স্ক্যানারের অভাবে এক মাস শাক-সবজি রপ্তানি বন্ধ!
২৩ মার্চ ২০২২বিমান বন্দরের আরেকটি স্ক্যানার এক বছর ধরে নষ্ট৷ ব্যবসায়ীরা জানান, এখন যেটা নষ্ট হলো সেটা দিয়ে স্ক্যানিং-এর কাজ চললেও কয়েক মাস পর পরই নষ্ট হয়৷ ঠিক করতে আবার ১৫-২০ দিন সময় লাগে৷ তাই কয়েক মাস পরপরই তারা এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হন৷ এই কারণে প্রতিদিন কমপক্ষে ৬০ হাজার ডলার, অর্থাৎ প্রায় ৫২ লাখ টাকার শাক-সবজি রপ্তানি করা যাচ্ছে না বলে দাবি তাদের৷ অফলোড করা হচ্ছে চালান৷ প্রায় ২০০ রপ্তানিকারকের তাই মাথায় হাত৷ আর যে কৃষকরা রপ্তানিযোগ্য শাক-সবজি উৎপাদন করেন, তারাও পড়ছেন ক্ষতির মুখে৷ ১৩ দিনে ক্ষতি হয়েছে প্রায় আট কোটি টাকার৷ আরো ১৪ দিন বন্ধ থাকলে ক্ষতির পরিমাণ ১৭ কোটি টাকায় ঠেকবে৷
যে স্ক্যনারটি নষ্ট, সেটা ইউরোপীয় স্ট্যান্ডার্ড-এর৷ ওই স্ক্যানারে স্ক্যান না করলে কোনো এয়ার লাইন্সই শাক-সবজি বহন করে না৷ অফলোড করে দেয়৷ শুধু কাতার এয়ারওয়েজ দিয়ে কিছু দেশে অল্প কিছু রপ্তানি হচ্ছে৷ কারণ, দুবাই এয়ারপোর্টে তাদের ওই স্ক্যানার আছে৷ তবে তাতে খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে৷
বাংলাদেশ থেকে এখন প্রায় সব ধরনের শাক-সবজি বিদেশে রপ্তানি হয় এমন কী কচুর লতি, কলার মোচা, থোর কিছুই বাদ যায় না৷
লি এন্টারপ্রাইজের আবুল হোসেন জানান, তিনি ৫০ ধরনের শাক-সবজি রপ্তানি করেন যুক্তরাজ্য, ফিনল্যান্ড, জার্মানিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে৷ প্রতি দিন তিনি ২০ লাখ টাকার রপ্তানি করতেন৷ কিন্তু ১৩ দিন ধরে পারছেন না৷ তিনি বলেন, ‘‘দুই-এক মাস পর পরই এরকম হয়৷ গত মাসেও ১৮ দিন বন্ধ ছিল স্ক্যানার নষ্ট হওয়ার কারণে৷’’
তার কথা, ‘‘আমরা ২০০ রপ্তানিকারক ক্ষতিগ্রস্ত তো হচ্ছিই, এর সঙ্গে যুক্ত কৃষকও ক্ষতির মুখে পড়ছেন৷ সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে৷ তার চেয়ে বড় ক্ষতি হলো বাজার হারানো৷’’
শাক-সবজি রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তান৷ তিনি বলেন, ‘‘এভাবে চললে আমাদের বাজার থাকবে না৷ তাই এর মধ্যে অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে সন্দেহ করি৷’’
শাক-সবজি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রুটস, ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন বিষয়টি নিয়ে সিভিল এভিয়েশেন ও বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে দেনদরবার করেও ফল পাচ্ছেন না৷
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মনসুর আহমেদ বলেন, ‘‘নিরাপত্তার জন্য এই স্ক্যানিং ব্যবস্থা৷ যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের দেশগুলো তাদের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী দুইটি স্ক্যানারকে অনুমোদন দিয়েছে৷ তার মধ্যে একটি এক বছর ধরে নষ্ট৷ একটি দিয়ে কাজ চলছিল৷ তবে সেটিও প্রায়ই নষ্ট থাকে৷ গত বছরও তিন-চারবার নষ্ট হয়েছিল৷ একবার নষ্ট হলে সারাতে ১৭-১৮ দিন লাগে৷’’
তিনি জানান, ৪০ বছর ধরে তারা রপ্তানি করে ধীরে ধীরে বাজার গড়ে তুলেছেন৷ এখন যে পরিস্থিতি তাতে হয়ত বাংলাদেশ বাজার হারিয়ে ফেলবে৷
তার কথা, প্রতিদিন বাংলাদেশ থেকে গড়ে ৬০ হাজার ডলারের শাক-সবজি রপ্তানি হয়৷ গত ১৩ দিন ধরে তা বন্ধ আছে৷
এদিকে শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এসএম তৌহিদুল আহসান দাবি করেন, ‘‘স্ক্যানার নষ্ট হওয়ার কারণে শুধু যুক্তরাজ্যে শাক-সবজি রপ্তানি বন্ধ আছে৷ ইউরোপ বা অন্য দেশে সমস্যা হচ্ছে না৷’’
তিনি বলেন, ‘‘আমাদের চারটি স্ক্যানার আছে, এরমধ্যে দুইটি স্ক্যানার যুক্তরাজ্য অনুমোদন করে৷ তার একটি নষ্ট ৷ আরেকটি দিয়ে কাজ চলছিল৷ সেটিও নষ্ট হয়ে গেছে৷’’
তিনি বলেন, ‘‘এবার পার্টস নষ্ট হয়ে গেছে৷ তাই সময় বেশি লাগছে৷ দেশের বাইরে থেকে ওই পার্টস আনতে আরো দুই সপ্তাহ লাগবে৷ তার আগে ইংল্যান্ডে শাকসবজি পাঠানো যাবে না৷ আর এটা আমার হাতে নেই৷ হেড অফিস দেখে৷’’
রপ্তানিকারকরা অবশ্য দাবি করেন, ইংল্যান্ড ও ইউরাপের আরো কিছু দেশে রপ্তানি বন্ধ আছে৷ মোট রপ্তানির ৯০ ভাগই যাচ্ছে ইংল্যান্ডে৷
তাদের কথা, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ যদি এটা না পারে, তাহলে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় দিয়ে দিতে পারে, তা-ও তারা করছে না৷
রপ্তানিকারকদের হিসাব অনুযায়ী, ২০২০-২১ সালে তারা এক হাজার ২৯ কোটি টাকার শাক-সবজি ও ফল রপ্তানি করেছেন৷
২০১৯ সালের ছবিঘরটি দেখুন...