সড়ক দুর্ঘটনায় ভারতসেরা পশ্চিমবঙ্গ
৬ ডিসেম্বর ২০১৯২০১৮ সালে সারা ভারতে ২২,৬৫৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে৷ তার মধ্যে ২০১৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে সড়কপথে গর্ত থাকার কারণে৷ ভারতীয় সংসদে দেশের পরিবহণ ও জাতীয় সড়ক মন্ত্রকের সদ্য পেশ করা এই তথ্য থেকে আরো জানা যাচ্ছে যে, প্রতি বছরই সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে৷ ২০১৬ সালে ১৫,৭৪৬ জন সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন, ২০১৭ সালে সেটা বেড়ে হয় ২০,৪৫৭ এবং পরের বছর আরো ২২০০ বেশি৷ জাতীয় এবং রাজ্য সরকারের তরফ থেকে প্রতি বছর ঢাকঢোল পিটিয়ে পথ-নিরাপত্তা সপ্তাহ পালন এবং প্রচারের পরও এই বেহাল ছবি৷ এবং তার যে রাজ্যওয়াড়ি হিসেব, সেখানে সবার ওপরে পশ্চিমবঙ্গ৷ ২০১৮ সালে এই রাজ্যে ২৬১৮ জন পথ দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন৷
কেন দুর্ঘটনায় এত মৃত্যু? নিয়মিত শহরে এবং শহরের বাইরে, হাইওয়েতে গাড়ি চালান তথ্য-প্রযুক্তি পেশাদার প্রিয়ঙ্কর মুখার্জি৷ গাড়ি নিয়ে তিনি প্রায়শই রাজ্যের বাইরে যান৷ তাঁর অভিজ্ঞতা বলছে, শহরের থেকে বেশি দুর্ঘটনা হয় হাইওয়েতে৷ শহরে দুর্ঘটনা হলেও প্রাণহানির হার কম থাকে৷ হাইওয়েতে প্রায় প্রতি ক্ষেত্রেই কেউ না কেউ মারা যান, বা মারাত্মকভাবে আহত হন৷ তার প্রধানতম কারণ, হাইওয়েতে উল্টো মুখে গাড়ি চালানোর প্রবণতা৷ একমুখী রাস্তায় যে ধরনের বেপরোয়া কাজ যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে৷ শহর থেকে দূরের রাস্তায় হঠাৎ রাস্তার ওপর গরু-ছাগল এসে পড়াটাও অনেকসময়ই দুর্ঘটনার কারণ হয় বলে প্রিয়ঙ্করের অভিজ্ঞতা৷ এছাড়া বিশেষ করে শীতকালে কুয়াশার মধ্যে ঠেলা, রিকশা, সাইকেলের মতো ধীরগতির যান হঠাৎ সামনে চলে এলেও বিপত্তি হয়৷ আর ‘‘কলকাতায় হোক বা পশ্চিমবঙ্গে, লেন ড্রাইভিং নেই৷ লেন কেউ মানে না,’’ বললেন প্রিয়ঙ্কর৷
শহর এলাকায় যে যানটি সবথেকে বেশি ট্রাফিক আইন ভাঙে বলে দুর্নাম, সেটি হলো ট্যাক্সি৷ বেপরোয়া ট্যাক্সিও কি দুর্ঘটনার কারণ হয় না? বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের বিমল গুহ যদিও বলছেন, রাস্তায় এত গাড়িই এত দুর্ঘটনার কারণ৷ তাঁরা প্রস্তাব দিয়েছিলেন, বড় শহরে ব্যক্তিগত গাড়ি চলতে দেওয়ার ক্ষেত্রে জোড়-বিজোড় নিয়ম চালু হোক, যে নিয়ম পরে রাজধানী দিল্লিতে চালু করে সুফল পাওয়া গেছে৷ কিন্তু কলকাতায় বা পশ্চিমবঙ্গে সেই পরামর্শে কান দেওয়া হয়নি৷ ‘‘সরকারেরও দোষ আছে!’’ বলছেন বিমলবাবু৷ ড্রাইভাররা যে নিয়ম মেনে চালাচ্ছেন না, সেটা মেনে নিয়েও তিনি সমালোচনা করেছেন পুলিশ-প্রশাসনের, যারা গাড়ির চালককে ‘কেস দিতে’ অথবা তার বদলে ঘুষ খেতেই ব্যস্ত থাকে! তবে সবার ওপরে রয়েছে আইনের পরোয়া না করার প্রবণতা৷ পশ্চিমবঙ্গে কেন দুর্ঘটনার হার বেড়েই চলেছে, এই প্রশ্নে বিমল গুহর জবাব, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে আমরা কেউ কাউকে মানি না!’’