সৌদি আরবে ম্যার্স আতঙ্ক
২৩ মে ২০১৪বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বেশ কয়েক লাখ মানুষ বাস করেন সৌদি আরবে৷ মুসলমানদের আবশ্যকীয় ইবাদত হজ উপলক্ষ্যেও প্রতি বছর অনেক মানুষ সেদেশ ভ্রমণ করেন৷ এরকম এক দেশে এমন এক ভাইরাস ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে, যার সম্পর্কে আন্তর্জাতিক গবেষক, বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসকরা এখনো খুব বেশি কিছু জানতে পারেননি৷
শুধুমাত্র সৌদি আরবেই ১৭৫ জনের বেশি ম্যার্স ভাইরাসে প্রাণ হারিয়েছেন৷ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ছাড়াও মালয়েশিয়া, গ্রিস, লেবানন, এমনকি ব্রিটেন হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত পৌঁছে গেছে এই ভাইরাস৷
এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের গবেষণায় যা জানা গেছে তা হচ্ছে, ম্যার্সের সঙ্গে সার্স ভাইরাসের কিছুটা মিল রয়েছে৷ মূলত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাতেই ম্যার্সের প্রকোপ বেশি৷ এছাড়া শরীরের সংস্পর্শ, হাঁচি বা কাশির মাধ্যমেও এ রোগ মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে৷ সারা বিশ্বে ম্যার্সে আক্রান্তের সংখ্যা এখন ৬৫০ জনের বেশি৷ সৌদি আরবে প্রতি নিয়তই এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে৷ আর রোগীদের প্রায় ৩০ শতাংশের মতো মৃত্যুবরণ করছে৷
আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাইরাসটি সম্পর্কে সৌদি আরবের কাছ থেকে পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া গেলে গত দু'বছরের মধ্যেই সেটির সংক্রমণ এবং প্রাণহানি রোধ সম্ভব হতো৷ কিন্তু সৌদি আরব এ সংক্রান্ত সহায়তার প্রস্তাব বারংবার ফিরিয়ে দিয়েছে বলেই দাবি ম্যার্স ভাইরাস নিয়ে কাজ করা গবেষকদের৷
ব্রিটেনের রয়েল ইন্সটিটিউটট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স-এর বৈশ্বিক স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান ডেভিড হেম্যান এই বিষয়ে বলেন, ‘‘ম্যার্স ভাইরাসে মানুষ কিভাবে আক্রান্ত হচ্ছে তা এখনো জানতে না পারাটা আর আক্রান্তদের ভোগান্তি এবং মৃত্যু দেখাটা অত্যন্ত হতাশার ব্যাপার৷ আমরা আরো তথ্য পেলে হয়ত এগুলো ঠেকানো যেত৷''
সোদি উপস্বাস্থ্যমন্ত্রী জিয়াদ মেমিশ অবশ্য আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ শুনে ‘বিস্ময়' প্রকাশ করেছেন৷ তিনি বরং দাবি করেন, ম্যার্স প্রতিরোধে সম্মিলিতভাবেই কাজ করা হচ্ছে৷ এক্ষেত্রে নিজের দেশের অগ্রগতি নিয়ে সন্তুষ্টিও প্রকাশ করেন মেমিস৷
এখানে লেখা প্রয়োজন, ম্যার্স ভাইরাস সম্পর্কে তথ্য ইন্টারনেটে প্রকাশ করায় জেদ্দার ড. সোলেমান ফাকি হাসপাতালের এক চিকিৎসক ইতোমধ্যে চাকরিচ্যুত হয়েছেন৷ অনুজীববিজ্ঞানী আলী মোহামেদ জাকি প্রথম ম্যার্স আক্রান্ত রোগী সম্পর্কে তথ্য একটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান বিষয়ক ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেন৷ এই ঘটনার এক সপ্তাহের মধ্যে চাকরি হারান তিনি৷
ড. ফাকি এখন নিজের দেশ মিশরে ফিরে গেছেন৷ ম্যার্স ভাইরাস সম্পর্কে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করছেন তিনি৷
আপাতত উটকে ম্যার্স ভাইরাসের প্রাথমিক উৎস হিসেবে বিবেচনা করছেন বিজ্ঞানীরা৷ কিন্তু এই ভাইরাস উট থেকে মানুষের শরীরে কিভাবে ছড়াচ্ছে তা ধরতে পারেননি তাঁরা৷ উটের মাংস খেয়ে, দুধ পান করে, উটের রক্ত থেকে নাকি উটের কাছে গেলেই এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে তা এখনো জানা যায়নি৷
এআই/ডিজি (রয়টার্স, এএফপি)