‘স্বাধীনতা বিরোধীরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ক্ষতবিক্ষত করেছে’
১২ অক্টোবর ২০১১একাত্তরে যুদ্ধের সময় মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া ছিলেন দশম শ্রেণির ছাত্র৷ চট্টগ্রামের হাটহাজারির এই তরুণকে উদ্বুদ্ধ করেছিল বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, মুক্তি সংগ্রামের নানা স্লোগান আর স্থানীয় নেতাদের বক্তব্য৷ তাই, যুদ্ধের জন্য একটা মানসিক প্রস্তুতি আগে থেকেই নিয়ে রাখেন ইলিয়াস৷ একাত্তরের ২৫শে মার্চের কালো রাতের পরেই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নাম লেখান তিনি৷ ডয়চে ভেলেকে ইলিয়াস মিয়া বলেন, ‘‘একাত্তরে ১ নম্বর সেক্টর আওতায় হাটহাজারি, ফটিকছড়ি, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া এলাকায় যুদ্ধ করেছি৷ এছাড়া শহরেও মুক্তিযোদ্ধা পাঠাতে কাজ করতাম৷''
যুদ্ধ শুরুর কিছুদিন পর ভারতে চলে যান ইলিয়াস৷ সেখান থেকে হঠাৎ হঠাৎ বাংলাদেশের সীমানায় ঢুকে শত্রুপক্ষের উপর হামলা চালাতেন তিনি৷ কিছুদিন এভাবে যুদ্ধের পর, ভারত সরকার তাঁকে গেরিলা প্রশিক্ষণ প্রদান করে৷ জুলাইয়ে পাকাপোক্তভাবে দেশে ফেরেন তিনি৷ এই বিষয়ে ইলিয়াস বলেন যে, তিনি ভারতে দেড় মাস গেরিলা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন৷
পাকহানাদার বাহিনী এবং তাদের দোসর রাজাকার-আলবদরদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযানে সফলতা পান ইলিয়াস এবং তাঁর সঙ্গীরা৷ যুদ্ধের সময় শত্রুশিবিরে গ্রেনেড নিক্ষেপ থেকে শুরু করে সম্মুখ যুদ্ধ পর্যন্ত সবকিছুই করেছেন তিনি৷ একবার তাদের অভিযানে প্রাণ হারায় শত্রুপক্ষের ত্রিশ সদস্য৷
এভাবে ১৬ই ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হয়৷ গর্বিত মুক্তিসেনারা ফিরে যান স্ব স্ব অবস্থানে৷ ইলিয়াস ফেরেন বিদ্যালয়ে৷ উচ্চশিক্ষা শেষে জীবন, জীবিকার তাগিদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান ইলিয়াস৷ সেখান থেকে চলে যান ক্যানাডায়৷ প্রবাস জীবনে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি৷ গত দেড় বছর হলো দেশে ফিরে এসেছেন মো. ইলিয়াস মিয়া৷
বর্তমানে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সংসদ, চট্টগ্রামের সাংগঠনিক কমান্ডার তিনি৷ স্বাধীনতার চল্লিশ বছরে তাঁর অনুভূতি জানতে চাইলে ইলিয়াস বলেন, ‘‘স্বাধীন বাংলাদেশ স্থাপনে আমাদের যে লক্ষ্য ছিল, সেই লক্ষ্য পরিপূর্ণভাবে অর্জন করা হয়নি৷ স্বাধীন বাংলাদেশের চল্লিশ বছরের বত্রিশটি বছর রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল রাজাকার, আলবদর এবং স্বাধীনতা বিরোধী চক্র৷ এবং ক্ষমতায় গিয়ে তারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, এগুলোকে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলেছে''৷
প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ