1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

স্বাধীনতা দিবসে মোদীবিরোধী বিক্ষোভ, সংঘর্ষ

২৬ মার্চ ২০২১

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এখন ঢাকায়৷ তার আগমনে স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের বিপরীতে চলেছে বিক্ষোভ৷

https://p.dw.com/p/3rFMF
ছবি: bdnews24.com

নরেন্দ্র মোদীর আগমনেরপ্রতিবাদে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ এলাকা শুক্রবার রণক্ষেত্রে পরিণত হয়৷

গত শুক্রবারও বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকায় জুমার নামাজের পর মোদীবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে৷ আর তা করেছিল কিছু ইসলামি দল৷ তবে সেদিন তাদের বিক্ষোভ ছিল শান্তিপূর্ণ৷ কিন্তু আজ ইসলামি দলগুলোর নেতা-কর্মীদের মসজিদের বাইরেই বের হতে দেয়নি পুলিশ৷ ফলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে৷ পুলিশের সাথে লাঠি নিয়ে অনেক বহিরাগতকেও দেখা গেছে৷ তারা মোদীবিরোধীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়৷ দু পক্ষের সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অনেকে৷

Bangladesch Protest Besuch Narendra Modi
ছবি: bdnews24.com

বুহস্পতিবারও পরিস্থিতি উত্তপ্ত ছিল৷ মতিঝিল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মোদীবিরোধীদের মিছিলে হামলা হয়েছে৷ সন্ধ্যায় শাহবাগ এলাকায় মশাল মিছিলেও হামলা হয়েছে৷ কিছু ইসলামি দল ও হেফাজতে ইসলাম ছাড়াও বামপন্থিদের বড় একটি অংশ এই মোদীর ঢাকা সফরের বিরুদ্ধে৷ বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরের অনুসারীরাও৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বৃহস্পতিবারের হামলার জন্য ছাত্রলীগকে দায়ী করা হচ্ছে৷

এই পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে সাংবাদিক রাজীব নূর বলেন, ‘‘একজন অতিথি এসেছেন, তাকে তো সম্মান জানানোই উচিত৷ কিন্তু গুজরাটে নরেন্দ্র মোদী যা ঘটিয়েছেন, সেটা তো আমাদের স্মৃতিতে আছে৷ মোদী এর আগেরবার (২০১৫ সালে ঢাকা সফর)  বক্তৃতায়  অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলেছেন৷ তখন আমি লিখেছিলাম গুজরাটের খুনি আমাদের অসাম্প্রদায়িকতা শেখায়৷ মোদী অসাম্প্রদায়িতার কথা বলে, সম্প্রীতির কথা বলে আর আমাদের সীমান্তে মানুষ মারে৷ তার এই দ্বৈত নীতির তো প্রতিক্রিয়া হবেই৷ সেই প্রতিক্রিয়া হচ্ছে৷’’

Bangladesch | Ausschreitungen in Hathazari
ছবি: bdnews24.com

রাজীব নূর আরো বলেন, ‘‘এমন একটি দেশের প্রধানমন্ত্রীকে আমরা আমাদের স্বাধীনতা দিবসে আমন্ত্রণ জানিয়েছি যে দেশের মানুষ আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে অনেক বড় ভূমিকা রেখেছেন৷ কিন্তু মোদী, তার সরকার ও তার দল কি সেই চেতনাকে ধারণ করে? ফলে স্বাভাবিকভাবেই বিরোধিতা হবে৷’’

তবে তিনি জানান, এই বিরোধিতাকারীদের ব্যাপারে তার পর্যবেক্ষণ আছে৷ তার মতে, ‘‘এক গ্রুপ আছে যারা আমার মতো মন থেকে বিরোধিতা করেন, চেতনার জায়গা থেকে বিরোধিতা করেন৷ আরেক গ্রুপ আছে যারা সাম্প্রদায়িক৷ তারা সাম্প্রদায়িকতার কারণে বিরোধিতা করেন৷ তারা নিজেরাও সাম্প্রদায়িক৷ তারাই আবার মোদীর সাম্প্রদায়িকতারও বিরোধিতা করেন৷’’

এটা হলো একটি রাষ্ট্রকে সম্মান জানানো: জাহিদ রেজা নূর

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা তার সাথে নরেন্দ্র মোদীর অবস্থান এবং কাজ যায় কিনা- এমন প্রশ্নও উঠছে৷ এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদীর অবস্থান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক৷ তিনি একটি হিন্দুত্ববাদী দলের নেতা৷ তিনি যদি কোনো গণতান্ত্রিক দলের নেতা হতেন, তাহলে এই বিরোধিতা হতো না৷ গুজরাট দাঙ্গায় এক হাজারের বেশি মুসলমান নিহত হন৷ নরেন্দ্র মোদী ছিলেন তার মাস্টারমাইন্ড৷ দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর তিনি নাগরিকত্ব আইন করে প্রায় ২০ কোটি মুসলমানকে নাগরিকত্বহীন করতে চান৷ তার দেশেও তিনি নানা সমালোচনার মুখে রয়েছেন৷’’

তার মতে, এটা ব্যক্তি নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ৷ ডনাল্ড ট্রাম্প ও বারাক ওবামা তো এক না৷ ইয়াহিয়া- আইয়ুব খান আর পাকিস্তানের কোনো গণতান্ত্রিক শাসক তো এক না৷  বলা হচ্ছে, তিনি সরকার প্রধান হিসেবে এসেছেন৷ কিন্তু তাতে তার যে বিতর্কিত কাজ, উগ্রপন্থা ও চরমপন্থাকে উসকে দিচ্ছে, তা তো মুছে যচ্ছে না৷

মোদীর অবস্থান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক: অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন

তবে তিনি মনে করেন, যারা রাস্তায় নেমে এই বিরোধিতা করছেন, তাদের মধ্যে একটা সমস্যাও আছে৷ কারণ, তাদের একটি অংশ দ্বিচারিতা করছে৷ তারাও সাম্প্রদায়িক এবং উগ্রবাদী৷ কিন্তু অসাম্প্রদায়িক চেতনা যারা ধারণ করেন, তারাও মোদীর এই সফরের বিরোধিতা করছেন৷

শহীদ বুদ্ধিজীবীর সন্তান জাহিদ রেজা নূরের চিন্তা একটু ভিন্ন৷ তিনি মনে করেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বন্ধু ছিল ভারত ও রাশিয়া৷ স্বাধীনতার ৫০ বছরে কোনো দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হলে সবার আগে এই দুই দেশের কথাই তো ভাবা হবে৷’’

‘‘আমরা জানি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একজন কট্টর হিন্দুত্ববাদের প্রতীক৷ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী, এখন নরেন্দ্র মোদী৷ এখন সেখানে কোন ধরনের শাসন চলছে সেটা বিবেচনার বিষয় হতে পারে না৷ এটা হলো একটি রাষ্ট্রকে সম্মান জানানো৷ আমাদের ভালোবাসার প্রকাশ,’’ বলেন  তিনি৷

তার মতে, ‘‘জিয়াউর রহমানের সময় থেকে ভাবনা শুরু হয়ে মুসলমানিত্বের পরাজয় হয়েছে৷ এখন অসাম্প্রদায়িকতা নিয়ে হাসাহাসি করা হয়, গণতন্ত্র নিয়ে হাসাহাসি করা হয়৷ বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনা নষ্ট হয়ে গেছে ষড়যন্ত্র এবং ব্যর্থতায় শুরুতে গণতন্ত্রের বীজ ঠিকমতো বুনতে না পারায়৷’’

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে একটি পরিবর্তন হচ্ছে৷ কট্টর রক্ষণশীলতা প্রবল হচ্ছে৷ আমাদের সংস্কৃতি কাটছাট হচ্ছে৷ যাত্রাপালার জায়গায় ওয়াজ ঢুকে গেছে৷ যে ওয়াজের ৭০ ভাগ হলো নারী দেহের বর্ণনা এবং মিথ্যাচার৷ আপনি যদি স্বাধীনভাবে সত্যি কথা বলেন, আর সেটা যদি ধর্ম সংক্রান্ত হয়ে থাকে, তাহলে আপনাকে ধর্ম অবমাননায় ঢুকিয়ে দেয়া হবে৷’’ তার মতে, এই কট্টরপন্থিরাই এখন শক্তিশালী হচ্ছে৷ তাদের আবার সরকারি এবং বেসরকারি সব দিক থেকেই তৈল মর্দন করা হচ্ছে৷