হত্যাকারীদের ফাঁসি চান আয়শা
২৭ জুন ২০১৯ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপে আয়শা আক্তার বলেন, ‘‘মাত্র দু'মাস হয় আমাদের বিয়ে হয়েছে৷ বিয়ের আগে সন্ত্রাসী নয়ন আমাকে নানাভাবে উত্যক্ত করেছে৷ বিয়ের পর একইভাবে উত্যক্ত করলে আমার স্বামী তার প্রতিবাদ করে৷’’
বুধবারের দিনের ঘটনার বর্ণনায় আয়শা আক্তার জানান, ‘‘রিফাতকে নিয়ে বুধবার সকালে কলেজ থেকে বের হওয়ার পর নয়নসহ ১০-১২ জন রিফাতকে ঘেরাও করে৷ প্রথমে তারা রিফাতকে মারধর করে৷ পরে রামদা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে৷ আমি চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারিনি৷ আমার চিৎকারে কেউ সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসেনি৷’’
‘‘আমি আমার স্বামীর হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই,’’ বললেন আয়শা আক্তার৷
হত্যাকারীরা এলাকার সন্ত্রাসী হিসেব অভিহিত করেন আয়শা৷ তিনি বলেন, ‘‘তারা রাজনৈতিক ক্যাডার৷ তবে কোন দল করে তা আমি জানি না৷’’
নিহত রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘হত্যাকারীরা এলাকায় মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত৷ তাদের প্রভাবশালী লোকজন আশ্রয় দেয়৷ মাদকবিরোধী অভিযানে তারা বারবার গ্রেপ্তার হলেও কয়েকদিন পরই ছাড়া পায়৷ তাদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা থাকলেও পুলিশ তাদের ধরে না৷ আমি চাই, এবার যেন তারা গ্রেপ্তার হয়৷ আমার ছেলে হত্যার যেন বিচার হয়৷’’
মামলার অগ্রগতি নিয়ে জানতে কথা হয় বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেনের সঙ্গে৷ তিনি জানান, ‘‘১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে৷ একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ আমার পুরো টিম কাজ করছে৷ বাকি আসামিদের ধরার জন্য অভিযান চলছে৷ আসামিরা চিহ্নিত৷’’
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের ঠিক সামনে দিয়ে রিফাত ও আয়শা ওপর আক্রমণ করে দুর্বৃত্তরা৷ ১০-১২ জন সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্র রামদা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে রিফাতকে৷ হামলার সময় স্বামীকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন আয়শা৷ একপর্যায়ে, রিফাতকে রক্তাক্ত অবস্থায় মৃত ভেবে অস্ত্র উঁচিয়ে চলে যায় সন্ত্রাসীরা৷ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন৷
মোবাইল ফোনে এই হত্যাকাণ্ডের ধারণ করা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে৷ তাতে স্পষ্ট, সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে তাকে ঘেরাও করে কুপিয়ে হত্যা করে৷ তাকে রক্ষার জন্য তার স্ত্রী ছাড়া আর কেউ এগিয়ে যায়নি৷
এর আগে ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর এমন ঘটনা ঘটে৷ সেদিন বিরোধী দলের অবরোধ কর্মসূচির মধ্যে পুরান ঢাকার কাহাদুর শাহ পর্কের সামনে পথচারী বিশ্বজিৎ দাসকে নৃশংসভাবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা৷ পুলিশের সামনেই কুপিয়ে হত্যা করা হয় বিশ্বজিৎকে৷ আদালত ওই মামলায় ২১ আসামির মধ্যে আট জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন৷ তবে ২০১৭ সালে ছাত্রলীগের ছয় জনকে মৃত্যুদণ্ড থেকে রেহাই দেয় হাই কোর্ট৷