স্যালুট তামিম ইকবাল!
২৩ মে ২০২০ক্রীড়াবিদদের বন্ধু তামিম
করোনা সংকটে জাতীয় দলের অনেক ক্রিকেটারই অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন৷ বেতনের টাকা বিশেষ তহবিলে জমা দেয়া, ব্যাট, ব্রেসলেট বিক্রি করার মতো উদ্যোগের কারণে খবরের শিরোনামে এসেছেন অনেকেই৷ তামিম এটুকুতেই থেমে থাকেননি৷ নিজে ক্রীড়াবিদ৷ তাই ক্রীড়াবিদদের কথাও ভেবেছেন আলাদা করে৷ ক্রিকেটের, ফুটবলার, হকি খেলায়াড়, সাঁতারু, ভারোত্তোলক, জিমন্যাস্ট মিলিয়ে মোট ৯১ জন অসচ্ছল ক্রীড়াবিদের দিকে বাড়িয়েছেন আর্থিক সহযোগিতার হাত৷ যার যেমন প্রয়োজন 'উপহার' হিসেবে তাকে সেই পরিমাণ টাকা পাঠিয়েছেন৷ শুধু নিজের ক্যারিয়ার এবং আর দশ জনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালনের চিন্তায় নিজেকে আটকে তারিখে যেন ক্রীড়াবিদদের দুর্দিনের প্রকৃত বন্ধু হয়ে গেলেন তামিম৷
এন্টারটেইনার তামিম
ঘরবন্দি মানুষদের একটু আনন্দ দেয়ার কথা বলে ফেসবুক লাইভ শুরু করেছিলেন৷ প্রথম দিনের লাইভে ছিলেন মুশফিকুর রহিম৷ তারপর মাহমুদুল্লাহ, মাশরাফী বিন মর্তুজা, খালেদ মাহমুদ সুজন, হাবিবুল বাশার, নাঈমুর রহমান দুর্জয়, তাইজুল ইসলাম,, সৌম্য সরকার, রুবেল হোসেন, নাসির হোসেন... তালিকাটা বড় হতে থাকল আর ফেসবুক এবং ইউটিউবে বাড়তে থাকল উপস্থাপক তামিম ইকবালের অনুসারী৷ প্রতিদিন নতুন নতুন চমক, লাইভে আসা ক্রিকেটারদের অজানা তথ্যে ভরা এমন বিনোদন কে মিস করতে চায়, বলুন!
মাশরাফী আগেই বলতে পারেন কবে সেঞ্চুরি করবেন তামিম, তামিমের ব্যাট ছাড়া চলে না মাশরাফীর, স্মৃতিতে হাফপ্যান্ট পরা তামিম, সংসারের কথা ভেবে নাফিস ইকবালের বিদেশে সস্তা খাবার খাওয়া, সুজনকে ওয়াসিম আকরামের খুঁজে বেড়ানো, নারিকেল গাছের গোড়ায় রুবেলের নকল দাঁত, তামিমের মাথায় সৌম্যর বাউন্সারের আঘাত- বাংলাদেশের বাঁহাতি ওপেনার লকডাউনে ঘরে বসে বসে বিমর্ষ হতে থাকা মানুষদের একটু বিনোদন দিতে না চাইলে এসব তো জানাই হতো না কোনোদিন!
তো এমন মজা নিতে নিতে হঠাৎ নড়েচড়ে বসতে হলো সবাইকে৷ এবার লাইভে আসছেন সাউথ আফ্রিকার ফাফ দু প্লেসিস৷ এতদিন লাইভের খবর দেশের সংবাদমাধ্যমগুলো লুফে দিচ্ছিলো, এবার আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের শিরোনামেও ঠাঁই পেয়ে গেলেন সঞ্চালক তামিম ইকবাল৷
যেন পেশাদার ক্রীড়া সাংবাদিক
দুঃসময়ে মানুষের মুখে হাসি আনা খুব কঠিন৷এই কঠিন কাজটা করতে গিয়ে একজন পেশাদার ক্রিকেট সাংবাদিক যা যা স্বপ্ন দেখেন তার অনেক কিছুই করে ফেলছেন তামিম৷ লাইভে এমন সব তারকা ক্রিকেটারকে নিয়ে আসছেন যাদের সঙ্গে দুই মিনিট কথা বলতে পারলে যে কোনো সাংবাদিক ‘এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউ’ -এর আনন্দে ভাসতেন৷
কেউ হয়তো বলবেন খেলাধুলা যখন বন্ধ, ক্রীড়া প্রতিবেদকরা যখন ডেস্ক রিপোর্ট করতে বাধ্য, তখন ক্রিকেটারদের পরিবারে জন্ম নেয়া এবং ক্রিকেটার হিসেবে দীর্ঘ অভিজ্ঞতার সুবিধা কাজে লাগিয়ে তামিম এইটুকু করতেই পারেন৷
এমন কথা বললেই কি মেনে নেয়া যাবে?
এই সুবিধা তো অনেকেই নিতে পারতেন, নেননি কেন? তাছাড়া সুবিধা নিলেও অন্য কেউ এভাবে সবাইকে এমন আনন্দ দিতে পারতেন? যে কেউ বললেই দু প্লেসিস, রোহিত শর্মা কথা বলতে বসে পড়বেন? বিরাট কোহলি রাখবেন যে কোনো ক্রিকেটারের অনুরোধ?
আসলে তামিম ইকবাল প্রতি পর্বে নতুন উচ্চতায় তুলে নিচ্ছেন নিজেকে৷ তাই দেশের বাইরের ক্রিকেটাররাও আস্থা রাখছেন তার ওপর, বিনা পারিশ্রমিকে হাসিমুখে হাজির হচ্ছেন লাইভে৷ এত অল্প সময়ে দেশের বর্তমান এবং অতীতের এতজন তারকা ক্রিকেটার, সঙ্গে দু প্লেসিস, রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, ওয়াসিম আকরাম, কেন ইলিয়ামসনের একান্ত সাক্ষাৎকার কোনো টিভি চ্যানেলে প্রচারিত হলে টিআরপি কোন পর্যায়ে যেতো, ভাবা যায়! এসব একজন রিপোর্টারের কাজ হলে সাক্ষাৎকারগুলোর সংকলন এবং সাক্ষাৎকারের অভিজ্ঞতা নিয়ে বই চেয়ে তার পিছনে যে অনেক প্রকাশক ছুটতেন সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷
আদর্শ ক্রিকেট সংস্কৃতি বিনির্মাণে তামিম
ওয়ানডে অধিনায়ক হওয়ার পর করোনার কারণে একটা সিরিজও খেলার সুযোগ পাননি তামিম৷ তাতে মন্দের ভালোই হয়েছে বলতে হবে৷ ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে এই সুযোগে সমসাময়িক, সতীর্থ এবং সাবেক ক্রিকেটারদের সঙ্গে সম্পর্কটা ঝালিয়ে নিয়েছেন৷ মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ, সৌম্য, রুবেল, তাইজুল, লিটন, তাসকিনদের বুঝিয়েছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটে তারা কতটা গুরুত্বপূর্ণ৷ বড় ভাইয়ের বন্ধু ক্যাপ্টেন মাশরাফীকে দিয়েছেন প্রাণঢালা সম্মান৷ পূর্বসুরী মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, আকরাম খান, নাঈমুর রহমান দুর্জয়, খালেদ মাহমুদ সুজন, খালেদ মাসুদ পাইলটদের সঙ্গে কথা বলে তরুণ প্রজন্মকে জানিয়েছেন তারা ফুটবলের দাপটের সময়ে অনেক ত্যাগ স্বীকার করে অতি কষ্টে একটা পথ রচনা করেছিলেন বলেই আজ বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করছে বাংলাদেশের ক্রিকেট৷