স্নোডেন জার্মানিতে?
৮ নভেম্বর ২০১৩মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক যখন এমনিতেই টালমাটাল, তখন স্নোডেনকে জার্মানিতে এনে সেই সম্পর্কের ভরাডুবি ঘটানোর ঝুঁকি নিতে জার্মান সরকার রাজি নন৷ বরং মস্কোয় গিয়ে স্নোডেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথাই বিবেচনা করা হচ্ছে৷
স্নোডেনকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া তো দূরে কথা, জার্মানি আসার ভিসা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ইতিপূর্বেই – এবং সেই সিদ্ধান্ত বজায় রাখা হবে, বলে মন্তব্য করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হান্স-পেটার ফ্রিডরিশ, যিনি সিএসইউ দলের রাজনীতিক৷ এখন বিবেচনা করা হচ্ছে, কোন শর্তে এবং কোন পরিস্থিতিতে মস্কোয় স্নোডেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব, বলেছেন ফ্রিডরিশ৷
এসপিডি দলের স্বরাষ্ট্র বিষয়ক বিশেষজ্ঞ টোমাস অপারমান-ও আপাতত স্নোডেনের জার্মানি আসার কোনো সম্ভাবনা দেখেন না৷ তা শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘‘আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে অর্জিত সমাধানের'' আঙ্গিকে সম্ভব, বলে অপারমান মন্তব্য করেছেন৷ সিডিইউ দলের সংসদীয় গোষ্ঠীর উপ-প্রধান মিশায়েল ক্রেচমার মনে করেন, স্নোডেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিশেষ কিছু নতুন তথ্য পাওয়া যাবে না৷
সবুজ দলের বিধায়ক হান্স-ক্রিস্টিয়ান স্ট্র্যোবেলে মস্কোয় গিয়ে স্নোডেনের সঙ্গে দেখা করে এই বিপত্তি বাধিয়েছেন৷ তিনি এখনও বলছেন: স্নোডেনকে জার্মানিতে আশ্রয় দিতে বাধাটা কোথায়? সরকার শুধু চাইলেই হল৷ জার্মানির স্নোডেনের প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত, বলছেন স্ট্র্যোবেলে: ‘‘নয়ত চ্যান্সেলরের মোবাইল টোলিফোনের উপর আজও আড়ি পাতা হতো৷''
কেরির আশ্বাস
স্নোডেনের সঙ্গে জার্মানির এই শুভ কিংবা অশুভ সংযোগ ওয়াশিংটনকেও দৃশ্যত সচকিত করেছে৷ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি জার্মানির ‘‘বিল্ড'' ট্যাবলয়েডের একটি সাক্ষাৎকারে জার্মান-মার্কিন সম্পর্কে জটিলতার কথা স্বীকার করেছেন৷ তবুও আন্তঃ-অতলান্তিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি, অথবা সিরিয়া কিংবা ইরানের প্রতি আচরণ ইত্যাদি প্রশ্ন এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, এ সব ক্ষেত্রে যৌথ পদক্ষেপ অপরিহার্য – বলেছেন কেরি৷ সঙ্গে কেরি ম্যার্কেলের মোবাইলে আড়ি পাতার ব্যাপারটা যতো শীঘ্র সম্ভব অনুসন্ধান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷
অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে পরিকল্পিত ‘‘নো স্পাই'' চুক্তির কথা এখন জার্মান রাজনীতিকদের মুখে মুখে, সেই চুক্তি শেষমেষ একটি মরীচিকা প্রমাণ হতে পারে৷ কারণ একটি ‘‘নো স্পাই'' চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেই যে মার্কিন গুপ্তচর বিভাগগুলি জার্মানিতে তাদের সব আড়ি পাতার অ্যান্টেনা গুটিয়ে নেবে, এমন নয় – জার্মান রাজনীতিকরা যে কথা ভালোভাবেই জানেন৷ আসলে ওয়াশিংটনে সরকারি মহলের যা মনোভাব, তা-তে ব্যাপক কোনো ‘‘নো স্পাই'' চুক্তি সম্ভবই নয়৷ প্রেসিডেন্ট ওবামা গুপ্তচর বিভাগগুলির কাজের পর্যালোচনা করার যে নির্দেশ দিয়েছেন, তা সমাপ্ত হবার আগে কোনো কিছুই এগোবে না৷
‘চোদ্দচক্ষু'
জার্মান মিডিয়ায় যে অভিমতটির খুব চল, সেটি হলো: গুপ্তচরবৃত্তির প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র যে জার্মানিকে পুরোদস্তুর অংশীদার বলে গণ্য করে না, চ্যান্সেলরের মোবাইলের উপর আড়ি পাতা হলো তারই প্রমাণ৷ গুপ্তচরবৃত্তির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে নিকট সহযোগীরা হলো ইংরিজি ভাষাভাষী দেশ, যেমন ব্রিটেন, ক্যানাডা, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া, যারা ‘‘ফাইভ আইজ'' বা পঞ্চচক্ষুর অঙ্গ৷ এর পরই আসছে ফ্রান্স, নরওয়ে, ডেনমার্ক ও নেদারল্যান্ডস, যাদের মিলিয়ে হল ‘‘নাইন আইজ'' বা নয়চক্ষু৷ জার্মানি শুধু ‘‘ফোরটিন আইজ''– এর আঙ্গিকে এই রাউন্ড টেবিলে বসার সুযোগ পায়, এ খবর দিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং ব্রিটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকা, তা-ও আবার ব্রিটিশ গুপ্তচর বিভাগের সূত্রে৷
এসি/ডিজি (ডিপিএ, এএফপি)