স্বর্গদ্বীপ থেকে প্লাস্টিক তাড়ানোর পন্থা
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭‘‘সুপ্রভাত! আমি তোমাদের প্লাস্টিকের বোতলগুলো নিতে এসেছি৷ আজ হলো বদলানোর দিন৷ সব কাজ করেছো তো? এক জায়গায় জড়ো করেছো?''
দাদির বাড়ির উঠোনে বেশ কিছু প্লাস্টিকের বোতল জমা হয়েছে৷ কয়েক মাস পর পর, সেগুলো এখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয়৷ আজ সেই দিন৷
সিলেইনে ফের্নান্দেজ হাঁক দিলেন, ‘‘উঠোনে আর কোনো প্লাস্টিকের বোতল পড়ে নেই তো? আমাদের সব নিয়ে যেতে হবে৷ অ্যাই ছেলেরা, সব বোতল এক জায়গায় জড়ো কর দেখি!''
প্রতিটি বোতলই মূল্যবান, কেননা, তার বদলে কিছু পাওয়া যায়৷
সিলেইনে ফের্নান্দেজ বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভেশনের কর্মী৷ তিনি বললেন, ‘‘সবাই এই বায়োস্ফিয়ার বোতল চায়, বিশেষ করে ছোটরা তাতে খুব উৎসাহ বোধ করে৷ ওরা সব প্লাস্টিক কুড়িয়ে আনে, রাস্তায় প্লাস্টিক আর প্রায় পড়েই থাকে না৷''
প্রত্যেকেই তাদের বোতল আনার একটা পথ খুঁজে পেয়েছে৷ লাফ দিয়ে পা-দানিতে ওঠাটাই প্রিন্সিপে-তে কোথাও যাওয়ার সেরা পন্থা৷ বোতল নেবার জায়গায় বিরাট ভিড়৷ সারাটা দিন এ রকম চলবে৷ লাইনে ধৈর্য্য ধরে দাঁড়াতে হবে৷
সিলেইনে ফের্নান্দেজ এখন গুনে গুনে বোতল প্যাক করছেন৷ তিনি বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভেশনের কর্মী৷ অধিকাংশ বোতলেই রান্নার তেল আসে, জানালেন সিলেইনে৷ কয়েক মাস অন্তর অন্তর সিলেইনে বোতলগুলো সংগ্রহ করেন – একটা দু'টো নয়, সাড়ে চার লাখ প্লাস্টিকের বোতল৷
অনেকের বাড়িতে বোতলের স্তূপ৷ একটি মেয়ে বলল, ‘‘আমি এই বোতলে জল ভরে স্কুলে নিয়ে যাই, সেখানে তেষ্টা পেলে খাই৷'' গুনে গুনে ৫০টি বোতল হওয়া চাই৷ ‘‘কী রং চাও, লাল না সোনালি? আর দশটা বোতল আনলে তুমি আর একটা পাবে, কেমন?''
রিসাইক্লিং
বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভেশনের কর্মী এস্ত্রেলা মাতিল্দে প্রকল্প সমন্বয়ের দায়িত্বে৷ তিনি বললেন, ‘‘আমাদের এখনই চার টন প্লাস্টিক জমা হয়েছে৷ সেগুলো আমরা রাজধানী সাও তোমে-তে জমিয়ে রেখেছি৷ একটি ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি আমাদের সাহায্য করে থাকে৷ তারা বোতলগুলো বিনা খরচায় লিসবনে নিয়ে যাবে৷ সেখানে দু'টি রিসাইক্লিং সংস্থা বোতলগুলো নিতে রাজি হয়েছে৷''
রিসাইক্লিং সংস্থা খুঁজে পাওয়া খুব সহজ হয়নি৷ আফ্রিকা থেকে প্লাস্টিক আবর্জনা নিতে কেউ রাজি নয়৷ প্রিন্সিপেতে প্লাস্টিক সংগ্রহ অভিযানের জন্য বছরে প্রায় ৩০,০০০ ইউরো লাগে৷ এক বছরের মধ্যেই আবার নতুন পৃষ্ঠপোষকের প্রয়োজন পড়বে৷ কিন্তু কিছু নতুন পরিকল্পনাও আছে৷
সিলেইনে ফের্নান্দেজ শোনালেন, ‘‘আমরা একটা মেশিন কিনছি, যা প্লাস্টিকের বোতল থেকে প্লাস্টিকের সুতো বানাতে পারে৷ সেই সুতো দিয়ে আবার চুবড়ি কিংবা অন্যান্য জিনিস তৈরি করা যায়৷ কাজেই আমরা ওভাবে কাজ করতে পারি৷ সেটা খুব ভালো হবে৷''
প্রিন্সিপে টেকসই বিকাশের চেষ্টা করছে৷ কিন্তু ভারসাম্য রাখতে হয়৷ একদিকে প্রায় আট হাজার মানুষের জীবিকা ও প্রয়োজন, অন্যদিকে আফ্রিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বিপুল প্রাণীবৈচিত্র্যের অধিকারী বনভূমিগুলির মধ্যে একটি এই প্রিন্সিপে৷ চার বছর হলো, গোটা দ্বীপটাকেই ইউনেস্কোর বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভেশন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে৷ এখানকার অধিকাংশ মানুষ ফল কিংবা কোকোর চাষ করে জীবনধারণ করেন, যা পর্তুগিজ উপনিবেশের আমল থেকে চলে আসছে৷
স্বভাবতই দ্বীপটি পুরোপুরি স্বনির্ভর হতে পারে না৷ অনেক কিছু আসে সাগরপার থেকে, সেই সঙ্গে আবর্জনাও আসে৷
অন্যান্য পরিকল্পনা
তবে স্থানীয় সরকারের একটা পরিকল্পনা আছে৷ ২০২০ সাল থেকে প্রিন্সিপেতে যত প্লাস্টিকের বোতল বা থলে আসবে, তার ওপর কর বসাতে চান আঞ্চলিক প্রেসিডেন্ট হোসে কার্দোসো কাসান্দ্রা৷
প্রিন্সিপের আঞ্চলিক সরকারের প্রেসিডেন্ট হোসে কার্দোসো কাসান্দ্রা বলেছেন, ‘‘আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলছি, তাদের বলছি, কাচ অথবা ধাতুর পাত্র, অর্থাৎ প্লাস্টিক ছাড়া অন্য ধরনের প্যাকিং ব্যবহার করো৷ আমাদের পরিকল্পনা হলো, দ্বীপটিকে প্লাস্টিকমুক্ত করা অথবা প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো৷''
সাগরের পানিতে ভেসে আসা প্লাস্টিক
কিন্তু সাগর থেকে যে প্লাস্টিক আসছে, তার কী হবে? স্পেনের বিজ্ঞানী মাইতে আসেনসিও সরকারের আমন্ত্রণে প্রিন্সিপেতে এসে সৈকতগুলিতে কী পরিমাণ মাইক্রোপ্লাস্টিক ভেসে আসে, তা যাচাই করছেন৷ জোয়ারের জল যে রেখা অবধি পৌঁছায়, সেখানেই সবচেয়ে বেশি মাইক্রোপ্লাস্টিকের কণা জড়ো হয়, বলছেন আসেনসিও৷ তিনি এক বছর ধরে ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে এই পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছেন৷ পদ্ধতিটা সহজ ও কার্যকর৷
লাস পালমাস দে গ্রান কানারিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইতে আসেনসিও দেখছেন, ‘‘নমুনার অধিকাংশই জৈবিক পদার্থ৷'' তিনি মনে করেন এটা ভালো লক্ষণ, কারণ,‘‘ সৈকত খুবই পরিষ্কার বলে মনে হচ্ছে, কিন্তু বহু ফাইবার খালি চোখে ধরা পড়ে না৷ দেখলে মনে হবে যেন একটা চুল, কিন্তু তা প্লাস্টিকও হতে পারে৷ ঠিকমতো পরীক্ষা করলে তা বোঝা যাবে৷''
বালিতে কম মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে বলে যে সমুদ্রেও কম মাইক্রোপ্লাস্টিক থাকবে, এমন নয়৷