বলি শিল্প-সংস্কৃতি
২ আগস্ট ২০১২কোষাগারে টান পড়লেই সরকারকে ব্যয় সংকোচ করতে হয়৷ সবার আগে নজর পড়ে ভর্তুকির উপর৷ কৃষক বা শ্রমিকদের চটানো মুশকিল৷ কিন্তু সংস্কৃতির বিকাশের মতো খাতে ব্যয় কমালে জনরোষের আশঙ্কা কম৷
স্পেনেও ঠিক সেরকমটাই ঘটছে৷ দেশের অর্থনীতির বেহাল অবস্থা৷ ব্যাংকিং ক্ষেত্র চরম সংকটে৷ সরকার বাধ্য হয়ে ব্যয় কমিয়ে অসংখ্য অপ্রিয় সংস্কার চালাচ্ছে৷ ফলে চলচ্চিত্র, নাটক, সংগীত, নৃত্য – এসব ক্ষেত্রে সরকারি ভর্তুকি, অনুদান বা পৃষ্ঠপোষকতা হয় বন্ধ করা অথবা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷
শিল্পীরা এই সব পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে পথে নেমেছেন৷ অস্কার জয়ী জনপ্রিয় অভিনেতা খাবিয়ের বার্দেম এই বিক্ষোভে অংশ নিয়ে বলেন, ‘‘এরা দেশের সাংস্কৃতিক কার্যকলাপ ধ্বংস করে দিচ্ছে৷ এই দেশের সংস্কৃতি সীমানা পেরিয়ে গোটা বিশ্বে সমাদর পায়৷ এরা এখন স্পেনের সংস্কৃতি ক্ষেত্রকে অনেক সঙ্কুচিত করে ফেলছে৷''
তবে প্রশ্ন হলো, অর্থ কম থাকলে সেই সীমিত অর্থ কোন খাতে ব্যয় করা উচিত৷ গত কয়েক মাস ধরে যেখানে স্কুল ও হাসপাতালে সরকারি অনুদান কমে যাচ্ছে, সেখানে সিনেমা-নাটক-ব্যালে'র জন্য অর্থের যোগান দেওয়া বেশ স্পর্শকাতর বিষয়৷
তার উপর ১লা সেপ্টেম্বর থেকে পণ্য ও পরিষেবার উপর ‘ভ্যাট' বা বিক্রয় কর বেড়ে যাচ্ছে৷ ফলে মানুষের পকেটে আরও টান পড়বে৷ তখন তারাও টিকিট কেটে কোনো সিনেমা-থিয়েটার বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যাবার আগে দু'বার ভেবে দেখবে৷ বিশেষ করে চরম বেকারত্বের সময় সমাজে খাদ্য ও বাসস্থান নিয়ে অনেকের এত দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে, যে অন্য দিকে মনোযোগ দেওয়া কঠিন৷
কিন্তু দেশটার নাম স্পেন৷ সাম্প্রতিক ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালে সংস্কৃতি জগতের প্রতি রাষ্ট্রের রোষের অনেক দৃষ্টান্ত পাওয়া যাবে৷ ১৯৩৬ সালের গৃহযুদ্ধ থেকে শুরু জেনারেল ফ্রাংকো'র স্বৈরাচারী শাসনের আমলে অনেক শিল্পী, সাহিত্যিক, সংস্কৃতি কর্মীকে কঠিন সময়ের মুখে পড়তে হয়েছে, অনেককে নির্বাসনে চলে যেতে হয়েছে৷ যদিও সেদিনের পরিস্থিতির সঙ্গে আজকের গণতান্ত্রিক স্পেনের কোনো তুলনা চলে না, তা সত্ত্বেও একটা কালো ছায়া থেকেই যায়৷
এসবি / ডিজি (এএফপি)