সৌদিতে নিখোঁজ চার শিক্ষার্থী, জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার সন্দেহ
৮ মার্চ ২০২০গত জানুয়ারিতে সৌদি আরবে ওমরাহ পালন করতে গিয়ে আর বাংলাদেশে ফিরে আসেননি ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থী৷ এই ঘটনায় এরইমধ্যে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছে তাদেরকে সৌদি আরবে পাঠানো ট্রাভেল এজেন্সি৷ তদন্ত শুরু করেছে ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটও৷ বেশ কিছু তথ্যও পেয়েছেন তারা৷
কাউন্টার টেররিজমের উপ-কমিশনার সাইফুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিষয়টি আমাদের নজরে আসার পর আমরা অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখেছি, সৌদি আরবের বিতর্কিত বক্তা মুস্তাক মুহাম্মদ আরমান খানের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ ছিল৷ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা মুস্তাক ঢাকায় ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজিতে কিছুদিন শিক্ষকতা করেছেন৷ বছর তিনেক আগে তিনি সপরিবারে সৌদি আরব চলে যান৷ সৌদি আরবে যাওয়ার পর তারা কোথায় আছেন, কী করছেন, সে ব্যাপারেও কোন তথ্য পাওয়া যায়নি৷’’
নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের ছাত্র শেখ মিজানুর রহমান, উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের আল-আমিন, কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের ফাহিম হাসান খান৷ এই তিনজনই মাস্টার্সে অধ্যয়নরত ছিলেন৷ আরেক নিখোঁজ শিক্ষার্থী আব্দুল মোমেন কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র বলে জানা গেছে৷ তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়টির হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে থাকতেন৷
নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের একজন ফাহিম হাসানের বাবা স্কুল শিক্ষক আবুল কাশেম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ইন্টারমিডিয়েটে কিছুদিন সে নামাজ পড়তো৷ এরপর বন্ধ করে দেয়৷ কিছুদিন আগে আবার পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ শুরু করে৷ কয়েকদিন আগে পরীক্ষার সময় সে তার মাকে জানায়, বড় ভাইদের সঙ্গে ওমরাহ করতে যাবে৷ আমি তাকে বলি, এখনও তো বয়স হয়নি৷ সে বলে ওমরাহ করার বয়স লাগে না৷ সারা জীবনে কখনও কিছুই চায়নি আমার ছেলে৷ তাই আমি একমাত্র ছেলেকে ওমরাহ করার টাকা দিয়ে দিই৷ যাওয়ার আগে সে বলেছিল, সামনে বিসিএস পরীক্ষা দেব৷ চাকরি হয়ে গেলে তোমার আর কষ্ট করতে হবে না৷ এখন তো যা শুনছি, তাতে সবকিছু ওলটপালট হয়ে গেছে৷ আমি সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই, আমার ছেলেকে যেন ফিরিয়ে এনে দেয়৷’’
গত ২৫ জানুয়ারিতে তারা সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে রওনা হন৷ আল-আমিন ও মিজানুর রহমান যান ময়মনসিংহের সাদমান ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে৷ আর ফাহিম ও আব্দুল মোমেনকে পাঠায় বিএসএস ট্রাভেল এজেন্সি৷ সৌদি আরব পৌঁছানোর পর ওমরাহ না করে অন্য কোথাও চলে যান তারা৷ ২২ ফেব্রুয়ারি তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও তারা দেশে ফেরেননি৷
ফাহিম হাসানের মা সানজিদা খানম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ওমরাহ যাওয়ার আগে সবশেষ কথা হয়েছিল৷ এরপর থেকে আর কোনো কথা হয়নি৷ কোথায় আছে, কেমন আছে আমরা কিছুই জানতে পারছি না৷ এই বিষয়টি নিয়ে পরিবারের সবাই খুবই উদ্বিগ্ন৷ আমরা সরকারের কাছে ছেলেকে ফিরিয়ে আনার দাবি জানাই৷’’
সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ টেলিফোনে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এমন একটা বিষয় আমরা সংবাদমাধ্যমে দেখেছি, কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কাছে কোন নির্দেশনা আসেনি৷ আমরা তো আর পত্রিকার খবর দেখে ব্যবস্থা নিতে পারি না৷ নির্দেশনা এলে অবশ্যই আমরা বিষয়টি দেখবো৷’’