হচ্ছে না তিস্তা, উচ্ছ্বাস ছিটমহলে
৫ জুন ২০১৫বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ‘‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার হবে ‘কানেক্টিভিটি'৷''
তাঁর মতে, ‘‘দক্ষিণ এশিয়াকে দারিদ্র্যমুক্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দর্শন অনুযায়ী বাংলাদেশ কানেক্টিভিটির ক্ষেত্রে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করবে৷'' পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথায়, ‘‘২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ লক্ষ্যেই কাজ করছে৷''
সংবাদ সম্মেলনে তিস্তা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘মোদীর এবারের সফরে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হচ্ছে না, তবে আলোচনা চলছে৷ এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া৷ এতে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই৷''
তিস্তা চুক্তি না হওয়ায়টা কূটনৈতিক ব্যর্থতা কিনা – এমন প্রশ্ন করা হলে এ এইচ মাহমুদ আলী বলেন, ‘‘আমরা তা মনে করি না৷ সীমান্ত চুক্তির অর্জিত সাফল্যকে খাটো করে দেখা উচিত হবে না৷'' তাঁর কথায়, ‘‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে৷''
আগামীকাল শনিবার নরেন্দ্র মোদী দু'দিনের সফরে ঢাকা আসছেন৷ আর শুক্রবার রাতেই আসছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি৷ তিনি চলেও যাবেন একদিন আগে৷ এ সফরে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত স্থল সীমান্ত চুক্তির অনুসমর্থন দলিল বিনিময় হবে৷
বাংলাদেশের পরারাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘মোদীর বাংলাদেশ সফরে বাণিজ্যকেও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে৷ বাণিজ্য চুক্তিতে নতুন কিছু উপাদান থাকছে৷ এছাড়া স্বাক্ষরিত হবে বেশ কয়েকটি সমঝোতা চুক্তিো৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘মানবপাচার বন্ধে ভারত-বাংলাদেশ একসঙ্গে কাজ করবে৷ এ জন্য একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলা হবে৷''
এদিকে নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশ সফর নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন৷ টুইটারে তিনি লেখেন, ‘‘আমি দৃঢ় আশাবাদী যে আমার বাংলাদেশ সফর আমাদের বন্ধন আরও মজবুত করবে এবং তাতে দুই দেশের জনগণই উপকৃত হবে৷'' সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও নিজের ঢাকা সফরের বিস্তারিত তুলে ধরেছেন মোদী৷
শনিবার ঢাকায় নামার পর বিমানবন্দর থেকে সরাসরি সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাবেন মোদী৷ সেখান থেকে তিনি যাবেন বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে৷ এরপর বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে৷ ঐ বৈঠকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও থাকবেন৷
সফরের দ্বিতীয়দিন, রবিবার, ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন ছাড়াও বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বক্তৃতা দেবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ পরে সন্ধ্যাতেই ঢাকা ছাড়বেন তিনি৷
বাংলাদেশ-ভারত স্থল সীমান্ত চুক্তি কার্যকরের সব বাধা কাটিয়ে ওঠার পর নরেন্দ্র মাদীর এই সফর৷ এক সময় বিরোধিতা থাকলেও বিজেপি সরকারের এই উদ্যোগে শেষে সমর্থন দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
চার বছর আগে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সফরসঙ্গীর তালিকা থেকে শেষ মুহূর্তে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী৷ তখন সব প্রস্তুতি থাকার পরও তাঁর আপত্তির কারণে আটকে যায় তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে দুই দেশের চুক্তি সই৷ আর এবারও অনেক নাটকের পর মমতা আলাদাভাবে মোদীর সফরসঙ্গি হলেও, তিস্তা বাদের শর্তেই ঢাকা আসছেন৷
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশ্লেষক ড. শান্তনু মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশ ও ভারেতর মধ্যে অনেক অমীমাংমিত ইস্যু আছে৷ তাই সব সমস্যার সমাধান যে একদিনে হয়ে যাবে, তা আশা করা বাস্তবসম্মত নয়৷''
তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক যে একটি ঐতিহাসিক বাঁক নিচ্ছে, তা স্পষ্ট৷ সীমান্ত চুক্তি ভারতীয় সংসদদে অনুমোদনের মাধ্যমে ছিটমহল বিনিময়ের যে সুযোগ এসেছে, তা অনেক বড় ঘটনা৷''
তাঁর কথায়, ‘‘এবার নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরের মাধ্যমে ছিটমহল বিনিময় বাস্তবে কার্যকর হবে৷ আমি আশা করবো এটার নীতি নির্ধারণে যাতে দেরি না হয় এবং ছিটমহলবাসীর যেন পূর্ণ নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা হয়৷ একই সঙ্গে তাঁদের স্বাধীনভাবে নাগরিকত্বের ব্যাপারে যেন সিদ্ধান্ত নিতে দেয়া হয়৷''
ড. শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘‘তিস্তার পানি নিয়ে এবার কিছু হচ্ছে না সত্য৷ তবে ভবিষ্যতে যেন তার ইঙ্গিত পাওয়া যায়৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘মোদীর এই সফরে উপ-মহাদেশের রাজনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে৷ স্পষ্ট হবে যে প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে লেগে থাকা নয়, সুসম্পর্কের মাধ্যমে পরস্পরের স্বার্থ উন্নয়নই আঞ্চলিক রাজনীতির নতুন দিক৷''
এদিকে চট্টগ্রামে নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরবিরোধী পোস্টার লাগানোর সময় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরিরের তিন কর্মীকে শুক্রবার গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷