সৌন্দর্যের আকাঙ্খা থেকে জীবনের ঝুঁকি
৩ জানুয়ারি ২০১২বিষয়টি এখন চিকিত্সকদের তো বটেই রাজনীতিকদেরও মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷
ফ্রান্সের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, বিপজ্জনক সিলিকন প্রতিস্থাপন করিয়েছেন যে সব মেয়ে, তাদের শুধু ডাক্তারের কাছে পরামর্শের জন্য যেতে হবে৷ কিন্তু অবস্থাটা এখন আরো জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের রাষ্ট্রসচিব নোরা বেরা বলেন, ‘‘আমরা ভুক্তভোগী মেয়েদের জোর পরামর্শ দেব, জরুরি অবস্থা দেখা না দিলেও তারা যেন সিলিকন সরিয়ে ফেলেন৷''
নোরা বেরা এই সব মেয়েদের সান্ত্বনা জানিয়ে খুব বেশি আতঙ্কিত না হওয়ারও পরামর্শ দেন৷ দক্ষিণ ফ্রান্সের পিআইপি নামের এক কোম্পানি নয় বছর ধরে বাথরুম ও গাড়ির যন্ত্রাংশ জোড়া লাগাবার কাজে ব্যবহৃত পদার্থ সিলিকনের সাথে মিশিয়ে তাদের পণ্য প্রস্তুত করে আসছিল৷
সংক্রমণের সম্ভাবনা
রাষ্টসচিব নোরা বেরার ভাষায়, ‘‘পিআইপি-র তৈরি সিলিকনে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ার সম্ভাবনা তেমন নেই৷ তবে আরেকটা বিপদ হতে পারে৷ তা হল, এই সিলিকনের ফেটে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি, এর ফলে জ্বালাপোড়া থেকে সংক্রমণও দেখা দিতে পারে৷''
এসব কারণে সিলিকনের বস্তুগুলো বের করে নেয়ার ব্যাপারে জোর দেয়া হচ্ছে৷ ফ্রান্সে ৩০ হাজার নারী এই সমস্যায় পড়েছেন৷ স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাভিয়ের ব্যার্ট্রাঁ আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ছাড়াই এই সব মেয়েকে সাহায্য করার অঙ্গীকার করেছেন৷ ব্যার্ট্রাঁ-র ভাষায়, ‘‘এই অপারেশনের সম্পূর্ণ খরচই বহন করবে বিমা কোম্পানিগুলি৷''
অবশ্য এ ক্ষেত্রে একটা সমস্যা রয়েছে৷ বিমা কোম্পানিগুলি বিপজ্জনক সিলিকন বের করে নিতে সেই সব মেয়ের জন্যই খরচ বহন করবে, যাদের স্তনের ক্যানসারের অপারেশনের পর সিলিকনের বুক তৈরি করা হয়েছে৷ এই সংখ্যাটা ভুক্তভোগী নারীদের এক পঞ্চমাংশ হবে৷ অন্যরা সৌন্দর্য বৃদ্ধির কথা ভেবে শল্য চিকিত্সকের শরণাপন্ন হয়েছিলেন৷ এক উদ্বিগ্ন নারী বলেন, ‘‘আমার দুই থেকে তিন হাজার ইউরো খরচ হয়েছে এই অপারেশনের জন্য৷ এটা অত্যন্ত ব্যয়বহুল৷ আমি মধ্যবিত্ত হলেও মাসের শেষে খরচ চালানো কষ্টকর হয়ে যায়৷ দ্বিতীয় অপারেশনের খরচ বহন করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়৷''
এই অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির জন্য প্ল্যাস্টিক সার্জনদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, যেন তারা পারিশ্রমিকের ব্যাপারে সংযত হন৷ তবে এটা এখনও অস্পষ্ট যে, এ ব্যাপারে জবাবদিহির দায়ভারটা কে নেবে৷ এই কেলেঙ্কারি প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পর সিলিকনের পণ্য প্রস্তুতকারী সেই কোম্পানিটি দেড় বছর আগে দেউলিয়া হয়ে গেছে৷
জার্মানিতে সতর্ক সংকেত দেয়া হয়নি
জার্মানির ওষুধ ও চিকিৎসা যন্ত্রপাতি সংক্রান্ত ইনস্টিটিউট অবশ্য সিলিকন প্রতিস্থাপন করিয়েছেন যে সব মেয়ে, তাদের অতটা আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে৷ বলা হয়েছে, কৃত্রিম এই পদার্থটি অপসারণ করার প্রয়োজন নেই সবার ক্ষেত্রে৷ তবে উদ্বিগ্ন মেয়েরা ব্যক্তিগতভাবে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন, বলেন ইন্সটিটিউটের মুখপাত্র মাইক পমার৷ কেননা সিলিকন সরানোর জন্য অপারেশনের ঝুঁকিটাও কম নয়৷
জার্মান এস্থেটিক প্লাস্টিক সার্জারি সমিতির মতে প্রথমত ভুক্তভোগী মেয়েদের দেখতে হবে, এই সিলিকন ফ্রান্সের পিআইপি কোম্পানির তৈরি কিনা৷ তাহলে একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে৷ জার্মানিতে খুব কম ক্ষেত্রেই পিআইপি-এর পণ্য ব্যবহার করা হয়েছে৷ বেশির ভাগই অন্য কোম্পানির সামগ্রী৷
উল্লেখ্য, পিআইপি কোম্পানিটি অধিকাংশ পণ্যই দক্ষিণ অ্যামেরিকা, স্পেন ও ব্রিটেনে রপ্তানি করেছে৷ ভেনিজুয়েলার স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিখরচায় দূষিত সিলিকন সরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন৷
প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক