1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

স্বেচ্ছাচারের অসুখে আক্রান্ত গণতন্ত্র

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২ মে ২০১৯

নির্বাচনের মরসুমে পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্র নিয়ে তরজা তুঙ্গে৷ নানা ঘটনায় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিপন্নতা সামনে আসছে৷ শাসক ও বিরোধী পক্ষ গণতন্ত্র হত্যার দায়ে পরস্পরের দিকে আঙুল তুলছে৷ এ অবস্থার পরিবর্তন কি আদৌ সম্ভব?

https://p.dw.com/p/3HoZb
ছবি: DW/Payel Samanta

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিটি জনসভাতেই গণতন্ত্রকে রক্ষা করার আওয়াজ তুলছেন৷ এই রাজ্যে প্রচারে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তোপ দাগছেন, বলছেন, পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্রের মৃত্যু হয়েছে৷ কংগ্রেস ও বামপন্থিদের বক্তব্য, মোদী-মমতা উভয়ের হাতেই দেশ ও রাজ্যের গণতান্ত্রিক অধিকার বিপন্ন৷ এই তরজার মধ্যে নির্বাচনের বিভিন্ন পর্যায়ে এমন ঘটনা সামনে এসেছে, যা উদ্বেগজনক৷ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে আক্রান্ত হয়েছেন বিরোধী দলের প্রার্থীরা৷ ডায়মন্ড হারবারের সিপিএম প্রার্থী ফুয়াদ হালিম ও আসানসোলের সিপিএম প্রার্থী গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়, বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয় ও বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রের পরেশচন্দ্র দাস আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে৷ ২৯ এপ্রিল নির্বাচনের দিন আক্রান্ত হওয়া পরেশচন্দ্র ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখানে গণতন্ত্র বলে কিছু নেই৷ এখানে তৃণমূলতন্ত্র আছে৷ তাই প্রার্থীরা আক্রান্ত হন৷ বিজেপির উত্থান রুখতেই মারমুখী হয়ে উঠেছে তৃণমূল৷ আমাকে যে মেরেছে, তার নামে এফআইআর করেছি৷ অথচ তাকে গ্রেফতার করা হয়নি৷ গণতন্ত্রের এই উদাহরণ?’’ সিপিএমের গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ এখন গণতন্ত্রের মুখোশ পরে আছে৷ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও ধারণা ভেঙে চুরমার৷ পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দিতে দেওয়া হয়নি৷ লোকসভা ভোটেও একই সন্ত্রাস, কারচুপি চলছে৷ ভোটের আগের দিন হুমকি, ইভিএমে নজরদারি আর সবার্পেক্ষা শাসকদলের ভোট দেওয়ার আবেদন গণতন্ত্রের মৃত্যু ঘোষণা করেছে৷’’

পশ্চিমবঙ্গ এখন গণতন্ত্রের মুখোশ পরে আছে: গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়

এখানে গণতন্ত্র বলে কিছু নেই, এখানে তৃণমূলতন্ত্র আছে: পরেশচন্দ্র

নির্বাচনকালীন সহিংসতা

নির্বাচনের দিন হিংসায় মুর্শিদাবাদে মৃত্যু হয় কংগ্রেস কর্মী টিয়ারুল শেখের৷ বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় রাজনৈতিক কর্মীরা আহত হয়েছেন, কোথাও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে ঘরবাড়ি৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিশানায় ছিলেন বিরোধী দলের কর্মীরা৷ যেমন, হুগলির ধনিয়াখালির বিজেপি কর্মী জিতেন মানা৷ ডয়চে ভেলের ক্যামেরার সামনে আহত জিতেন বর্ণনা করেছেন, তিনি কীভাবে আক্রমণের শিকার হয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি বিজেপি করি বলে আমাকে মারধর করেছে তৃণমূল৷ মেরে আমার পা ভেঙে দিয়েছে, কিডনিতে সমস্যা দেখা দিয়েছিল৷ এমনকি আমার বৃদ্ধা মাকেও মারধর করেছে৷ গ্রামের অনেকের বাড়ি ভেঙে দিয়েছে তৃণমূলের লোকেরা৷’’ এর বিপরীতে সংখ্যায় কম হলেও শাসক দলের কর্মীদের উপর হামলার ঘটনাও ঘটছে৷ কিছুদিন আগেই নিহত হয়েছেন তৃণমূলের বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস৷ অর্থাৎ, সব পক্ষই কমবেশি হিংসার শিকার৷

আমি বিজেপি করি বলে আমাকে মারধর করেছে তৃণমূল: জিতেন মানা

১০০ শতাংশ ভোট!

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অপরিহার্য অঙ্গ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন৷ বিরোধীদের অভিযোগ, তৃণমূল কংগ্রেসের সন্ত্রাসে বহু ভোটার ভোটই দিতে পারেন না৷ ভয় দেখানো থেকে বুথ দখল করে ছাপ্পা ভোট– নানা কৌশল নেয় শাসক দল৷ চলতি নির্বাচনেই দেখা গিয়েছে, বীরভূমের রামপুরহাটের ১১৫ নম্বর বুথে ১০০ শতাংশ ভোট পড়েছে৷ ৮৮৪ জন ভোটারের সকলেই ভোট দিয়েছেন৷ বিজেপি ও সিপিএমের বক্তব্য– জাল ভোটের এটাই প্রকৃষ্ট উদাহরণ৷

ইভিএমের বোতামে আতর

এর থেকেও চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামে৷ অভিযোগ, ভোটকর্মীদের সঙ্গে যোগসাজশে বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্রে বিজেপির পদ্মফুল প্রতীকের বোতামে আতর লাগিয়ে রেখেছিল তৃণমূল কর্মীরা৷ ভোট দিয়ে ভোটার বুথ থেকে বেরোলেই আঙুল শুঁকছিল তারা৷ আঙুলে আতরের গন্ধ পেলেই রেগে আগুন হয়ে যাচ্ছিল তারা৷ এই ঘটনা সামনে আসার পরই অবশ্য কমিশনের প্রতিনিধিরা আতর মুছে দেন৷

মুখ্যমন্ত্রী বিরোধী কণ্ঠস্বর দমিয়ে দিতে হিংসাকে কাজে লাগাচ্ছেন: অম্বিকেশ মহাপাত্র

‘এখন আর নিগ্রহে রাখঢাক নেই’

বাম আমলেও নির্বাচন ঘিরে একই ধরনের অভিযোগ উঠত৷ রাজনৈতিক পালাবদলের পরও ছবি পাল্টায়নি৷ তবে সমাজকর্মী, অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রের দাবি, এখন বিরোধী পক্ষকে খোলাখুলি নিগ্রহ করা হচ্ছে, বাম আমলে কিছুটা রাখঢাক ছিল৷ প্রতিবাদে তাঁরা যে সংগঠন তৈরি করেছেন, তার নামই ‘আক্রান্ত আমরা’৷ অধ্যাপক অম্বিকেশ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বিরোধী কণ্ঠস্বর দমিয়ে দিতে হিংসাকে কাজে লাগাচ্ছেন৷ নির্বাচন এলে জনতার ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে৷ হিংসা সারা দেশেই রয়েছে, তবে পশ্চিমবঙ্গে তা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে৷’’

মোদীর উসকানি

এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে৷ একটি দলের টিকিটে নির্বাচিত হয়ে নির্দ্বিধায় অন্য দলে যোগ দিচ্ছেন নেতারা৷ তৃণমূল বিধায়ক অর্জুন সিং বা বাম বিধায়ক খগেন মুর্মু এবার বিজেপির টিকিটে লড়ছেন লোকসভা ভোটে৷ তৃণমূল সাংসদ সৌমিত্র খাঁ ও অনুপম হাজরা দল বদলে এবার বিজেপির প্রার্থী৷ বিভিন্ন দল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার এই প্রবণতাকে উসকে দিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী৷ তিনি পশ্চিমবঙ্গে একটি জনসভায় সম্প্রতি বলেছেন, তৃণমূলের ৪০ জন বিধায়ক তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন৷ এ বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করে তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী নিজে ঘোড়া কেনাবেচায় উৎসাহ জোগাচ্ছেন৷ নির্বাচন কমিশনে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে নালিশ জানিয়েছে তৃণমূল৷

পশ্চিমবঙ্গে বাম শাসনের অবসানের পর বাম ও কংগ্রেস থেকে একঝাঁক নেতা তৃণমূলে যোগ দেন৷ জনপ্রতিনিধিদের এই দলবদল গণতন্ত্রের পক্ষে কি ক্ষতিকর নয়? তৃণমূল নেতা নির্বেদ রায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দলবদলের বিষয়টা ব্যক্তিগত৷ এতে গণতন্ত্র ছোট বা বড় হয় না৷ তবে প্রধানমন্ত্রীর দিক থেকে প্রকাশ্যে দল পরিবর্তনের কথা বলা শোভন নয়৷ অতীতে কোনো প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের কথা বলেননি৷ এর ফলে গণতন্ত্রে আঘাত লাগে বলব না, ওই পদের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়৷’’ প্রার্থীদের আক্রান্ত হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘গণতন্ত্রে কারো উপর আক্রমণই কাঙ্খিত নয়৷ কিন্তু নেতাদেরও কথাবার্তায় একটু সংযম দেখাতে হবে৷ তাঁরা যে ভাষায় আক্রমণ করছেন, তার মুখে দাঁড়িয়েও নবীন কর্মীরা মাথা ঠান্ডা রাখবেন, এই আশা করতেই পারি, কিন্তু সবসময় কর্মীরা সংযত থাকবেন, এটা নিশ্চিত করা যায় না৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য