1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হচ্ছে না তিস্তা, উচ্ছ্বাস ছিটমহলে

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা৫ জুন ২০১৫

নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফর জ্বরে এখন বাংলাদেশ৷ মোদীর নিজের উচ্ছ্বাসও অবশ্য কোনো অংশে কম না৷ টুইটার বার্তায় তিনি তাঁর এই উচ্ছ্বাসের কথা জানিয়েছেন৷ তবে এই পারস্পরিক উচ্ছ্বাসের মধ্যে কিছুটা হলেও পানি ঢেলেছে তিস্তা৷

https://p.dw.com/p/1FcHn
Kombobild Narendra Modi Mamta Banerjee
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar/K. Frayer

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ‘‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার হবে ‘কানেক্টিভিটি'৷''

তাঁর মতে, ‘‘দক্ষিণ এশিয়াকে দারিদ্র্যমুক্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দর্শন অনুযায়ী বাংলাদেশ কানেক্টিভিটির ক্ষেত্রে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করবে৷'' পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথায়, ‘‘২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ লক্ষ্যেই কাজ করছে৷''

সংবাদ সম্মেলনে তিস্তা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘মোদীর এবারের সফরে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হচ্ছে না, তবে আলোচনা চলছে৷ এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া৷ এতে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই৷''

তিস্তা চুক্তি না হওয়ায়টা কূটনৈতিক ব্যর্থতা কিনা – এমন প্রশ্ন করা হলে এ এইচ মাহমুদ আলী বলেন, ‘‘আমরা তা মনে করি না৷ সীমান্ত চুক্তির অর্জিত সাফল্যকে খাটো করে দেখা উচিত হবে না৷'' তাঁর কথায়, ‘‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে৷''

আগামীকাল শনিবার নরেন্দ্র মোদী দু'দিনের সফরে ঢাকা আসছেন৷ আর শুক্রবার রাতেই আসছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি৷ তিনি চলেও যাবেন একদিন আগে৷ এ সফরে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত স্থল সীমান্ত চুক্তির অনুসমর্থন দলিল বিনিময় হবে৷

Sheikh Hasina
‘দক্ষিণ এশিয়াকে দারিদ্র্যমুক্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দর্শন অগ্রগামী ভূমিকা পালন করবে’ছবি: Reuters

বাংলাদেশের পরারাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘মোদীর বাংলাদেশ সফরে বাণিজ্যকেও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে৷ বাণিজ্য চুক্তিতে নতুন কিছু উপাদান থাকছে৷ এছাড়া স্বাক্ষরিত হবে বেশ কয়েকটি সমঝোতা চুক্তিো৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘মানবপাচার বন্ধে ভারত-বাংলাদেশ একসঙ্গে কাজ করবে৷ এ জন্য একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলা হবে৷''

এদিকে নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশ সফর নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন৷ টুইটারে তিনি লেখেন, ‘‘আমি দৃঢ় আশাবাদী যে আমার বাংলাদেশ সফর আমাদের বন্ধন আরও মজবুত করবে এবং তাতে দুই দেশের জনগণই উপকৃত হবে৷'' সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও নিজের ঢাকা সফরের বিস্তারিত তুলে ধরেছেন মোদী৷

শনিবার ঢাকায় নামার পর বিমানবন্দর থেকে সরাসরি সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাবেন মোদী৷ সেখান থেকে তিনি যাবেন বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে৷ এরপর বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে৷ ঐ বৈঠকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও থাকবেন৷

সফরের দ্বিতীয়দিন, রবিবার, ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন ছাড়াও বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বক্তৃতা দেবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ পরে সন্ধ্যাতেই ঢাকা ছাড়বেন তিনি৷

বাংলাদেশ-ভারত স্থল সীমান্ত চুক্তি কার্যকরের সব বাধা কাটিয়ে ওঠার পর নরেন্দ্র মাদীর এই সফর৷ এক সময় বিরোধিতা থাকলেও বিজেপি সরকারের এই উদ্যোগে শেষে সমর্থন দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷

চার বছর আগে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সফরসঙ্গীর তালিকা থেকে শেষ মুহূর্তে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী৷ তখন সব প্রস্তুতি থাকার পরও তাঁর আপত্তির কারণে আটকে যায় তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে দুই দেশের চুক্তি সই৷ আর এবারও অনেক নাটকের পর মমতা আলাদাভাবে মোদীর সফরসঙ্গি হলেও, তিস্তা বাদের শর্তেই ঢাকা আসছেন৷

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশ্লেষক ড. শান্তনু মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশ ও ভারেতর মধ্যে অনেক অমীমাংমিত ইস্যু আছে৷ তাই সব সমস্যার সমাধান যে একদিনে হয়ে যাবে, তা আশা করা বাস্তবসম্মত নয়৷''

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক যে একটি ঐতিহাসিক বাঁক নিচ্ছে, তা স্পষ্ট৷ সীমান্ত চুক্তি ভারতীয় সংসদদে অনুমোদনের মাধ্যমে ছিটমহল বিনিময়ের যে সুযোগ এসেছে, তা অনেক বড় ঘটনা৷''

তাঁর কথায়, ‘‘এবার নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরের মাধ্যমে ছিটমহল বিনিময় বাস্তবে কার্যকর হবে৷ আমি আশা করবো এটার নীতি নির্ধারণে যাতে দেরি না হয় এবং ছিটমহলবাসীর যেন পূর্ণ নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা হয়৷ একই সঙ্গে তাঁদের স্বাধীনভাবে নাগরিকত্বের ব্যাপারে যেন সিদ্ধান্ত নিতে দেয়া হয়৷''

ড. শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘‘তিস্তার পানি নিয়ে এবার কিছু হচ্ছে না সত্য৷ তবে ভবিষ্যতে যেন তার ইঙ্গিত পাওয়া যায়৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘মোদীর এই সফরে উপ-মহাদেশের রাজনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে৷ স্পষ্ট হবে যে প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে লেগে থাকা নয়, সুসম্পর্কের মাধ্যমে পরস্পরের স্বার্থ উন্নয়নই আঞ্চলিক রাজনীতির নতুন দিক৷''

এদিকে চট্টগ্রামে নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরবিরোধী পোস্টার লাগানোর সময় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরিরের তিন কর্মীকে শুক্রবার গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য