৷ কিন্তু এই কথাটিও কিন্তু সত্য যে বেশিরভাগ মা-বাবা এর বাজে ফায়দা তোলেন৷ ছেলে-মেয়েদের উপর অবাস্তব প্রত্যাশা রাখেন৷ তারা সেটা অর্জন করতে না পারলে এমন সব কথা শোনান, যার পরে বাচ্চাদের মনে হয় এর চেয়ে গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া ভালো৷ আশেপাশেই এর প্রচুর উদাহরণ আছে৷''
কন্যা সন্তানের প্রতি বাবা-মার উদাসীনতার কথাও তুলে ধরেছেন তিনি৷ লিখেছেন, ‘‘কিছু বাবা-মা আছেন, যারা তাঁদের সন্তানদের নিয়ে লজ্জিত৷ বিশেষ করে কন্যা সন্তানকে নিয়ে৷ মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না – বাবারে, বিরাট অপরাধ হয়ে গেছে! সমাজে মুখ দেখানো দায়! মা-বাবাকেও এক তরফা দোষ দিয়ে লাভ নেই৷ তাঁরাও সমাজে থাকেন৷ অসুস্থ সমাজে থেকে থেকে তাঁরাও অসুস্থ হয়ে যান৷''
তিনি নবীজির দৃষ্টান্ত দিয়ে লিখেছেন, ‘‘আমাদের নবীজিরও (সঃ) কোনো পুত্র সন্তান জীবিত ছিলেন না৷ মৃত্যুকালে তাঁর একমাত্র জীবিত সন্তানের নাম, ফাতিমা (রাঃ), তাঁর কন্যা৷''
রেজওয়ান সামহয়্যার ইন ব্লগে আত্মহত্যার ঘটনা ও হলুদ সাংবাদিকতা নিয়ে লিখেছেন৷ তিনি লিখেছেন,
‘‘আমাদের মিডিয়া যে কত নীচে নেমে গেছে তার প্রমাণ হলো ন্যান্সির আত্মহত্যার ঘটনা বানিয়ে প্রকাশের ভঙ্গি৷ আমাদের মিডিয়া সত্যকে ভুলে যাচ্ছে৷ একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে খুশি করতে নিজেদের নৈতিকতাকে বিসর্জন দিয়েছে৷ যাই হোক, বর্তমানে বাংলাদেশের মিডিয়ার চেয়ে আমার কাছে ফেসবুক অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য মনে হয়৷''
পত্রিকায় ন্যান্সি ৬০টি ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রকাশ হয়েছিল৷ তিনি ব্লগে ন্যান্সির ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে লিখেছেন, ‘‘২১ আগস্ট দেয়া কণ্ঠশিল্পী ন্যান্সির ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে জানা যায়, গত ১০ মাসে তাঁর সব স্টেজ শো বাতিল হয়ে যায়, যা তাঁকে হতাশ করে তুলেছিল৷ এই সমস্ত নানাবিধ চিন্তায় তাঁর ঘুম কম হত৷ ঘটনার দিনও তাঁর কোনো ভাবেই ঘুম আসছিল না৷ তাই নিজের খাওয়া ট্যাবলেট হাতের কাছে না থাকায় তিনি তাঁর মায়ের জন্য দেওয়া ট্যাবলেট থেকেই ৭-৮টা ট্যাবলেট খেয়েছিলেন৷ ট্যাবলেটগুলো মা মারা যাওয়ার পরে ফেলা হয়নি৷ খুব সম্ভবত ওই ট্যাবলেটগুলো অনেক দিন আগের হওয়াতে সেগুলোর মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল৷''
ন্যান্সি তাঁর স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘‘...আর তাই আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং আমার ভাইয়েরা আমাকে নেত্রকোণায় নিয়ে আসে ট্রিটমেন্টের জন্য৷''
তিনি আরো লিখেছেন, ‘‘কোনো কোনো মিডিয়া প্রচার করেছে আমি নাকি আত্মহত্যা করার উদ্দশ্যে ৬০টি ঘুমের বড়ি খেয়েছি!! কোনো সুস্থ সচেতন ও বিবেকবান মানুষ মিডিয়ার এ সমস্ত বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত খবর বিশ্বাস করবে বলে আমার মনে হয় না৷ শুধু তাই নয়, গত ক'দিনে আমার স্বামী, পরিবারকেও জড়িয়ে দেখলাম অনেক মিথ্যা ও মুখরোচক সংবাদ প্রচার করা হয়েছে, যা কোনোভাবেই সঠিক নয়৷ এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং সমাজের চোখে আমাকে হেয় করতেই এ সব বানোয়াট তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে৷''
সবশেষে রেজওয়ান লিখেছেন, ‘‘বাংলাদেশের মিডিয়াগুলোর উচিত শুধু জনগণের পক্ষে কথা বলা৷ আর তা করতে না পারলে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা অচিরেই শূন্যের কোঠায় নামবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷''
সংকলন: অমৃতা পারভেজ
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ