1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এখনো খোলা আকাশের নীচে...

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা২৪ জুলাই ২০১৫

বাংলাদেশের সোয়ান গার্মেন্টস-এর শ্রমিকরা আশ্বাস পেলেও এখনো নিশ্চিত নন যে কবে তাঁরা তাঁদের চারমাসের বকেয়া বেতন এবং ঈদ বোনাস পাবেন৷ তাই ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ঈদের আগে শুরু হওয়া অবস্থান ধর্মঘট অব্যাহত রেখেছেন তাঁরা৷

https://p.dw.com/p/1G4IS
Bangladesch nach Brand in einer Textilfabrik in Dhaka Proteste
ছবি: Reuters

সোয়ান পোশাক কারখানার ১৩শ' শ্রমিকের ঈদ কেটেছে প্রেসক্লাবের সামনে, খোলা আকাশের নীচে৷ গত ১৩ দিন ধরে এই অবস্থান কর্মসূচি চলছে তাঁদের৷ সরকারের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠন করে দেয়া হলেও কমিটি এখনো সুনির্দিষ্টভাবে বলেনি যে, কীভাবে এই গার্মেন্টস শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতা দেয়া হবে৷

বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের যুগ্ম সম্পাদক জলি তালুকদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার কমিটির সঙ্গে শ্রমিক নেতা, গার্মেন্টস প্রতিনিধি এবং ব্যাংক কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়েছে৷ বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতা দেয়া হবে৷ কিন্তু কী পদ্ধতিতে সেটা দেয়া হবে, তা জানানো হয়নি৷ তাই আমরা বকেয়া বেতন-ভাতার টাকা হাতে না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷''

সোয়ান গার্মেন্টস সোয়ান গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান৷ কারখানাটি তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-র সদস্য (নিবন্ধন ৫৮৭)৷ সোয়ান-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মিং ইউন হন ও পরিচালক ইং লি৷ তাঁরা দু'জন স্বামী-স্ত্রী, চীনের নাগরিক৷ বিজিএমইএ-র সভাপতি আতিকুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘কারখানার এমডি গত এপ্রিল মাসে মারা যান৷ এরপর থেকেই বেতন-ভাতা নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়৷ বন্ধ করে দেয়া হয় কারখানাটি৷ তবে আমরা আশা করছি, এই জটিলতা কেটে যাবে৷ আর শ্রমিকরা কয়েকদিনের মধ্যেই তাঁদের বকেয়া বেতন-ভাতা পাবেন৷''

সোয়ান-এর ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত সোয়ান গ্রুপের মোট কারখানা পাঁচটি৷ এ সব কারখানা ওয়াললমার্ট, লি অ্যান্ড ফাং, টিম, অটো, নর্দান গেটওয়ে, ফুটলকার, সিয়ার্স এবং জার্মান কোম্পানি আল্ডি'সহ মোট ১৫টি খ্যাতনামা ব্র্যান্ডের ক্রেতাদের সঙ্গে কাজ করে আসছিল৷

ঢাকার উত্তরার মোল্লারটেকে সোয়ান গার্মেন্টস-এর অবস্থান৷ গত এপ্রিলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইউন হন মারা যাওয়ার পর থেকে বন্ধ রয়েছে গার্মেন্টসটি৷ উত্তরাধিকারের জটিলতার কারণে কারখানাটি আর চালু হচ্ছে না৷ আসলে চীনা নাগরিক হনের দুই স্ত্রীর মধ্যে বিরোধের কারণেই এ জটিলতা তৈরি হয়েছে৷

মালিকের মৃত্যুর পর টাকা পাওনা থাকায় ইসলামী ব্যাংক সোয়ান গার্মেন্টসের অ্যাকাউন্ট ব্লক করে করে৷ ব্যাংকের কথা, সোয়ান গ্রুপের সমস্ত সম্পত্তি ইসলামী ব্যাংকের কাছে মর্টগেজ থাকায় সম্পত্তিও বিক্রি করা যাচ্ছে না৷

এ বিষয়ে গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি মন্টু ঘোষ বলেন, ‘‘এপ্রিলে কারখানাটির চীনা মালিক মারা যাওয়ার পর থেকে মালিকানা নিয়ে জটিলতা চলছে৷ এটি বিক্রির জন্য একটি গ্রুপের সঙ্গে ১৩ কোটি টাকা দাম চূড়ান্ত হয়ে আছে৷ ফলে ব্যাংকের মাধ্যমে সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা আদায় করলে শ্রমিকদের বেতন দেয়া সম্ভব৷ কিন্তু সরকারের নিস্ক্রিয়তা এবং ব্যাংকের টালবাহানার কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে৷ শ্রমিকদের ঈদ কাটাতে হয়েছে খোলা আকাশের নীচে, বৃষ্টিতে ভিজে৷''

জলি তালুকদার জানান, ‘‘ইসলামী ব্যাংক শ্রমিকদের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলাও করেছে৷ তাদের উদ্দেশ্য সৎ নয়৷ তারা চায়, গার্মেন্টস-এর সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে৷ এপ্রিল থেকে চলতি মাস পর্যন্ত শ্রমিকদের চার মাসের বকেয়া সাত কোটি টাকার বেশি হবে না, যা সহজেই দেয়া সম্ভব৷''

সরকার গঠিত কমিটির প্রধান কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ আহমেদ জানান, ‘‘বৃহস্পতিবারের বৈঠকে গার্মেন্টস শ্রমিক নেতা এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন৷ বৈঠকে শ্রমিকদের বকেয়া দিতে সব পক্ষ সম্মত হয়েছেন৷ সম্মত হয়েছে ইসলামী ব্যাংকও৷ এখন কীভাবে শ্রমিকদের বকেয়া দেয়া হবে, তা মঙ্গলবারের মধ্যেই শ্রমিকদের জানানো হবে৷'' অথচ সরকার ঘোষণা দিয়েছিল, ঈদের আগে ১৪ই জুলাইয়ের মধ্যেই সব গার্মেন্ট শ্রকিদের বেতন ও বোনাস দেওয়া হবে৷

ঈদের আগে বকেয়া বেতন-বোনাস পরিশোধ করতে ১২ই জুলাই সোয়ানের শ্রমিকরা জাতীয় প্রেসসক্লাবের সামনে অবস্থান নেন৷ বেতন না পেয়ে তাঁরা সেখানে টানা অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছেন৷ এমনকি ঈদও সেখানেই পালন করেছেন তাঁরা৷ বেতন পরিশোধে ব্যবস্থা নিতে শ্রমিকরা বৃহস্পতিবার দিলকুশায় ইসলামী ব্যাংকের কার্যালয় ঘেরাও করেন৷ গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কার্যকরী সভাপতি সাদেকুর রহমান জানান, ‘‘আন্দোলনরত শ্রমিকদের মধ্যে ৫০ জন জ্বর ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত৷''

প্রসঙ্গত, গত বছরও ঈদের সময় তুবা গার্মেন্টস-এর শ্রমিকরা বেতন-ভাতা না পেয়ে আন্দোলনে করেছিলেন৷ কারাগারে আটক থাকা তুবা গার্মেন্টস-এর মালিককে ছেড়ে দেয়ার জন্য শ্রমিকদের বেতন-ভাতা না দিয়ে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল৷ পরে আন্দোলনের মুখে ঈদের পর শ্রমিকরা বেতন-ভাতা আদায় করেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান